ইসরায়েলের কারাগারে আট মাস বন্দী থাকা মাহমুদ আবু ফউল মুক্তি পাওয়ার পর মায়ের গলা শুনতে পেয়েছেন। কিন্তু এই ফিলিস্তিনি তরুণ মায়ের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না।

মাহমুদের বয়স ২৮ বছর, বাড়ি গাজার উত্তরাঞ্চলে। গত বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছিল ইসরায়েলি বাহিনী। এরপর থেকে তিনি ইসরায়েলের বন্দিশালায় ছিলেন। কারারক্ষীরা তাঁকে এতটাই নির্যাতন ও নিষ্ঠুরভাবে মারধর করেছেন যে তিনি তাঁর দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন।

গাজায় যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে এ সপ্তাহে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

মাহমুদ ২০১৫ সালে ইসরায়েলের বোমা হামলায় পা হারান। আল–জাজিরাকে তিনি বলেন, বন্দী থাকার সময় তাঁকে অবিরাম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। রাখা হয় ইসরায়েলের কুখ্যাত সদে তেইমান কারাগারে। আরও অনেক বন্দী এ কারাগারে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা বলেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীন এ সপ্তাহে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। তাঁদের অনেকের শরীরে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।

মাহমুদ বলেছেন, তাঁকে ওই কারাগারে প্রচণ্ড নির্যাতন ও মারধর করা হতো। এমন একদিনের ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে মাহমুদ বলেন, কারারক্ষীরা সেদিন তাঁর মাথায় এত জোরে আঘাত করেন যে তিনি অচেতন হয়ে পড়েছিলেন।

এ ফিলিস্তিনি বলেন, ‘আমি বারবার আমাকে চিকিৎসা করাতে বলছিলাম। কিন্তু তাঁরা শুধু আমার চোখে একধরনের ড্রপ দিয়েছেন, যেটি কোনো কাজই করেনি। আমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছিল, ময়লা বের হচ্ছিল ও ব্যথা করছিল। কিন্তু তাঁরা গুরুত্ব দেননি।’

চিকিৎসা পেতে মাহমুদ অনশনের চেষ্টাও করেছিলেন। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তাঁর দাবি আমলেই নেয়নি।

অবশেষে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মাহমুদকে নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তিনি পরিবারের দেখা পেতে উৎকণ্ঠা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সেখানে তাঁর মা আসেন।

মাহমুদ বলেন, ‘তাঁর (মায়ের) গলা শুনেই আমি তাঁকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। আমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছিলাম না, তবে শুধু গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়াটাও আমার কাছে পুরো পৃথিবী পাওয়ার সমান।’

আমি বারবার আমাকে চিকিৎসা করাতে বলছিলাম। কিন্তু তারা শুধু আমার চোখে একধরনের ড্রপ দিয়েছে, যেটি কোনো কাজই করেনি। আমার চোখ দিয়ে ক্রমাগত পানি পড়ছিল, ময়লা বের হচ্ছিল ও ব্যথা করছিল, কিন্তু তারা গুরুত্ব দেয়নি। —মাহমুদ আবু ফউল, মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দী

মাহমুদ এখন গাজায় বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। এখনো তাঁর চোখের চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তিনি সাহায্য কামনা করেছেন।

ইসরায়েলি কারাগারে বন্দীদের পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের প্রমাণ ক্রমশ বাড়ছে। মাহমুদ যেসব নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দিয়েছেন সেগুলো ওইসব প্রমাণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ইসরায়েলের কারাগার থেকে এ সপ্তাহে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের অনেককে দুর্বল ও অসুস্থ মনে হয়েছে বা তাঁদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। একজনের ওজন তাঁর বন্দী হওয়ার আগের ওজনের অর্ধেক হয়ে গেছে।

প্যালেস্টিনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বন্দী থাকা ১০০ সাবেক ফিলিস্তিনি বন্দীর সাক্ষ্য নথিবদ্ধ করেছে। তারা দেখেছে, শুধু সদে তেইমানের মতো কুখ্যাত বন্দিশালাতেই নয়; বরং ইসরায়েলের সব কারাগারে পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়।

মাহমুদ এখন গাজায় বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে একটি তাঁবুতে বসবাস করছেন। এখনো তাঁর চোখের চিকিৎসা হয়নি। চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিয়ে যেতে তিনি সাহায্য কামনা করেছেন।

ফিলিস্তিনি বন্দীদের বিচারক, আইনজীবী অথবা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেওয়া হয় না। তাঁদের সব অধিকার থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।

ইসরায়েল অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনির মৃতদেহ ফিরিয়ে দিয়েছে, যাঁরা বন্দী থাকার সময় মারা গেছেন।

গাজার হাসপাতাল সূত্র আল–জাজিরাকে বলেছে, কয়েকটি মৃতদেহে নির্যাতনের চিহ্ন পাওয়া গেছে এবং এমন কিছু প্রমাণ পাওয়া গেছে যা দেখে মনে হচ্ছে খুব সম্ভবত তাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনমুক্তি পাওয়া ১৫৪ ফিলিস্তিনি বন্দীকে জোর করে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিচ্ছে ইসরায়েল১৩ অক্টোবর ২০২৫ইসরায়েলের কারাগার থেকে মুক্ত ফিলিস্তিনিদের বাসে করে নেওয়া হচ্ছে। এ সময় শত শত ফিলিস্তিনি তাঁদের স্বাগত জানান। ১৩ অক্টোবর ২০২৫, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের বাইরে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ক র গ র থ ক আম র চ খ

এছাড়াও পড়ুন:

সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর

ছবি: তারেক রহমানের ফেসবুক থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ