চট্টগ্রামে হামলার বিচারের দাবিতে এবার এক পক্ষের মানববন্ধন
Published: 12th, January 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদ ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাসেল আহমেদকে অবরুদ্ধ এবং হামলার বিচারের দাবিতে এবার মানববন্ধন হয়েছে। আজ রোববার বেলা তিনটার দিকে নগরের প্রেসক্লাব চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম’-এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা মোহাম্মদ রাসেল আহমেদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত। এতে বক্তারা বলেন, গত শনিবার সন্ধ্যায় আবদুল হান্নান মাসউদ ও মোহাম্মদ রাসেল আহমেদকে অবরুদ্ধ করা হয়। হামলা চালানো হয়। এতে সাতজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনার বিচার হতে হবে।
সমন্বয়ক জোবায়ের আলম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ডট গ্যাং’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের নেতা-কর্মীদের এনে হামলা চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করতে হবে।
এর আগে গত শনিবার রাতে সংবাদ সম্মেলন করে হামলার অভিযোগ করেন মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ। নগরের প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মোহাম্মদ রাসেল বলেন, ‘গত শনিবার বিকেলে জুলাইয়ের ঘোষণাপত্রের পক্ষে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। পরে ওয়াসায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অফিসকক্ষে আলোচনার জন্য তাঁরা বসেছিলেন। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমন্বয়ক রিজাউর রহমান এসে মুখ্য সংগঠক আবদুল হান্নান মাসউদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। রিজাউর রহমানের সঙ্গে ডট গ্যাংয়ের নেতা সাদিক আরমানসহ অনেকেই ছিলেন। একপর্যায়ে খান তালাত মাহমুদ, রিজাউর ও সাদিক আরমানের নেতৃত্বে আমাদের অবরুদ্ধ করা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর করেন। এতে সাতজন আহত হয়েছেন।’
তবে রাসেলের বক্তব্যের বিষয়ে খান তালাত মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলোচনা করার সময় আমাদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে। এর বাইরে কিছু হয়নি। কাউকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়নি। সবই মিথ্যা। পরবর্তী সময়ে আমরা কী করব, তা নিয়ে আলোচনার সময় সামান্য বাগ্বিতণ্ডা হয়।’
তবে রিজাউর হামলার পাল্টা অভিযোগ করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাউকে অবরুদ্ধ করা হয়নি। উল্টো আমাদের চারজনকে মারধর করা হয়েছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) দ্রুত তফসিল ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা ‘হয় মোদের চাকসু দে, নইলে গদি ছাইড়া দে’, ‘ডাকসু হলো, রাকসু হলো, চাকসু কেন থেমে গেল’, ‘চাকসু মোদের অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’—এমন স্লোগান দেন।
আরো পড়ুন:
আনাতোলিয়ান রোভার চ্যালেঞ্জে বিশ্বে তৃতীয় ইউআইইউ
জবির প্রভাবশালী আওয়ামীপন্থি ‘ক্যাডার’ শিক্ষকরা যেখানে আছেন
আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন রিয়াদ বলেন, “জুলাই মাসে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলো আমাদের জানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষার্থীও সে সময় শহীদ হয়েছিলেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়েই সবার আগে চাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কথা ছিল, কিন্তু এখনও কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ ডাকসু, রাকসু, জাকসুর তফসিল ঘোষণা হয়েছে।”
তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা অনুমোদনের বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এরপর আগস্টের প্রথম সপ্তাহেই তফসিল ঘোষণার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। “যদি তা না হয়, তাহলে আমরা দুর্বার ছাত্রআন্দোলনের দিকে যাব,” বলেন তিনি।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ও নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী খান তালাত মাহমুদ রাফি বলেন, “দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এরইমধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। আমরা এতদিন রোডম্যাপ চেয়েছিলাম, এখন আর রোডম্যাপ নয়—তফসিল চাই।”
তিনি আরো বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সমস্যার একমাত্র সমাধান হচ্ছে সক্রিয় ছাত্র সংসদ। তাই আগামী আগস্টের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন চাই।”
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, “আগামী ১ আগস্ট সিন্ডিকেট সভায় চাকসুর নীতিমালা চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণা করবেন।”
চাকসু গঠনের ধারণা মূলত এসেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর আদলে। বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রসংসদ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়।
১৯৭০ সালে চাকসুর প্রথম কেবিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯০ সালের ৮ মে। এই নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল বিজয়ী হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আর কোনো চাকসু নির্বাচন হয়নি।
২০২৫ সালে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হওয়ায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাকসু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসুর মতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও চাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছেন।
ঢাকা/মিজানুর রহমান/ইভা