৯ আগস্ট সিটি গ্রুপ–প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কার ২০২৪ অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষ্যে লিখেছেন ২০০৪ সালে প্রথম আসরে সেরা উদীয়মান হওয়া রাসেল মাহমুদ জিমি।

প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড় হিসেবে যখন নাম ডাকা হলো, বিশ্বাসই করতে পারিনি। সেটি ২০ বছর আগের কথা। আমার ক্যারিয়ার মাত্রই শুরু হয়েছে। পুরস্কার পাওয়ার কথা কল্পনাও করিনি। সেদিনের অনুভূতিটা আজও ভুলতে পারিনি। বিস্ময়ের সঙ্গে ভেতরে জন্ম নিল এক দায়বোধ, এই পুরস্কারের মর্যাদা আমাকে রাখতে হবে।

উদীয়মানের পুরস্কার পাওয়া মানে ভবিষ্যতে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। আয়োজকেরা যে ভুল করেননি, তা বুঝিয়ে দিতে হবে। প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কারে ২০১২ সালের রানারআপ হতে পেরেছিলাম। তার মানে বর্ষসেরা উদীয়মান হওয়ার পরের আট বছর ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে আবার পুরস্কারের মঞ্চে উঠেছি। সেদিন মনে হয়েছিল, আমি দায়িত্বটা পালন করতে পেরেছি। সেই ভাবনা আজও গর্বিত করে।

হকিতে আমিই প্রথম আলোর ক্রীড়া পুরস্কার পাওয়া একমাত্র খেলোয়াড়। একদিকে বিষয়টি অবাক করে, অন্যদিকে গর্বও হয়। কিন্তু আমি চাই, এখানে থেমে না থাকুক আমাদের হকি। আরও খেলোয়াড় আসুক, পুরস্কার পাক।  

প্রথম আলোর এই পুরস্কারকে আমি সব সময় উঁচু মর্যাদায় রাখি। অন্য পুরস্কারগুলো আলাদা আলাদা খেলার জন্য আলাদা করে দেওয়া। কিন্তু প্রথম আলোর পুরস্কার সব খেলাকে একসঙ্গে বিবেচনায় এনে অনেক যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে দেওয়া হয়। এ কারণেই এ পুরস্কারটি আমার কাছে বিশেষ সম্মানের।

* রাসেল মাহমুদ জিমি: প্রথম আলো ক্রীড়া পুরস্কারের প্রথম বর্ষসেরা উদীয়মান খেলোয়াড়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল র প রস ক র প

এছাড়াও পড়ুন:

গুলিতে নিহত ছেলের জামা-জুতা আগলে দিন কাটে নাছিমার

ছেলে সাদ আল আফনানের কথা উঠলেই নাছিমা আক্তারের চোখ পানিতে টলমল হয়ে উঠে। একমাত্র ছেলেটি নেই, তা যেন ভাবতে পারেন না তিনি। ঘরে থাকা ছেলের বই-খাতা, জামাকাপড়, জুতা সবকিছুই যত্নে সাজিয়ে রেখেছেন। এসব নিয়েই দিন কাটে তাঁর।

গত বছরের ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সাদ আল আফনান (১৯)। ওই দিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে পুরো লক্ষ্মীপুর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে নিহত হন ৪ শিক্ষার্থীসহ ১২ জন, আহত হন শতাধিক ব্যক্তি। টানা ছয় ঘণ্টা ধরে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করেন তৎকালীন সদর উপজেলার চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাহ উদ্দিনসহ তাঁর বাহিনী।

নিহত আফনান লক্ষ্মীপুর ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছিলেন। তাঁর বাড়ি লক্ষ্মীপুর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে। আফনান নিহত হওয়ার মাত্র দুই মাস আগেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় নাছিমার স্বামী সালেহ আহমেদের। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলেকে ঘিরেই ছিল নাছিমার জগৎ। তবে স্বামীর মৃত্যুশোক না কাটতেই হারাতে হয় ছেলেকেও।

ওর রুমটা আমি ঠিক আগের মতোই রাখি। ওর বইগুলো, ওর জামাটা, এমনকি ওর শেষ পরা স্যান্ডেলটাও। জানি, আমার ছেলেটা আর আসবে না, তবু মন মানে না, বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে।নাছিমা আক্তার, সাদ আল আফনানের মা

সম্প্রতি বাড়িতে গিয়ে কথা হয় নাছিমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি জানান, একাকী ঘরে ছেলের জামাকাপড়, বই খাতা নিয়ে বেশির ভাগ সময় কাটে তাঁর। ছেলের ব্যবহৃত জিনিসগুলো যত্নের সঙ্গে ঘরে সাজিয়ে রেখেছেন। ছেলে নেই, তা ভাবতে পারেন না তিনি। কাঁদতে কাঁদতে নাছিমা বলেন, ‘রাত হলে বুক ফেটে কান্না আসে। চোখে ঘুম আসে না। প্রতিদিন ঘুমের ওষুধ খেয়ে শুতে হয়। ছেলের ছবিটা বুকে নিয়ে রাত কাটে’।

নাছিমা আরও বলেন, ‘ওর রুমটা আমি ঠিক আগের মতোই রাখি। ওর বইগুলো, ওর জামাটা, এমনকি ওর শেষ পরা স্যান্ডেলটাও। জানি, আমার ছেলেটা আর আসবে না, তবু মন মানে না, বুকের ভেতরটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে।’

গত বছরের ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে গুলিতে নিহত অন্য তিন শিক্ষার্থী হলেন মো. ওসমান পাটোয়ারী, কাইছার হোসেন ও সাব্বির হোসেন। হত্যাকারীদের বিচার হবে সেই আশায় রয়েছেন তাঁদের স্বজনেরা।

নিহত মো. ওসমান পাটোয়ারীর ভাই ওমর ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছোট ভাইকে হারিয়ে আম্মু এখনো ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। আমাদের প্রত্যাশা হত্যাকারীদের বিচার হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচারের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি’।

নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা আমির হোসেন বলেন, সন্তানকে এক মুহূর্তের জন্য তিনি ভুলতে পারেননি। সন্তানের হত্যাকারীরাই কেবল নয়, এর নির্দেশদাতাসহ জড়িত সবার বিচার দাবি করেন তিনি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গত বছরের ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুর শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। শহরের তেহমনী এলাকা থেকে তোলা

সম্পর্কিত নিবন্ধ