সমন্বয়কের বাড়ির দেয়ালে লেখা ‘মরার জন্য প্রস্তুত হ’
Published: 22nd, January 2025 GMT
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমন্বয়কের কাজ করা মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে শিহাবের বাড়ির দেয়ালে লাল রং দিয়ে ‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ লিখে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা হুমকি দিয়ে এমন লেখা লিখে যায়। এ ঘটনায় মঙ্গলবার ঈশ্বরগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী।
মোহাইমিনুল ইসলাম ঈশ্বরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আবদুল মোতালিবের ছেলে ও নাসিরাবাদ কলেজের সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণের পাশাপাশি ঈশ্বরগঞ্জ এলাকায় সমন্বয়ক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।
এদিকে, এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন মোহাইমিনুল ইসলাম। তিনি লিখেছেন, ‘‘ঠিক আছে আমিও মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত। আমাকে দমায় রাখতে পারবেন না। দেশের জন্য ও দেশের মানুষের জন্য জীবন দিতে আমি প্রস্তুত।’’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘‘৫ আগস্টের আগে ও পরে ঈশ্বরগঞ্জের কোনো আওয়ামী লীগ নেতার কোনো রকম ক্ষতি আমি করি নাই। আমার বাসার সামনে লিখে গেলেন ‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’। আরে ভাই আমি তো অনেক আগে থেকেই প্রস্তুত হয়ে আছি মরার জন্য। মানুষ মানেই মরণশীল। মরতে এক দিন হবেই, দেশের জন্য না হয় জীবন দিলাম।’’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাইমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এ সময় দেয়ালে কোনো লেখা ছিল না। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে আমার মা বাড়ির সামনের দেয়ালে লাল রং দিয়ে ‘সমন্বয়ক মরার জন্য প্রস্তুত হ’ লেখাটি দেখে ডাক-চিৎকার শুরু করেন। মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে এসে লেখাটি দেখতে পাই। অধিকাংশ সময় মা-বাবা ও বোন বাড়িতে একা থাকে। তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে আতঙ্কিত হচ্ছি। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।’’
ঈশ্বরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/মিলন/রাজীব
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক
রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।
শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।
শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।
তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।
গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।