জুলাই আন্দোলনে ছাত্রদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া শিক্ষকদের বহিষ্কারসহ নয় দফা দাবিতে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এছাড়া পুরকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান রিপনের রুমেও তালা দেন তারা।

বুধবার বেলা ১১টা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে নয় দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় তারা। 

এর আগে, বেলা ১২টার দিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে আসেন উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক। শিক্ষার্থীরা তার কাছে ৯ দফা দাবি উপস্থাপন করেন।

পরে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনা শেষে তিন সপ্তাহের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ‘এডমিন যদি ছাত্র চালায়, শিক্ষক কেন বেতন পায়?’, ‘আমার ভাইয়ের জীবন নাই, শিক্ষকের হুশ নাই’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, জবাব চাই জবাব চাই’, ‘দালালের ঠিকানা, রুয়েটে হবে না’, ‘ফ্যাসিস্টের কুলাঙ্গার, হুশিয়ার সাবধান’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।

শিক্ষার্থীদের নয় দফা দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পরবর্তী সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার খাতায় কোডিং সিস্টেম চালু করতে হবে; সেমিস্টারের রেজাল্ট ও গ্রেডশিট দ্রুত প্রকাশ করতে হবে ও খাতা রিভিউ করার সুযোগ দিতে হবে; রুয়েটের যেসব শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে গত ফ্যাসিস্ট আমলে বিভিন্ন অভিযোগ আছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নিতে হবে এবং ছাত্রলীগ নেতাদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে; শিক্ষকদের নিয়মিত ক্লাস পরিচালনা নিশ্চিত করতে হবে এবং শিক্ষকের ব্যস্ততা বা অনুপস্থিতির কারণে ক্লাস মিস গেলে সব শিক্ষার্থীকে ওইদিনের অ্যাটেনডেন্স দিতে হবে; প্রতি মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা সেশন আয়োজন করতে হবে এবং শিক্ষকদের নিয়ে প্রতি মাসে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সেমিনার করতে হবে।

তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- নগরীর হজোর মোড়ে শিক্ষার্থী মারধর ঘটনায় দ্রুত মামলার বাকি কার্যক্রম শুরু করতে হবে এবং রুয়েট ও তার আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে; ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অকৃতকার্য করার দায়ে গোলাম মোস্তাকিম ও সিভিল ফ্যাকাল্টির ডিন কামরুজ্জামান রিপনসহ অভিযুক্ত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে; শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকদের সদাচরণ করতে হবে এবং শিক্ষকদের কার্যক্রমের মূল্যায়ন ও জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকতে হবে; অনতিবিলম্বে গত আগস্টে দেওয়া ১২ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ বিষয়ে কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ফারহান উদ্দিন বলেন, “গত আগস্ট মাসে আমরা প্রশাসনের কাছে বেশকিছু দাবি তুলে ধরি। সেগুলোর মধ্য থেকে কিছু পূরণ হলেও আমাদের প্রধান দাবিগুলোর ব্যাপারে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এজন্য প্রশাসনকে সাতদিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছিল, দাবি মানা না হলে প্রশাসন ভবনে তালা দেওয়া হবে।”

তিনি বলেন, “আল্টিমেটাম অনুযায়ি আজ আমরা ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছি। আর কত আন্দোলন করতে হবে? আর কত ক্লাস বর্জন করতে হবে? এটা আমাদের শেষ আন্দোলন। অতিদ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিতে হবে।”

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেনে নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীরা যে দুজন শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে, সেটি আজকের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হবে।”

গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে নগরের পদ্মা আবাসিক এলাকার পাশে হজোর মোড়ে স্থানীয়দের হামলায় রুয়েটের অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থী আহত হন। এছাড়া ১০ জানুয়ারি রাতে নগরের একটি ছাত্রাবাস থেকে রুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (ইউআরপি) বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসানের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রুয়েটে গত দুই বছরে তিন শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে।

ঢাকা/মাহফুজ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক ষকদ র

এছাড়াও পড়ুন:

শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ

গাজীপুরে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও এক শিক্ষার্থীকে গুলি করার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দুপুরে কালিয়াকৈর উপজেলার ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম দাক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর ওপর গুলি করে দুর্বৃত্তরা। তার প্রতিবাদে পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।

কয়েকজন শিক্ষার্থী আরও জানান, স্বৈরাচার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে এবং আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মী ও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ জানান, গাজীপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা ও গুলি করার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেন।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত নয়টার দিকে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর শুরু হয়। তখন স্থানীয় মসজিদে মাইকে ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে’ ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। এরপর একদল লোক এসে বাড়িটি ঘিরে ফেলে এবং মারধর শুরু করে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ও আহত শিক্ষার্থীরা বলেন, ধানমন্ডিতে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনার পর তাঁরা গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করেন, কোথাও ভাঙচুর হলে তাঁদের যেন জানানো হয়। শুক্রবার রাতে তাঁদের কাছে খবর আসে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও লুটপাট হচ্ছে। এটি শোনার পর প্রতিহত করতে শিক্ষার্থীরা রওনা হন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, লুটপাট হচ্ছে। বাধা দিলে পেছন থেকে হুট করে অনেক মানুষ জড়ো হয়ে যান। মুখ বাঁধা কিছু লোক রামদা নিয়ে তাঁদের ওপর হামলা করেন। অন্য শিক্ষার্থীরা আসার আগে ওই ১৫ জনকে ছাদে নিয়ে বেধড়ক পেটান, কুপিয়ে জখম করেন। পরে অন্য শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে গেলে তাঁদের ওপরও হামলা হয়। পুলিশকে জানানো হলে দুই ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে।

হামলার পর আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়। পরে গুরুতর আহত সাতজনকে পাঠানো হয় ঢাকায়। আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে রাত তিনটার দিকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সারজিস আলম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে কালিয়াকৈরে বিক্ষোভ