বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান ফারুক ও সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন সিকদারকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। কেন্দ্রের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করায় তাদের এ নোটিশ দেওয়া হয়েছে। 

আজ সোমবার দুপরে দেওয়া নোটিশে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রূহুল কবির রিজভী নোটিশে সই করেছেন।

ফারুক ও জিয়া সিকদার শোকজ নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তারা জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। 

জানা গেছে, আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মহানগর বিএনপিতে বিরোধ তুঙ্গে। ৫ দিন ঢাকায় থাকার পর ফারুক ও জিয়া সিকদার শনিবার দুপুরে বরিশালে পৌঁছান। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে অনুসারীরা প্রায় সহস্র মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে ফারুক ও জিয়াকে সদর রোড দলীয় কার্যালয়ে নিয়ে যান। সেখানে দুই নেতা দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপগুলোকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন। 

শোকজ নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, দলীয় শৃঙ্খলা অমান্য করে আপনারা বরিশাল বিমানবন্দর থেকে মোটরসাইকেল বহর নিয়ে বিশাল শোভাযাত্রাসহ নগরে প্রবেশ করেছেন। আপনাদের এহেন কার্যকলাপ দলীয় শৃঙ্খলার চরম বরখেলাপ। আপনাদের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাব কেন্দ্রয় কার্যালয়ে দেবেন।

এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, দলে নির্দেশনা আছে শোডাউন করা যাবে না। বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব যেটা করেছেন তা সাধারণ মানুষ ভালভাবে নেয়নি। এজন্য বিএনপি তাদের শোকজ করেছে। 

তিনি আরও বলেন, বরিশাল নগর বিএনপির রাজনীতি প্রতিহিংসায় পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ নিজেরে পদবঞ্চিত দাবি করে লিফলেট বিতরণ করেছেন; এটাও দলের বিরোধিতা। অনেক বড় বড় নেতা মহানগর বিএনপিকে অস্থিতিশীল করতে কলকাঠি নাড়ছেন। দলীয় হাইকমান্ডের এ এসব কিছুই নজরে আছে।

উল্লেখ্য, বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুকে ২৫ নভেম্বর কেন্দ্রের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে মহানগরসহ বিভাগের ৮টি সাংগঠনিক কমিটির সম্মেলন করতে হবে। সম্ভাব্য কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ নিয়ে মহানগর বিএনপির ৩টি গ্রুপ আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে অবস্থানে নিয়েছে। এরই মধ্যে কয়েকটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেছে। 

কমিটির মধ্যে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিবের বিরোধী গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক আফরোজা খানম নাসরিন। কমিটি ও কমিটির বাইরে থাকা আরেকটি গ্রুপ বিগত কমিটির সদস্য সচিব মীর জাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একাট্টা হয়েছেন। ২০২১ সাল থেকে পদবঞ্চিতরা, যারা চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মজিবর রহমান সরোয়ারপন্থি হিসেবে পরিচিত তারাও সরব বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩