আসন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীদের বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্ট সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন।

এদিকে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ১০ দিন পর এবং জাকসু নির্বাচনের মাত্র দুইদিন আগে ডোপ টেস্ট করার বিষয়কে প্রশাসনের অদূরদর্শীতা ও হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন প্রার্থীরা।

আরো পড়ুন:

ঢাকায় জব্দ মাদক ‘কিটামিন’, গন্তব্য ছিল ইতালি

জাবিতে গাঁজা সেবনকালে বহিরাগতসহ ৩ শিক্ষার্থী আটক

সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নেওয়া নির্বাচন কমিশনের সিন্ধান্ত অনুযায়ী, মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত জাকসু নির্বাচনের কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু হয়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের মনোনীত কর্তৃপক্ষের কাছে জাকসুর প্রার্থিতার তথ্য প্রদান করে প্রার্থীরা ডোপ টেস্টের নমুনা প্রদানের করে যাচ্ছেন। এর মধ্যে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে হল সংসদের প্রার্থীদের নমুনা সংগ্রহ কাজ। প্রার্থীদের ডোপ টেস্টের জন্য স্যাম্পল হিসেবে তাদের মূত্র নেওয়া হচ্ছে।

এদিকে, বাধ্যতামূলক ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্তকে প্রার্থীরা সাধুবাদ জানালেও নির্বাচনের মাত্র দুদিন আগে এ কার্যক্রম গ্রহণকে নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত বলে দাবি করছেন প্রার্থীরা।

জাকসু নির্বাচনের দুইদিন আগে ডোপ টেস্টকে প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্ত মন্তব্য করে নির্বাচনের জিএস পদপ্রার্থী আবু তৈহিদ মো.

সিয়াম বলেন, “চূড়ান্ত প্রার্থিতা ঘোষণার আগেই ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। ইতোমধ্যে ব্যালট পেপারে প্রার্থীদের নাম পিন করা হয়ে গেছে। ডোপ টেস্টে কারো পজিটিভ আসলে সেটা কিভাবে বাতিল হবে, তা আমরা জানি না। আমি মনে করি, এটা প্রশাসনের একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত।

নির্বাচনে নারী জিএস পদপ্রার্থী লামিয়া রহমান তৈশী বলেন, “দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামী বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) জাকসু হতে যাচ্ছে। নির্বাচনের ঠিক দুদিন আগে আজ ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আমি বলতে চাই, যেহেতু অনেক আগে থেকেই ডোপ টেস্ট নিয়ে কথা হচ্ছিল, তাহলে কেন দুইদিন আগে ডোপ টেস্টের কথা আমাদের জানানো হয়?”

তিনি বলেন, “ডোপ টেস্টে অনেক প্যানেল বা অনেকে অংশ নিচ্ছে না। তাহলে আমরা যারা করিয়েছি, তাদের সঙ্গে কিভাবে মানদণ্ড হবে? এই ফলাফল আসলে কতটা নিরপেক্ষ হবে সে জায়গায় আমি সন্দিহান। ডোপ টেস্টে কারো সঙ্গে যদি ষড়যন্ত্রমূলক আচরণ করা হয়, তাহলে প্রশাসন কি এটার দায় নিবে?”

ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেলের জিএস পদপ্রার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, “স্বল্প সময়ের নোটিশে ডোপ টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। হাতে সময় খুবই কম, নির্বাচনের আর দুইদিন বাকি। এটা নির্বাচন কমিশনের অদূরদর্শীতার নামান্তর। এমতাবস্থায় যদি কোনো প্রার্থীর নমুনা পরীক্ষার প্রতিবেদনে ভুল আসলে এই স্বল্প সময়ে যাচাই করার সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়।”

এ ব্যাপারে জাবি চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. শামসুর রহমান বলেন, “জাকসু নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে আমরা প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করছি। এখানে আমরা ডিকোডিং পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের প্রায় ৭৫০ প্রার্থীর তথ্য গ্রহণ করে নমুনা সংগ্রহ করেছি। আশা করছি, স্বচ্ছতার সঙ্গে আগামীকালের মধ্যে আমরা ফলাফল প্রকাশ করতে পারব।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ বলেন, “জাকসু নির্বাচনের‌ আচরণবিধিতে রয়েছে, কোনো প্রার্থী যদি মাদকাসক্ত হয় এবং তার বিরুদ্ধে কেউ যদি অভিযোগ করে, তখন ওই প্রার্থীর‌ ডোপ টেস্ট করা হবে। পরে টেস্টের ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।”

তিনি বলেন, “গত ১০-১২ দিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী, যে নিজেই একজন প্রার্থী, সে সব প্রার্থীর ডোপ টেস্টের দাবিতে অনশনে বসে। তখন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন ওই শিক্ষার্থীকে আশ্বাস দেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব অংশীজনের সঙ্গে কথা বলে তারা যদি এ বিষয়ে একমত হয়, তাহলে আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। পরবর্তীতে সবাই এই বিষয়ে একমত হওয়ায় ডোপ টেস্টের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।”

তিনি আরো বলেন, “আমরা অত্যন্ত আনন্দিত যে, প্রার্থীরা আসছে এবং তারা স্যাম্পল সরবরাহ করছে। এই প্রক্রিয়ায় স্যাম্পল সরবরাহের ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে ডিটেক্ট হয়ে যায়। এখানে আমরা একদম ব্লাইন্ডলি কাজ করছি। নমুনাগুলোকে কোডিং করা হচ্ছে।‌ রেজাল্ট প্রস্তুত হলে এখান থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো হবে। এরপর সেখানে ডিকোডেড হলে বোঝা যাবে কার রেজাল্ট কি এসেছে। আমরা আশা করছি রাত ১০টার মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে আমরা লিখিতভাবে জমা দিতে পারব।”

ঢাকা/আহসান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড প ট স ট কর ব শ বব দ য গ রহণ কর স গ রহ দ ন আগ

এছাড়াও পড়ুন:

রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন

অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।

এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।

আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।

অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’

ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’

অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’

এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।

আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফের রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার 
  • আমার স্বামীর উপরে কু-নজর পড়েছে: অঙ্কিতা
  • সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
  • ‘আমি থানার ওসি, আপনার মোবাইল হ্যাকড হয়েছে’
  • অস্ট্রেলীয় সাংবাদিকের প্রশ্নে কেন চটে গেলেন ট্রাম্প, আলবানিজের কাছে নালিশেরও হুমকি দিলেন
  • কালিয়াকৈরে এক মাসে ২০ ডাকাত গ্রেপ্তার 
  • বাঁশির সুরে বিরহের কষ্ট ভুলতে চান রিকশাচালক শফিকুল
  • রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
  • ট্রেন থেকে পড়ে ৮ দিন ধরে হাসপাতালে ছেলে, ফেসবুকে ছবি দেখে ছুটে এলেন মা
  • ভাড়া বাসায় একা থাকতেন বৃদ্ধা, তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার