পঞ্চগড়ে আদালতের জনবল নিয়োগে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে জেলা ও দায়রা জজসহ চার বিচারকের অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা চার বিচারকের অপসারণে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

বুধবার বিকেলে পঞ্চগড় আদালতের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা জাতীয় মহাসড়কে এই বিক্ষোভ করে।

বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা শহরের প্রধান সড়ক ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘুরে একই স্থানে গিয়ে শেষ করেন। এরপর সেখানে পথ-সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পঞ্চগড়ের সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি, সহ-সমন্বয়ক মাহফুজুর রহমান, মনিরুজ্জামান ফয়সাল ও মোজাহার ইসলাম সেলিমসহ ছাত্রনেতারা বক্তব্য দেন।

পথ-সভায় বক্তারা বলেন, পঞ্চগড় আদালতের জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুক, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মন্ডল ও বিচারক আশরাফুজ্জামান ও আবু হেনা এখনো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন। আদালতের জনবল নিয়োগে মেধার মূল্যায়ন না করে বাণিজ্য করেছেন। ছাত্র-জনতা ও পরীক্ষার্থীরা নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদসহ বিক্ষোভ করলে নিয়োগ স্থগিত করা হয়। তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু সেই তদন্তের কোনো অগ্রগতির খবর নেই। তারা এখনো বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরের ভূমিকা পালন করছেন। আগস্ট বিপ্লবের পরেও তারা ঘুষ, দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় সমন্বয়কদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আগস্ট বিপ্লবের পরেও যারা দুর্নীতির সাথে জড়িত তারা পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা না হলে আদালত ঘেরাও কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা। 

সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি বলেন, জেলা ও দায়রা জজ গোলাম ফারুকসহ চার বিচারক নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে জড়িত। আদালতের নিয়োগে দুর্নীতি করে আইনমন্ত্রীর এলাকার লোকদের বারবার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমরা জেলা জজ সাহেবের সাথে দেখা করতে গেলে তিনি আমাদের বলেছেন, আমার সাথে কথা বলতে গেলে আগে জজ হতে হবে। তিনি আমাদের ১০ বছর পরে হলেও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। হাসিনার সময়ে প্রশাসনের লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হলেও তার দোসর এই বিচারকদের এখনো সরিয়ে নেওয়া হয়নি। তাই তারা শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে এখনো নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তাদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করা না হলে আদালত ঘেরাওসহ আন্দোলনের দুর্গ গড়ে তোলা হবে।

এ নিয়ে চেষ্টা করেও কোনো বিচারকের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জমিরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর পঞ্চগড় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ শেণির কর্মচারী পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ করেন পরীক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ওই নিয়োগ পরীক্ষা বর্জন করেন পরীক্ষার্থীরা। তাদের বিক্ষোভের মুখে নিয়োগ কমিটির পক্ষ থেকে পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেওয়া হয়। পরে ঘটনা তদন্তে একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়।।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ