ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন রহিমআফরোজ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়াজ রহিম। আলোচনার বিষয় ছিল ‘সততা ও নৈতিকতাই উদ্যোক্তাদের সফলতার মূলমন্ত্র’।

‘উদ্যোক্তা হতে গেলে কখনোই নিজেকে ছোট করে দেখা যাবে না, নিজের মধ্যে সব সময় আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে।’ তরুণদের উদ্দেশে পরামর্শমূলক কথাগুলো বলেন নিয়াজ রহিম। ধারণ করা পর্বটি প্রচারিত হয় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক নিয়াজ রহিমের কাছে জানতে চান, রহিমআফরোজ গ্রুপে তাঁর যোগদানের গল্প।

নিয়াজ রহিম বলেন, ‘রহিমআফরোজ গ্রুপে আমার যোগদান মূলত দুটি ধাপে। ১৯৮৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা শেষ করে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিই। এটি ছিল প্রথম ধাপ। আর গত বছর মার্চে দ্বিতীয় ধাপে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। ১৯৮৩ সালে আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিই। এর আগে রহিমআফরোজ গ্রুপ চলেছে বাবার একক নির্দেশনায়। বাবা চলে যাওয়ার পরেই আসে আমাদের পরিবারের বৃহত্তর অংশগ্রহণ। আমরা তিন ভাইসহ একজন খালাতো ভাই এবং আমার মামা এই ব্যবসার হাল ধরেন। আমরা পরিকল্পনা করি প্রতিষ্ঠানটিকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। এভাবেই নানা উত্থান-পতন পার করে রহিমআফরোজ গ্রুপের বয়স এখন ৭১ বছর। আমাদের পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্যরাও এখন এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে।’

নিয়াজ রহিম আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তবে পারিবারিক যে মূল্যবোধ শৈশব থেকেই আমাদের দেওয়া হয়েছে, আমরা এখনো সেটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি সব সময়।’

আপনারা সব সময় বলেন, মুনাফার আগে নীতি। মুনাফার আগে নীতিকে এগিয়ে রাখার এই আত্মবিশ্বাস কীভাবে এল?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘আমার বাবা সব সময় ব্যবসার সঙ্গে এর সামাজিক যে প্রভাব, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালে ব্ল্যাক মার্কেটের উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়। আমাদের পণ্যই আমাদের চেয়ে বেশি মুনাফায় বিক্রি হতে শুরু হয়। কিন্তু আমরা কখনো আমাদের নীতির সঙ্গে আপস করিনি। আর আমাদের নীতি এটিই, যে মুনাফা আমাদের না, সেটিতে আমরা হাত দিই না। অন্যরা কী করছে, সেটি নিয়েও আমরা চিন্তা করি না। আমরা আমাদের নীতিতেই বিশ্বাসী।’

সঞ্চালক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হক এরপর অন্য প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সৌরশক্তির ধারণাটি সবার প্রথম প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে আপনাদের?

এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘১৯৮৫ সালের দিকে আমরা যখন এই ধারণাটি নিয়ে আসি, তখন অনেক মানুষ সূর্য থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে তা ভাবতেই পারছিল না। এটি নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারেনি। আর সবার ঘরে বিদ্যুৎ না পৌঁছাতে পারলে কোনোভাবেই উন্নয়ন সম্ভব নয়—এ কথাটি চিন্তা করেই মূলত আমরা বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে আসি।’

সৌরশক্তির পাশাপাশি দেশের প্রথম সুপারশপ ‘আগোরা’ চালুর কারণ জানতে চাইলে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয়ে যায়, যা আমাদের ব্যবসার জন্য একটি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু আমাদের ব্যবসা ছিল ব্যাটারি নিয়ে, আর পাশেই ভারতের মতো একটি দেশ। এ কারণেই আমরা আগোরার মতো সুপারশপ চালুর উদ্যোগ নিই। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, তাই আমরা কাঁচাবাজারের দিকে ব্যবসা বাড়াই। “সবুজ সেতু” নামের একটি উদ্যোগ চালু করি। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা যেমন সহজেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারেন, তেমনি গ্রাহকেরাও সহজে কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।’

রহিমআফরোজ গ্রুপ ব্যবসার গণ্ডি ছাড়িয়ে অবদান রেখেছে ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনে’র মতো উদ্যোগেও। এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা শুরু করি সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট। জাকাতের জন্য সে সময় দেখতাম দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে লোকজন। কেউ তাঁদের ৫০ টাকা করে দিচ্ছে, কেউ ১০০ টাকা করে দিচ্ছে। এসব দেখেই মনে হতে শুরু করে, এটি তো জাকাতের উদ্দেশ্য হতে পারে না। তখন আমার পরিবারের লোকজন আর কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট শুরু করি।’

রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে একটি এনজিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং একটি গ্রাম সম্পর্কে জানায়। গ্রামটিতে শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্যসুরক্ষা নেই এবং লোকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে তাঁদের ছয় লাখ টাকা অনুদান দিই এবং দেখার চেষ্টা করি প্রকৃত অর্থেই তারা পরিবর্তন আনতে পারছে কি না। তিন বছর পর সেখানে গিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাই। এখন আমরা গর্ব করে বলতে পারি, ১৭ বছরে আমরা ১৭ লাখ মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম আরও বলেন, ‘রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন নামের আমাদের এই উদ্যোগটি পরিদর্শনে আগামী মাসে আফ্রিকা থেকে কয়েকজন পরিদর্শনে আসবেন এবং তাঁরা সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ চালুর পরিকল্পনা করছেন। এমনকি আমাদের এ উদ্যোগটি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। ২০১৫ সালে আমরা রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের জন্য ইসলামিক ইকোনমিক অ্যাওয়ার্ড পাই।’

এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, ‘আপনি সব সময় বলেন, সমালোচনা হলো সোনার উপহার। এর কারণ কী?’

এমন প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘যে আমাকে ভালোবাসে, সে-ই আমার সমালোচনা করে। সে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়। এতে আমি নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পাই। আগোরার কথাই ধরুন, এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে এবং আমাদের ওপর অনেক জরিমানাও হয়েছে। এগুলোকে আমরা বেশ সহজভাবে নিয়েছি এবং ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করে এসেছি।’

আড্ডার শেষে তরুণদের উদ্দেশে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আত্মবিশ্বাস খুবই জরুরি। যাঁরা এখন সফলভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁদের দিকে যদি তাকাই, তাহলেই দেখা যায়, কেউ আসলে খুব বেশি কিছু নিয়ে ব্যবসা শুরু করেননি। প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং পরে ধীরে ধীরে অনেকের অংশগ্রহণে ব্যবসা বড় হয়েছে। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, চেষ্টা এবং নৈতিকতা ঠিক রাখলে সফলতা আসবেই।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র ন র ব যবস ব যবস র প রসঙ গ সব সময় র জন য উদ য গ র পর ব প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

পারিবারিক ব্যবসাকে শীর্ষ কনগ্লোমারেটে পরিণত করার গল্প শোনালেন নিয়াজ রহিম

ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে প্রায়ই তরুণদের দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে ভুগতে। ফলে অনেক সময় যথেষ্ট মেধা, আগ্রহ ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও তাঁরা ক্যারিয়ারে ভালো করতে পারেন না। তরুণদের সঠিক দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা জোগাতে প্রথম আলো ডটকম ও প্রাইম ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পডকাস্ট শো: লিগ্যাসি উইথ এমআরএইচ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হকের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় পর্বে অতিথি হিসেবে অংশ নেন রহিমআফরোজ গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিয়াজ রহিম। আলোচনার বিষয় ছিল ‘সততা ও নৈতিকতাই উদ্যোক্তাদের সফলতার মূলমন্ত্র’।

‘উদ্যোক্তা হতে গেলে কখনোই নিজেকে ছোট করে দেখা যাবে না, নিজের মধ্যে সব সময় আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে।’ তরুণদের উদ্দেশে পরামর্শমূলক কথাগুলো বলেন নিয়াজ রহিম। ধারণ করা পর্বটি প্রচারিত হয় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টা ৩০ মিনিটে, প্রথম আলোর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে উপস্থাপক নিয়াজ রহিমের কাছে জানতে চান, রহিমআফরোজ গ্রুপে তাঁর যোগদানের গল্প।

নিয়াজ রহিম বলেন, ‘রহিমআফরোজ গ্রুপে আমার যোগদান মূলত দুটি ধাপে। ১৯৮৩ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর পড়াশোনা শেষ করে আমি এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিই। এটি ছিল প্রথম ধাপ। আর গত বছর মার্চে দ্বিতীয় ধাপে আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় গ্রুপ ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে। ১৯৮৩ সালে আমরা দ্বিতীয় প্রজন্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব নিই। এর আগে রহিমআফরোজ গ্রুপ চলেছে বাবার একক নির্দেশনায়। বাবা চলে যাওয়ার পরেই আসে আমাদের পরিবারের বৃহত্তর অংশগ্রহণ। আমরা তিন ভাইসহ একজন খালাতো ভাই এবং আমার মামা এই ব্যবসার হাল ধরেন। আমরা পরিকল্পনা করি প্রতিষ্ঠানটিকে কীভাবে এগিয়ে নেওয়া যায়। এভাবেই নানা উত্থান-পতন পার করে রহিমআফরোজ গ্রুপের বয়স এখন ৭১ বছর। আমাদের পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সদস্যরাও এখন এই প্রতিষ্ঠানে যোগ দিচ্ছে।’

নিয়াজ রহিম আরও বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। তবে পারিবারিক যে মূল্যবোধ শৈশব থেকেই আমাদের দেওয়া হয়েছে, আমরা এখনো সেটি ধরে রাখার চেষ্টা করছি। এমনকি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও তা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি সব সময়।’

আপনারা সব সময় বলেন, মুনাফার আগে নীতি। মুনাফার আগে নীতিকে এগিয়ে রাখার এই আত্মবিশ্বাস কীভাবে এল?

সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘আমার বাবা সব সময় ব্যবসার সঙ্গে এর সামাজিক যে প্রভাব, সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। ১৯৭১ সালে ব্ল্যাক মার্কেটের উপদ্রব অনেক বেড়ে যায়। আমাদের পণ্যই আমাদের চেয়ে বেশি মুনাফায় বিক্রি হতে শুরু হয়। কিন্তু আমরা কখনো আমাদের নীতির সঙ্গে আপস করিনি। আর আমাদের নীতি এটিই, যে মুনাফা আমাদের না, সেটিতে আমরা হাত দিই না। অন্যরা কী করছে, সেটি নিয়েও আমরা চিন্তা করি না। আমরা আমাদের নীতিতেই বিশ্বাসী।’

সঞ্চালক মোহাম্মদ রিদওয়ানুল হক এরপর অন্য প্রসঙ্গে জানতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে সৌরশক্তির ধারণাটি সবার প্রথম প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে কী কী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে আপনাদের?

এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘১৯৮৫ সালের দিকে আমরা যখন এই ধারণাটি নিয়ে আসি, তখন অনেক মানুষ সূর্য থেকে কীভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে তা ভাবতেই পারছিল না। এটি নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। তবে তখন পর্যন্ত ৭৫ শতাংশ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে পারেনি। আর সবার ঘরে বিদ্যুৎ না পৌঁছাতে পারলে কোনোভাবেই উন্নয়ন সম্ভব নয়—এ কথাটি চিন্তা করেই মূলত আমরা বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ নিয়ে আসি।’

সৌরশক্তির পাশাপাশি দেশের প্রথম সুপারশপ ‘আগোরা’ চালুর কারণ জানতে চাইলে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হয়ে যায়, যা আমাদের ব্যবসার জন্য একটি হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু আমাদের ব্যবসা ছিল ব্যাটারি নিয়ে, আর পাশেই ভারতের মতো একটি দেশ। এ কারণেই আমরা আগোরার মতো সুপারশপ চালুর উদ্যোগ নিই। যেহেতু বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, তাই আমরা কাঁচাবাজারের দিকে ব্যবসা বাড়াই। “সবুজ সেতু” নামের একটি উদ্যোগ চালু করি। এতে প্রান্তিক কৃষকেরা যেমন সহজেই গ্রাহকের কাছে পৌঁছাতে পারেন, তেমনি গ্রাহকেরাও সহজে কৃষকদের কাছে পৌঁছাতে পারেন।’

রহিমআফরোজ গ্রুপ ব্যবসার গণ্ডি ছাড়িয়ে অবদান রেখেছে ‘সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনে’র মতো উদ্যোগেও। এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা শুরু করি সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট। জাকাতের জন্য সে সময় দেখতাম দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে লোকজন। কেউ তাঁদের ৫০ টাকা করে দিচ্ছে, কেউ ১০০ টাকা করে দিচ্ছে। এসব দেখেই মনে হতে শুরু করে, এটি তো জাকাতের উদ্দেশ্য হতে পারে না। তখন আমার পরিবারের লোকজন আর কিছু বন্ধুবান্ধব মিলে সেন্টার ফর জাকাত ম্যানেজমেন্ট শুরু করি।’

রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন সম্পর্কে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘বেশ কয়েক বছর আগে একটি এনজিও আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং একটি গ্রাম সম্পর্কে জানায়। গ্রামটিতে শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্যসুরক্ষা নেই এবং লোকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। আমরা পরীক্ষামূলকভাবে তাঁদের ছয় লাখ টাকা অনুদান দিই এবং দেখার চেষ্টা করি প্রকৃত অর্থেই তারা পরিবর্তন আনতে পারছে কি না। তিন বছর পর সেখানে গিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন দেখতে পাই। এখন আমরা গর্ব করে বলতে পারি, ১৭ বছরে আমরা ১৭ লাখ মানুষের জীবনমান পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি।’

এ প্রসঙ্গে নিয়াজ রহিম আরও বলেন, ‘রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশন নামের আমাদের এই উদ্যোগটি পরিদর্শনে আগামী মাসে আফ্রিকা থেকে কয়েকজন পরিদর্শনে আসবেন এবং তাঁরা সেখানে এ ধরনের উদ্যোগ চালুর পরিকল্পনা করছেন। এমনকি আমাদের এ উদ্যোগটি বৈশ্বিকভাবে স্বীকৃত। ২০১৫ সালে আমরা রুরাল সার্ভিসেস ফাউন্ডেশনের জন্য ইসলামিক ইকোনমিক অ্যাওয়ার্ড পাই।’

এ পর্যায়ে সঞ্চালক বলেন, ‘আপনি সব সময় বলেন, সমালোচনা হলো সোনার উপহার। এর কারণ কী?’

এমন প্রশ্নের উত্তরে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘যে আমাকে ভালোবাসে, সে-ই আমার সমালোচনা করে। সে আমার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়। এতে আমি নিজেকে সংশোধনের সুযোগ পাই। আগোরার কথাই ধরুন, এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে এবং আমাদের ওপর অনেক জরিমানাও হয়েছে। এগুলোকে আমরা বেশ সহজভাবে নিয়েছি এবং ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করে এসেছি।’

আড্ডার শেষে তরুণদের উদ্দেশে নিয়াজ রহিম বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আত্মবিশ্বাস খুবই জরুরি। যাঁরা এখন সফলভাবে ব্যবসা করছেন, তাঁদের দিকে যদি তাকাই, তাহলেই দেখা যায়, কেউ আসলে খুব বেশি কিছু নিয়ে ব্যবসা শুরু করেননি। প্রথমে উদ্যোগ নিয়েছেন এবং পরে ধীরে ধীরে অনেকের অংশগ্রহণে ব্যবসা বড় হয়েছে। ধৈর্য, আত্মবিশ্বাস, চেষ্টা এবং নৈতিকতা ঠিক রাখলে সফলতা আসবেই।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ