ঢাকার ধামরাইয়ে লক ভেঙে কৌশলে চুরি করা দুটি মোটরসাইকেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গত ৩০ আগস্ট ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের জয়পুরা আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিং থেকে মোটরসাইকেল দুটি চুরির ঘটনা ঘটে।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর ধামরাই থানায় এ ঘটনায় একটি মামলা (নম্বর- ১৮) করেন মো.

আনছের আলী নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি ধামরাইয়ের কুল্লা ইউনিয়নের লাড়ুয়াকুণ্ডু এলাকার বাসিন্দা।

গ্রেপ্তাররা হলেন- রাজবাড়ী জেলার পাংশা থানার জীবননগর এলাকার মো. ইমরান মিয়া (২৫), একই জেলার কালুখালী থানার কালীনগর এলাকার মো. বিপুল শেখ (৩০) ও পাংশা থানার শরীশা খালপাড়া এলাকার মো. জাহাঙ্গীর জাহান বনি (২৫) ও বাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার পাহাড়িয়াকান্দি এলাকার মো. আল আমিন। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র আইন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে। 

মামলার এজাহার ও পুলিশের বিবরণে জানা যায়, গত ৩০ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে ভুক্তভোগী তার ম্যাট কালো রংয়ের ১৫৫ সিসির প্রায় দুই লাখ টাকা মূল্যের একটি সুজুকি মোটরসাইকেল ও তার মামার ১৫৫ সিসির প্রায় ৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ইয়ামাহা জিকএক্সআর মোটরসাইকেল ধামরাইয়ের জয়পুরার আনোয়ার শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ে লক করে রেখে যান। 

সেদিনই রাত ১১টার দিকে সেখানে এসে তিনি প্রায় ৭ লাখ ৪৬ হাজার টাকা মূল্যের ওই দুই মোটরসাইকেল উধাও দেখেন। ভুক্তভোগীর ধারণা হয়, কৌশলে তাদের মোটরসাইকেল দুটি চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় তিনি ধামরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। 

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ধামরাই থানা পুলিশের উপপরিদর্শক-এসআই মো. কাউসার সুলতান মোটরসাইকেল উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারে অভিযানে নামেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথমে আসামি ইমরানের কাছ থেকে একটি ও পরে কুষ্টিয়ায় আসামি বনি ও বিপুলের হেফাজত থেকে অপর মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। 

এসময় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। পরে গত ১৫ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর তাদের রিমান্ড শেষে আজ ১৭ সেপ্টেম্বর তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

তাদের দেওয়া তথ্যে গতকাল রাতে অপর আসামি ইমরানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে আগামীকাল আদালতে পাঠানো হবে।

ধামরাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কাউসার সুলতান বলেন, “চুরির ঘটনায় অভিযোগ পেয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এক পর্যায়ে রাজবাড়ী জেলায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে একটি মোটরসাইকেল ও পরে কুষ্টিয়া জেলায় অভিযান চালিয়ে অপর মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। এসময় তিনজন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যে আরও একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়।”

তিনি বলেন, “চুরিসহ যে কোনো ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশ তৎপর রয়েছে। এ ধরনের আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা/সাব্বির/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর স প ট ম বর এল ক র ম ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ