সমকাল : আপনাদের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।

বনি তাসনিম : তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে জনগণের দোরগোড়ায় ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে অগ্রণী ব্যাংক ২০১৩ সালে দুয়ারের সঙ্গে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং পাইলট কার্যক্রম পরিচালনা করে দুটি এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে। পাইলট কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতিপত্র পেয়ে ২০১৬ সালের মে মাসে প্রথম ৩০টি এজেন্ট আউটলেট নিয়ে অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং নামে এজেন্ট ব্যাংকিং লাইভ কার্যক্রম শুরু করে। এটি দেশের অন্যতম সফল এবং প্রগতিশীল একটি উদ্যোগ। বর্তমানে বাংলাদেশের ৬১টি জেলায় অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিংয়ের মোট ৫৪০টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। দুয়ার ডিজিটাল ব্যাংকিং ফিচার, কড়া নজরদারি এবং এজেন্টদের আন্তরিকতায় প্রান্তিক অঞ্চলের গ্রাহকদের আস্থা অর্জন করেছে। প্রতিটি লেনদেন কোর ব্যাংকিং সিস্টেমের সঙ্গে রিয়েলটাইম ইন্টিগ্রেশন হওয়ায় গ্রাহক তাৎক্ষণিক মেসেজ ও অনলাইন রিসিট পাচ্ছে এবং আউটলেট ছাড়াও ব্যাংকের শাখা, এটিএম বুথ ও পিওএস মেশিন সব চ্যানেলেই একই অ্যাকাউন্ট দিয়ে লেনদেন করতে পারছে। বাংলায় অডিওবার্তার মাধ্যমে লেনদেনের অবস্থা সহজেই বোঝা যাচ্ছে। এ ছাড়া সরাসরি কোর ব্যাংকিং সিস্টেমে সংযুক্তির ফলে শাখার পুরোনো গ্রাহকও শাখার পাশাপাশি যে কোনো এজেন্ট আউটলেট থেকেও সমান নির্ভরযোগ্যতায় ব্যাংকের সব সেবা ও পণ্য গ্রহণ করতে পারছে। অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিং এমন একটি এজেন্ট ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম; যা ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সাশ্রয়ী, ঝুঁকিমুক্ত এবং সহজে প্রাপ্তিযোগ্য ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে। অগ্রণী ব্যাংকের প্রতিটি এজেন্ট আউটলেট নিকটবর্তী একটি লিঙ্কড শাখার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়, অনুমোদিত সব ব্যাংকিং সেবাই খুব সহজে নিরাপদে প্রান্তিক গ্রাহকের দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছে। ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং ডিভিশন প্রত্যক্ষভাবে এজেন্ট কার্যক্রম ও ব্যবসা তদারক করছে এবং বর্তমান অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের বিচক্ষণ দিকনির্দেশনায় ও নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নেতৃত্ব উত্তরোত্তর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরও ফলপ্রসূ করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

সমকাল : গ্রামের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে কতটা অবদান রাখছে এজেন্ট ব্যাংকিং?

বনি তাসনিম : এজেন্ট ব্যাংকিং দেশের গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার একটি কার্যকরী মাধ্যম। অগ্রণী দুয়ার ব্যাংকিংয়ের লক্ষ্য ছিল প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনা; যার ফলে ৯৩ শতাংশ অর্থাৎ ৪৯৭টি এজেন্ট আউটলেট গ্রামীণ ও ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন চর, দ্বীপ, হাওড়-বাঁওড় বা সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। সারাদেশে দুয়ারের এই শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা বেগবান করার পাশাপাশি স্মার্ট উদ্যোক্তাদের একটি নেটওয়ার্ক বা চ্যানেল তৈরি করতেও সক্ষম হয়েছে।
এই সেবার মাধ্যমে কৃষক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও অন্যান্য পেশাজীবী সঞ্চয়, ঋণ এবং রেমিট্যান্স সংগ্রহের সুযোগ পাচ্ছেন। এ পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে মোট ১০ লাখ নতুন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে এবং গ্রামীণ পর্যায়ে ১ হাজার ৭৪২ জন গ্রাহকের মাঝে ঋণ বিতরণ, ৭৫৬ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ, ৫ হাজার ৪৩৬ কোটি টাকার রেমিট্যান্স গ্রহণ এবং ৫ লাখ ২ হাজার ৯৯১ জন নারী গ্রাহকের নতুন হিসাব খোলা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৪ হাজার ৬৭টি মাসিক সঞ্চয়ী স্কিম এবং ২ লাখ ১৩ হাজার ৪১২টি ভাতাভোগী হিসাব খোলার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের সঞ্চয় ও অর্থনৈতিক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এই ধারাবাহিক সফলতার ফলেই অগ্রণী ব্যাংক কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনেও সেরা তালিকায় অবস্থান করছে। পাশাপাশি গ্রামের স্কুল ও কলেজে বিনামূল্যে দুয়ার স্কুল সফটওয়্যার সরবরাহের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের স্কুল ব্যাংকিংয়ে আগ্রহী করা হচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ ব্যাংকিং কার্যক্রমের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
দুয়ার ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এবং স্থানীয় ব্যবসায়িক কার্যক্রম প্রসারে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার জন গ্রাহক দুয়ারের আউটলেটগুলোতে ব্যাংকের সেবা গ্রহণ করছে। এটি গ্রামীণ জনগণের সময় ও অর্থ সাশ্রয় করার পাশাপাশি তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও অবদান রাখছে। 

সমকাল : এজেন্ট ব্যাংকিং নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকগুলোর থেকে আর কী করণীয় রয়েছে?

বনি তাসনিম : এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থার উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৩ সালে গাইডলাইন প্রণয়ন করে, যা ২০১৭ সালে পূর্ণরূপ লাভ করে। এই ব্যবস্থার সফল কার্যক্রমে বাংলাদেশ ব্যাংক শুরু থেকেই নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই গুরুত্বের ফলেই এজেন্ট ব্যাংকিং ইতোমধ্যে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এর কার্যকারিতা আরও বাড়াতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। এর একটি হচ্ছে দৈনিক লেনদেন সীমা বৃদ্ধি। প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে কম লেনদেন সীমা নির্ধারণ করা হলেও বর্তমানে গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রাহকদের লেনদেন চাহিদা বেড়েছে। তাই লেনদেন সীমা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। আরেকটি হচ্ছে, কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ তৈরি। প্রতারণা রোধে একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ প্রণয়ন প্রয়োজন; যা সব ব্যাংকের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এতে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত এজেন্ট অন্য ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধাগ্রস্ত হবে। গ্রাহক সচেতনতা বাড়ানো দরকার। গ্রাম ও বাজার এলাকাগুলোতে সচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয়ভাবে ক্যাম্পেইন, গণসমাবেশ বা উঠান বৈঠকের আয়োজন করলে গ্রাহকরা আরও সচেতন হবেন এবং সেবা গ্রহণে আস্থা বাড়বে।
ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ক্যাশ সরবরাহ প্রক্রিয়া আরও সহজ করা দরকার। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মোট ২১টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যেখানে অনেক বেসরকারি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেট থেকে লিঙ্কড শাখার মাঝে ক্ষেত্রবিশেষে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্ব হয়ে থাকে। তাই লিঙ্কড শাখা এবং এজেন্ট আউটলেটগুলোর মাঝে দূরত্ব কমাতে অন্য সব ব্যাংকের শাখা, উপশাখা এবং আউটলেটগুলোর সমন্বিত ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত। এতে ক্যাশ সরবরাহ সাশ্রয়ী ও নিরাপদ হবে। এ ছাড়া প্রতারণামূলক ঘটনাগুলোর রিয়েল টাইম তথ্য আপডেট করে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা প্রয়োজন, যা সব ব্যাংক ব্যবহার করতে পারবে। গ্রাহকদের সচেতন করতে স্থানীয় পর্যায়ে ক্যাম্পেইন, উঠান বৈঠক ও মার্কেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। এজেন্ট ব্যাংকিং গ্রামীণ অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তাই এই সেবার প্রসারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ব্যাংকগুলোর যৌথ প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি।

সমকাল : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ঋণ আদায়ের হার কেমন? আমানতের ক্ষেত্রে কেমন সাড়া মিলছে?

বনি তাসনিম : এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ঋণ আদায়ের হার বেশ সন্তোষজনক। কারণ এজেন্টরা তাদের স্থানীয় জনগণের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। গ্রাহকদের আস্থা এবং এজেন্টদের দক্ষতার ফলে ঋণ আদায়ে বিশেষ সমস্যা দেখা যায় না। ইতোমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৮০০ জন গ্রাহকের কাছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, যার উল্লেখযোগ্য অংশই হচ্ছে গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমানতের ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের সাড়া অত্যন্ত ইতিবাচক। অগ্রণী দুয়ার এজেন্ট ব্যাংকিং ৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি আমানত সংগ্রহ করেছে, যা গ্রাহকদের আস্থার প্রতিফলন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র হকদ র জনগণ র পর চ ল সব ব য গ রহণ ব যবস সমক ল

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে এক দিনে ৯ জনের করোনা শনাক্ত

চট্টগ্রামে নতুন করে ৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আজ রোববার চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ৯ দিনে ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হলো।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২৪ ঘণ্টার প্রতিবেদনে বলা হয়, চট্টগ্রামের বিভিন্ন রোগনির্ণয় কেন্দ্র ও হাসপাতালে ১৫০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া যায়। নগরের এপিক হেলথকেয়ারে ৪ জন, পার্কভিউ হাসপাতালে ২ জন, এভারকেয়ার হাসপাতালে ২ জন এবং মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে ১ জনের করোনা শনাক্ত হয়।

চট্টগ্রামে সরকারি হাসপাতাল, বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশার্স ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) আরটিপিসিআর পরীক্ষা শুরু করা যায়নি। তবে চমেকে আজ-কালের মধ্যে তা চালু হবে বলে জানান হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন।

এদিকে করোনা বিশেষায়িত চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে গতকাল পর্যন্ত তিনজন রোগী ভর্তি ছিলেন। নতুন করে আর কোনো রোগী ভর্তি হননি। ওই তিন রোগীর অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ হামিদুল্লাহ মেহেদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ