কুতুবপুরের সন্ত্রাসী বিল্লাল বাহিনীর বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন
Published: 22nd, January 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের ০৫নং ওয়ার্ডের দেলপাড়া মৌজার আদর্শ নগর এলাকায় এক নারীর জমি দখল ও তাকে হত্যার চেষ্টাকরার অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (২২ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন হাজেরা আক্তার মুক্তা নামে ভুক্তভোগী ঐ নারী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নিজের ক্রয়কৃত জমিতেবাড়ি নির্মাণ করে ও কিছু জায়গা খালি রেখে বসবাস করে আসছি। তার পাশেই ৩.
মামলা তুলে না নেয়ায় তারা আবার আমাদের উপর হামলা করে। আমাকে ও আমার মেয়েকে মেরে রক্তাত্ব জখম করে ও আমার মেয়ের ২টি দাত ভেঙ্গে ফেলে এবং ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র লুট করে নিয়ে যায়। এ বিষয়ে এসপি সাহেবের নির্দেশে ফতুল্লাথানায় আরও একটি মামলা দায়ের করি, যার নং ৬৯(৮)২১। পরবর্তীতে, আমার দায়ের করা ৪৩৭/১৮মামলায় বিল্লাল হোসেন মিয়াজী ও উজ্জ্বলের ১ বছর সশ্রম কারাদন্ডের রায় দেয় মহামান্য আদালত। আদালত থেকে জামিন নিয়ে তারা আমার মেয়েকে একা পেয়ে ব্যাপক মারধর করে, আমাকে খুন করারজন্য আমার মাথায় ২টি কোপ দেয় এবং আমার মুখ থেতলে দেয়। আমার মেয়ের মাথায় একটি কোপদেয়, হাত দিয়ে সেই কোপ ঠেকালে তার হাতে আঘাত লাগে। আমরা মা ও মেয়ে মারাত্মক রক্তাত্বজখম হই। আমার মাথায় ১৮টি সেলাই পড়ে।
দীর্ঘদিন চিকিৎসার পর বাসায় আসলে তারা আবারআমাদের উপর হামলা করে এবং আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দেয়। এই মিথ্যা মামলায় আমাকে২৫ দিন কারাগারে থাকতে হয়। এই সুযোগে তারা আমার বাড়ির সামনের গেট, দেয়াল, সিসিক্যামেরা ভাংচুর করে এবং ইট ও রড নিয়ে যায়। মামলা তুলে নিতে অপরাধীরা এখনো বিভিন্নসন্ত্রাসী দিয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। মামলা করেও সন্ত্রাসী বিল্লাল ও তার সহযোগীদের হাতথেকে রক্ষা পাচ্ছি না। মিথ্যা মামলায় হয়রানী করাসহ গুম-খুন করার ষড়যন্ত্র করছে। পরিবারনিয়ে আমি খুবই কষ্টে এবং আতঙ্কে জীবনযাপন করছি। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে বাঁচতেচাই। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনে অন্তবর্তীকারীণ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা,বাংলাদেশ পুলিশের আইজিপি, প্রধান বিচারপতি, জেলা জজ নারায়ণগঞ্জ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশসুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।