অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগে বাড়তি বরাদ্দ চায় পুলিশ
Published: 19th, January 2025 GMT
ঢাকার যানজট নিয়ন্ত্রণে চলতি মাসে সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ২০০ সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী জুন পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পাওয়া এই সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ভাতা বাবদ ব্যয় হবে প্রায় ২ কোটি ৩ লাখ টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ অর্থের সংস্থান চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের হেডকোয়ার্টার্স। এদিকে এসব সহায়ক ট্রাফিক পুলিশের জন্য প্রতি চার ঘণ্টার ভাতা ১১০ টাকা বাড়িয়ে ৫৬০ টাকা করার প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ ইন্টারসেকশনে যানজট ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার করতে ট্রাফিক বিভাগকে সহায়তায় নিয়োজিত ৬০০ সহায়ক পুলিশের সেবা গ্রহণে ব্যয়ের জন্য ইতোমধ্যে ৬ কোটি ৬১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। নিয়োজিত সহায়ক পুলিশের ভাতা প্রতিপালায় (চার ঘণ্টা করে) জনপ্রতি ৪৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৬০ টাকা করা হয়েছে। ভাতা বাড়ায় এ খাতে বাড়তি ১ কোটি ৬১ লাখ ৭০ হাজার টাকা বরাদ্দ প্রয়োজন হবে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম আরও জোরদার করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অবসরপ্রাপ্ত ও যানজট নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে অভিজ্ঞ অতিরিক্ত ২০০ সদস্য জানুয়ারি মাস হতে নিয়োজিত রয়েছেন। এসব সদস্যরাও একই হারে ভাতা পাবেন। সে হিসাবে এ ২০০ সহায়ক পুলিশের জন্য আগামী জুন পর্যন্ত ২ কোটি ২ লাখ ৭২ হাজার টাকা প্রয়োজন। সবমিলিয়ে চলতি অর্থবছরে এ খাতে বাড়তি প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা লাগবে।
এদিকে বেশকিছু শর্তে সম্প্রতি সহায়ক পুলিশের ভাতা বাড়িয়ে সাকুল্যে ৫৬০ টাকার করার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। শর্তগুলো হচ্ছে– সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ হিসেবে নিয়োজিতকরণ সম্পূর্ণ অস্থায়ী ভিত্তিতে হবে। শুধু জরুরি ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে এসব সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যই এ ভাতা পাবেন। সহায়ক পুলিশের জন্য এ ভাতা তাদের কর্মে নিয়োজনের তারিখ হতে কার্যকর হয়ে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
সম্মতিপত্রের শর্তে আরও বলা হয়, সহায়ক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের ব্যাংক একাউন্ট বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে ভাতা দিতে হবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিশ্চিত করবে। ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে যাবতীয় আর্থিক বিধি-বিধান যথাযথভাবে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। এ ব্যয়ে ভবিষ্যতে কোনো অনিয়ম দেখা দিলে বিল পরিশোধকারী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজধানীতে যানবাহন চলাচলে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। টানা বেশ কিছুদিন অনেক এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে যানজট নিরসনের পদক্ষেপের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার ৭০০ শিক্ষার্থীকে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়। এর মধ্যে ৬০০ জনকে সহায়ক পুলিশ হিসেবে খণ্ডকালীন নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সামরিক বাহিনী ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ২০০ সদস্যকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস