সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবি পূরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে টানা ৩৫ ঘণ্টা পর অনশন ভেঙেছেন তারা। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আগামীকাল বুধবার জবির ‘নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, ইউজিসি ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা ছাড়াও এর কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর, আবাসন সমস্যা নিরসন নিয়ে আলোচনা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নোটিশে জানানো হয়। নোটিশ হাতে পাওয়ার পরে গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে সচিবালয়ের সামনে অনশন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী একেএম রাকিব।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো– সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে হবে এবং দৃশ্যমানভাবে উপস্থাপন করতে হবে সবার সামনে। শিক্ষার্থীরা অনশনে থাকাবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। কয়েক মাস সময় নেওয়ার নাম করে কোনো দীর্ঘসূত্রতা বন্দোবস্ত চলবে না। পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড.

হাবিবুর রহমান হলে স্টিলভিত্তিক ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। যতদিন আবাসনের ব্যবস্থা না হয়, ততদিন নিশ্চিত করতে হবে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা।

এর আগে তিন দফা দাবি পূরণে গত রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে অনশন শুরু করেন জবি শিক্ষার্থীরা। অনশনে অসুস্থ হয়ে ১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বারবার অনশন ভাঙার অনুরোধ করলেও শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। গতকাল সকালে অনশনের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা 

করেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, শহীদ সাজিদ একাডেমিক ভবন (সাবেক বিবিএ ভবন), রফিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। শাটডাউন কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, দপ্তরে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। কোনো বিভাগে ক্লাস ও পরীক্ষা হয়নি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করে। একপর্যায়ে শিক্ষার্থীরা দুপুর দেড়টার মধ্যে মন্ত্রণালয় ও সেনা কর্মকর্তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে না বসলে সচিবালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দেন।

শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দুপুর ২টায় সেনাবাহিনীকে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তর নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি চিঠি ইস্যু করা হয়। চিঠিতে জানানো হয়, সেনাবাহিনীকে কাজ হস্তান্তর বিষয়ে বুধবার সচিবালয়ে সভা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ট্রেজারার মন্ত্রণালয়ের বার্তা শিক্ষার্থীদের জানান। কিন্তু অনশনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পাল্টা আরও তিনটি দাবি জানানো হয়। একপর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে জবি ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয় অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে সচিবালয়ের সামনে এসে পৌঁছান তারা। পরে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে মন্ত্রণালয় লিখিত অঙ্গীকার দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের জবি শাখার সভাপতি একেএম রাকিব। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগামী বুধবার যে মিটিং হবে, সেখানে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরে চুক্তি স্বাক্ষর হবে– এ মর্মে লিখিত অঙ্গীকার পেয়েছি। এ ছাড়া বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলে অস্থায়ী স্টিল বেজড ভবন নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে যাচাই ও আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তারা। যেহেতু তারা তিনটি দাবির দুটি মেনে নিয়েছেন এবং একটি যাচাই করে দেখবেন, সেহেতু আমরা অনশন প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। তবে বুধবারের মিটিংয়ের আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শাটডাউন থাকবে।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, ‘আমাদের সন্তানরা জীবন বাজি রেখে বিশ্ববিদ্যালয় ও আবাসনের জন্য অনশনে ছিল। আশা করছি, দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ ত্বরান্বিত হবে।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই আমাদের এই কার্যক্রম আরও সহজ ও ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের কাজ অনেকটা এগিয়ে গেছে। বুধবারের বৈঠকে প্রকল্পের অবস্থা বিশ্লেষণ করে একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সভায় আমরা বিবিধ খাতে শিক্ষার্থীদের দাবির অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় আজ শুক্রবার ইসরায়েল হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। এতে জ্বালানির তেলের জোগানে বিঘ্ন ঘটতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।

অপরিশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচারস ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ বা ৬ দশমিক ২৯ মার্কিন ডলার বেড়ে প্রতি ব্যারেলের দাম ৭৫ দশমিক ৬৫ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৮ দশমিক ৫০ ডলারে পৌঁছায়, যা গত ২৭ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ। এ ছাড়া মার্কিন ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুডের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬ দশমিক ৪৩ ডলার বা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৭৪ দশমিক ৪৭ ডলারে উঠেছে। একপর্যায়ে দাম ৭৭ দশমিক ৬২ ডলারে উঠেছিল, যা কিনা ২১ জানুয়ারির পর সর্বোচ্চ।

অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির মানে হচ্ছে দুনিয়াজুড়ে সুপারমার্কেটে খাবারের দাম, গাড়িতে তেল ভরার খরচ, পরিবহন ব্যয়—সবকিছুর দাম বাড়বে। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার বিষয়ে একজন ব্যবসায়ী রয়টার্সকে বলেন, ‘এখনই বলা কঠিন, তবে সম্ভবত হরমুজ প্রণালি বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় সবাই উদ্বিগ্ন।’

হরমুজ প্রণালি বিশ্বে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাহাজ চলাচলের পথ। বিশ্বের মোট জ্বালানির প্রায় ২০ শতাংশ এই পথ দিয়েই সরবরাহ হয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস উৎপাদক দেশগুলো এই পথ দিয়েই তাদের জ্বালানি বিশ্ববাজারে পাঠায়। উত্তরে ইরান, দক্ষিণে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ঘেরা হরমুজ প্রণালি উপসাগরীয় অঞ্চলকে আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এমএসটি মারকুইয়ের জ্যেষ্ঠ জ্বালানি বিশ্লেষক সল কাভোনিক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরান যদি আঞ্চলিক জ্বালানি তেল পরিকাঠামোতে পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। তিনি আরও জানান, চরম পরিস্থিতিতে ইরান অবকাঠামোতে হামলা বা হরমুজ প্রণালি দিয়ে জাহাজ চলাচলে বাধা দিলে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি ব্যারেল তেল সরবরাহ ব্যাহত করতে পারে।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলের প্রাণঘাতী হামলার কঠোর জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে তেহরান। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেন, ইসরায়েলকে এ হামলার জন্য কঠোর শাস্তি পেতে হবে।

এদিকে ইরানে ইসরায়েলের হামলা একতরফা পদক্ষেপ হিসেবে মন্তব্য করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেন, এতে ওয়াশিংটনের কোনো অংশগ্রহণ নেই। তবে তেহরানকে সতর্ক করে তিনি বলেন, তারা (তেহরান) যেন মার্কিন স্বার্থ বা ব্যক্তিদের লক্ষ্য না করে।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফিলিপ নভার জ্যেষ্ঠ বাজার বিশ্লেষক প্রিয়াঙ্কা সচদেবা বলেন, ইরান পাল্টা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এতে শুধু তেলের সরবরাহ বিঘ্ন ঘটাবে না, আশপাশের অন্যান্য তেল উৎপাদকদের দেশগুলোতেও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ, নিরাপত্তাকর্মী পলাতক
  • ডাকসু নির্বাচন কমিশন ও তফসিল ঘোষণা দাবিতে প্রশাসনকে ‘সালাম’
  • গাইবান্ধায় যাত্রীদের বিরোধ মেটাতে গিয়ে মারধরের শিকার স্টেশনমাস্টার
  • মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি না হওয়ায় রিকশাচালককে পিটিয়ে হত্যা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আটক
  • বিয়ের দাবিতে প্রেমিকের বাড়িতে অনশনে নারী
  • সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইপিজেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গণ–অনশন
  • জ্বালানির দাম বাড়ল ৯ শতাংশের বেশি
  • ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর তেলের দামে অস্থিরতা