অপহরণের চার দিন পর শিশুর লাশ উদ্ধার
Published: 23rd, January 2025 GMT
মতলব দক্ষিণ উপজেলার পাঁচদোনা গ্রামে অপহরণের ৪ দিন পর স্কুলছাত্রী আদিবা ইসলামের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার দুপুরে শিশু অপহরণের প্রতিবাদে এলাকাবাসী রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে পুলিশের তৎপরতা বেড়ে যায়। পুলিশ-এলাকাবাসী খোঁজাখুঁজি করে আটক ইমনের বাড়ির পাশে খড়ের গাদার নিচ থেকে আদিবার লাশ উদ্ধার করে।
অপহরণের অভিযোগে একই এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে ইমন ও লিটন সরকারের ছেলে ইয়াসিন সরকারকে আটক করা হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের পাঁচদোনা গ্রামের প্রবাসী আলাউদ্দিন বেপারির স্কুলপড়ুয়া মেয়ে আদিবা ইসলাম (৮) গত ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টার দিকে বাড়ির সামনে খেলা করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এরপর তার পরিবার অনেক খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে এলাকায় মাইকিং করে।
আদিবার মা শামীমা আক্তার বলেন, আদিবার সঙ্গে খেলছিল এমন শিশুদের কাছ থেকে জানতে পারেন, আটক ইমন গোলাপ ফুলের গাছের চারা দেওয়ার কথা বলে আদিবাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে নিখোঁজ হয় আদিবা।
আদিবাকে অপরণের ঘটনায় গত ২১ জানুয়ারি মতলব দক্ষিণ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শামীমা আক্তার। বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে ওই এলাকার আজিজ প্রধানীয়া বাড়ির পুকুরপাড়ে খড়ের বুষার নিচ থেকে আদিবার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে স্থানীয় আধারা আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালেহ্ আহাম্মদ জানান, আদিবা চারদিন আগে নিখোঁজ হয়। তার মা থানায় জিডি করলে বৃহস্পতিবার তল্লাশি চালিয়ে আজিজ প্রধানীয়া বাড়ির পুকুরপাড় থেকে আদিবার লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একই এলাকার ইমন ও ইয়াসিন নামে দু’জনকে আটক করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ র
এছাড়াও পড়ুন:
মিরাজ বীরত্বে দারুণ প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখলো বাংলাদেশ
পরাজয়ের গ্লানি থেকে গর্বের গাঁথায় ফেরার গল্প যখন লেখা হয়, সেখানে একজন নায়ক থাকেন। এইবার সেই নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। সিলেটের লজ্জাজনক হার ভুলিয়ে দিয়ে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্টে বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়াল মেঘ ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতো। অলরাউন্ড মিরাজের ব্যাটে-বলে দ্যুতি ছড়ানো আর তাইজুল ইসলামের ঘূর্ণিতে বিধ্বস্ত জিম্বাবুয়ে। ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়।
প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে কোনো সুযোগই দেয়নি বাংলাদেশ। তাইজুল ও নাঈম ইসলামের নির্ভুল বোলিংয়ে মাত্র ২২৭ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা। এরপর ব্যাট হাতে পাল্টা জবাব দেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। সাদমান ইসলামের ধারাবাহিকতা আর মিরাজের সংগ্রামী সেঞ্চুরিতে দল পৌঁছে যায় ৪৪৪ রানে। নেয় ২১৭ রানের লিড।
সাদমান তুলে নেন দারুণ এক সেঞ্চুরি, কিন্তু ম্যাচের মূল চিত্রনাট্য লিখলেন মিরাজ। টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতকে তিনি ছিলেন নির্ভার, নিবেদিত এবং নিখুঁত। ১৪৩ বলের ইনিংসে ১১টি চার ও একটি ছক্কায় সাজানো তার ১০৪ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস শুধু দলীয় সংগ্রহে রানের সংযোজন ছিল না, ছিল প্রতিরোধ আর প্রতিশোধের প্রতীক।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের বিপক্ষে দারুণ বোলিং করে মুজারাবানির ইতিহাস
ইনিংস ব্যবধানে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বদলা নিলো বাংলাদেশ
তাইজুলের সঙ্গে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৬৩ রানের জুটি। এরপর তানজিম হাসান সাকিবের সঙ্গে নবম উইকেটে যোগ করেন আরও ৯৬ রান। তানজিম নিজেও খেলেন ৪১ রানের কার্যকর ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মিরাজ যখন আউট হন, তখন স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশ—৪৪৪।
প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলতে নামা জিম্বাবুয়ের মাসেকসা ১১৫ রান দিয়ে পাঁচ উইকেট নিয়ে রেখেছিলেন আলোচনার খোরাক।
দ্বিতীয় ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ইনিংস যেন শুরুই হলো পতনের ধ্বনি বাজিয়ে। মাত্র ৮ রানেই পড়ল ২ উইকেট। তাইজুল প্রথমে বোল্ড করলেন ব্রিয়ান বেনেটকে। এরপর এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নিক ওয়েলচকে। স্কোর যখন ৬৯, তখন উইকেট ৫টি। এরপর নাম মাত্র প্রতিরোধ গড়ে বেন কুরান ও ক্রেইগ আরভিন। কুরান করেন সর্বোচ্চ ৪৬ রান, আরভিন ২৫। বাকিরা যেন শুধুই আনুষ্ঠানিকতা সারলেন। ১১১ রানে অলআউট হয়ে লজ্জার হার বরণ করে নেয় জিম্বাবুয়ে।
মিরাজ বল হাতেও রচনা করলেন অনন্য মহাকাব্য। ২১ ওভারে ৮ মেডেনসহ মাত্র ৩২ রানে শিকার ৫ উইকেট। এটি তার ক্যারিয়ারের ১৩তম পাঁচ উইকেট শিকার। তাকে দারুণ সহায়তা দেন তাইজুল, ৩টি উইকেট নেন ৪২ রানে। নাঈম ইসলামের ঝুলিতে যায় ১ উইকেট।
একই ম্যাচে সেঞ্চুরি ও ফাইফার, এমন কীর্তির সাক্ষী হওয়া সবসময় ঘটে না। মেহেদী হাসান মিরাজ সেই বিরল অর্জনের মালিক হয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। শুধু এখানেই শেষ নয়, দুই টেস্টে মোট ১৫ উইকেট ও একটি দুর্দান্ত সেঞ্চুরির সুবাদে সিরিজ সেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।
চট্টগ্রামে এই জয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ শুধু সিরিজে সমতা ফেরায়নি, সিলেটের ক্ষতচিহ্নও কিছুটা মুছে দিয়েছে। মিরাজের ব্যাট-বলের বীরত্বে লেখা হলো এক প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য—যেখানে বাংলাদেশের ক্রিকেট আবারও প্রমাণ করেছে, তারা হার মানে না, হারিয়ে দিতে জানে।
ঢাকা/আমিনুল