বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের অন্দরমহলে
Published: 13th, January 2025 GMT
কোভিড–পরবর্তী সময়ে বিশ্ব অর্থনীতি সংকটের মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশেও প্রবলভাবে আছড়ে পড়ে সেই সংকটের ঢেউ। কিন্তু আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো এ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর প্রধান কারণ বিগত সরকার যে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জয়গান গাইছিল, তার ভেতর ফাঁকি ছিল। লেখক বিরূপাক্ষ পাল এ বইয়ে দেখিয়েছেন, ঢাকঢোল পিটিয়ে উন্নয়ন–বন্দনার অন্তরালে থেকে কীভাবে একটা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ও তার মদদপুষ্ট একদল লুটেরা ব্যবসায়ী অর্থনৈতিক খুঁটিগুলো খেয়ে ফেলেছ, দেশকে দাঁড় করিয়েছে কঙ্কাল কাঠামোর ওপর। অর্থ খাতের লুণ্ঠন ও ব্যাংক খাতের দুর্নীতির কবলে পড়ে প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা দেশ। কয়েকটি মাফিয়া পরিবারের হাতে জিম্মি হয়ে পড়ে পুরো ব্যাংক খাত। এতে সহায়তা করে একশ্রেণির পুলিশ, গোয়েন্দা ও আমলারা। এ সুযোগে বাড়তে থাকে ঋণখেলাপি, গোপনে বিদেশে পাচার হতে থাকে বিপুল টাকা। রাজস্ব আয় কমে যায়। মেগা প্রকল্পের আড়ালে লুটপাট হয় বিপুল অর্থ। কিন্তু অর্থ খাতে এসব অনিয়ম ও অন্যায় যারা করেছে, তাদের শাস্তি হয়নি। তাই ঋণখেলাপি, মুদ্রা পাচারকারী আর কর ফাঁকিদাতাদের কবজায় পড়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটকে অনিবার্য হয়ে ওঠে।
অর্থনীতিতে দুই প্রধান সমস্যা—বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি। বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতি সব অর্থনীতিতে থাকে। তবে সহনীয় পর্যায়ে থাকলে সংকটের সৃষ্টি হয় না। কিন্তু মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা বিপর্যয় ডেকে আনে। দেশের অর্থনৈতিক কাঠামোগুলো আর ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই বেকারত্ব ও মূল্যস্ফীতিকে পাপ মনে করা হয় অর্থনীতিতে। কিন্তু এ দুই পাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি আওয়ামী লীগ সরকার। বারবার সর্তক করার পরও অর্থনীতিবিদদের পরামর্শকে পাত্তা দেয়নি। ‘সামান্য চাপ’ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছে সব সময়। ফলে সমাজে দেখা দেয় তীব্র বেকারত্ব।
যুবসমাজ পৌঁছায় হতাশার চরম সীমায়। অন্যদিকে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে জিনিসপত্র সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে জীবন চালাতে। সরকারের প্রতি ছাত্র ও সাধারণ মানুষের ক্ষোভ বাড়তে থাকে। এ পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ দেখি এই জুলাই–আগস্টে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জনগণ রাস্তায় নেমে আসে। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় আওয়ামী সরকারের। এ অভ্যুত্থানের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে অর্থনৈতিক সংকটকে দেখেছেন লেখক। পাশাপাশি তিনি দেখানোর চেষ্টা করেছেন, কীভাবে এ সংকট থেকে বের হয়ে আসা যায়। এ ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বল্প মেয়াদে মূল্যস্ফীতি দমন, নিরাপদ রিজার্ভ রক্ষণ, ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ নিশ্চিতকরণসহ নানা বিষয়ের প্রতি। বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিতর–বাহিরের নানা দিক, যেগুলো সাদাচোখে ধরা দেয় না, সেসব বিষয় বুঝতে সংকটকালের অর্থনীতি: সংস্কার ও উত্তরণ বইটি সহায়ক হবে।
সংকটকালের অর্থনীতি: সংস্কার ও উত্তরণ
বিরূপাক্ষ পাল
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা;
প্রকাশকাল: ডিসেম্বর ২০২৪;
প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: আনিসুজ্জামান সোহেল; ১২৮ পৃষ্ঠা;
দাম: ৩৭৫ টাকা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে: prothoma.
com এবং মানসম্মত বইয়ের দোকানে
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে: সলিমুল্লাহ খান
লেখক ও অধ্যাপক ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, আমাদের বুকে হাত দিয়ে স্বীকার করতে হবে, পুলিশের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পুলিশের যে পজিশনে থাকার কথা ছিল সে পজিশনে নেই। পুলিশ যেই আইনে চলে সেখানে পদে পদে সমস্যা আছে। এসব বিষের মাঝেমধ্যে আলোচনা করা উচিত এবং খোলাখুলি আলোচনা হওয়া উচিত।
বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজারবাগে পুলিশ সপ্তাহের বিশেষ আয়োজন ‘নাগরিক ভাবনায় জনতার পুলিশ: নিরাপত্তা ও আস্থার বন্ধন’ আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, পুলিশ শুধু রাষ্ট্রযন্ত্রের অংশ নয়, সমাজেরও অংশ। পুলিশের সঙ্গে জনতার বিভক্তির মূলে যেতে হবে, এটা হলো জনতার সঙ্গে রাষ্ট্রের বিভক্তি। আর এই সমস্যার সমাধান হলো গণতন্ত্র।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক আইজিপি আব্দুল কায়ুম বলেন, এত বড় একটা পরিবর্তন হয়ে গেল, একটা গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেল; ছাত্র-জনতা তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছে, তারা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চায়। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছিল স্বাধীনতার পর। কিন্তু সঠিকভাবে আমরা এগোতে পারিনি, আমরা ব্যর্থ হয়েছি। এই যে একটা সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেক স্বপ্ন, এই স্বপ্ন যেন ব্যর্থ না হয়। সে জন্য সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ থেকে ২৪ পর্যন্ত আমরা যা দেখলাম, তা কল্পনা করা যায় না। আগেও গণতন্ত্র ছিল না, কিন্তু আমরা সেবা দিতে পেরেছি। তবে গত ১৫ বছরের মতো আমরা দারোয়ানে পরিণত হইনি। গণতন্ত্র থাকলে যে সুবিধাটা হয়, সেটা হলো, পাঁচ বছর পর আপনাকে ভোটারদের কাছে যেতে হবে এবং মেন্ডেট নিতে হবে আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন না। ২০০৯ সালের নির্বাচন যে খুব নিখুঁত হয়েছে, তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারব না। তার পরবর্তী তিনটা নির্বাচনে যা হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। যখন একচ্ছত্র ক্ষমতা এসে যায় তখন প্রশাসন ভেঙে পড়ে। এটা ভয়, খুন-গুম ও সন্ত্রাস দ্বারা সম্ভব হয়েছে। এ সময়টাতে শুধু এক শ্রেণির পুলিশ কর্মকর্তা না সব সেক্টরের এক শ্রেণির কর্মকর্তা অতি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেছে।
তিনি বলেন, যা হওয়ার হয়েছে, আমাদের আবার নতুন করে মানুষের সেবা দিতে হবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কমিউনিটি পুলিশিং করতে হবে।
সাবেক আইজিপি মোহাম্মদ নুরুল হুদা পুলিশ সংস্কার কমিশনকে ব্যর্থ উল্লেখ করে বলেন, সংস্কার কমিশন পুলিশের বিষয়ে বলছে, অনেক বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার–যদি এই কথা বলা হয়, তাহলে এই সংস্কার কমিশনের কী দরকার। এই পুলিশ কমিশন ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন নিয়ে কিছু বলে না গণ্ডগোল কিন্তু ওইখানেও আছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা যদি না থাকে তাহলে পুলিশ কীভাবে কাজ করবে। যাদের সুবাদে আমরা আজ কথা বলতে পারছি, সেটা কতদিন বলতে পারবো সেটার কোনও গ্যারান্টি নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর যদি সদিচ্ছা না থাকে তাহলে সম্ভব না।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক কিন্তু ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার। এটা বদলানো পুলিশের হাতে নাই। পুলিশের অনেক অফিসাররা দুর্নীতিতে জড়িয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও ছিলেন– নিউ এইজের সম্পাদক নুরুল হুদা, এপেক্স কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির মঞ্জু, কর্ম কমিশনের সদস্য অধ্যাপক সায়মা চৌধুরী, নির্বাচন কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাহিত্যিক, খেলোয়াড়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ব্যক্তিরা।