ডাকাতির অভিযোগে ব্যবসায়ীকে চোখ উপড়ে পিটিয়ে হত্যা
Published: 24th, January 2025 GMT
ফরিদপুর সদরের আলিয়াবাদ ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রামে মিরান খান (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে ডাকাতির অভিযোগে চোখ উপড়ে ফেলে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সদরের গুচ্ছগ্রাম এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মিরান ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পদ্মার চরের বালু, মাছ ও ইন্টারনেট ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন বলে জানা গেছে।
মিরান খান আলিয়াবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সাদীপুর সেতুর পাশের জালাল খানের ছেলে। তার দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার স্ত্রী ৯ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।
স্থানীয়দের দাবি, মিরান ডাকাতি ও মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অস্ত্র নিয়ে ডাকাতি করতে গেলে গণপিটুনিতে মিরানের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে একটি এয়ারগান ও একটি ছ্যানদা উদ্ধার দেখিয়েছে এলাকাবাসী।
মিরানের ছোট ভাই ইরান খান বলেন, আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিন মাস আগে মাছ ধরা নিয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী ব্যক্তি তন্ময়ের সঙ্গে আমার ভাইয়ের দ্বন্দ্ব হয়। সেসময় থানায় জিডি করেছিলাম। তারাই আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
ইরান আরও বলেন, যেখানে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে সেখানে আমাদের একটি ঘর আছে। ডাকাতির যে কথা বলছে তা মিথ্যা। আমার ভাই ব্যবসা করতো, আমরা যথেষ্ট সচ্ছল। আর যেই গ্রামে ডাকাতির কথা বলা হয়েছে সেটি একটি গুচ্ছগ্রাম, সবাই অতি দরিদ্র। কারও ঘরে দুই হাজার টাকা পাওয়া যাবে না। মূলত প্রভাব বিস্তার ও মাছ ব্যবসা নিয়ে আমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রভাবশালীদের দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। তার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। রাত ১২টার দিকে আমরা খবর পাই, আমার ভাইকে মারা হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও নদীর ওপার যেতে পারিনি। ঘাটে কোনও নৌকা রাখেনি তারা। এমনকি ভোরে গিয়ে আমার ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় তারা বাধা দেয়।
এলাকার বাসিন্দা মনি শিকদার বলেন, রাতে ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তবে কুয়াশার কারণে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসেনি। ভোরের দিকে মিরান খানের আত্মীয়স্বজন এসে আহত অবস্থায় তাকে নিয়ে গেছে।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ড মাস্টার ফায়েকুজ্জামান জানান, শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে মিরানকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এর কিছুক্ষণ পরে তার মৃত্যু হয়।
ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদউজ্জামান বলেন, এলাকাবাসীর পিটুনিতে এক ব্যক্তি আহত হন। তাকে হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণের পর তার মৃত্যু হয়। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ফুটবলার প্রতিমা এগিয়ে যাচ্ছেন, পাশে আছে কিশোর আলোসহ অনেকে
একটি পরিবারের ওপর নেমে আসা অপ্রত্যাশিত চাপ আর হতাশাকে দূর করেছে একটি সংবাদ। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ ও অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় ফুটবল দলের খেলোয়াড় প্রতিমা মুন্ডার পড়াশোনা ও খেলাধুলা থমকে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল মাত্র ৪৭ হাজার টাকার জন্য। প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশের পর মিলেছে সহযোগিতা, পরিশোধ হয়ে গেছে বিকেএসপির বকেয়া।
এতে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা। তাঁদের ওপর থেকে নেমে গেছে বড় ধরনের আর্থিক চাপ।
গত ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেএসপি প্রতিমার অভিভাবককে পাঠানো চিঠিতে জানিয়েছিল, তাঁদের মেয়ের বকেয়া বেতন ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা। সেই চিঠিতেই সতর্ক করে বলা হয়, ছয় মাসের বেশি বেতন বকেয়া থাকলে চূড়ান্ত সতর্কীকরণ, আর ১২ মাসের বেশি বকেয়া থাকলে বহিষ্কারের বিধান আছে। অর্থাভাবে যখন অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল প্রতিমার ভবিষ্যৎ, ঠিক সেই সময় ১১ অক্টোবর প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয় তাঁদের পরিবারের সংগ্রামের গল্প।
আরও পড়ুনবকেয়া বেতন চেয়ে বিকেএসপির চিঠি, ফুটবলার প্রতিমার পড়াশোনা বন্ধের পথে ১১ অক্টোবর ২০২৫প্রতিবেদনটি পাঠকের হৃদয়ে নাড়া দেয়। কিশোর আলোর পক্ষ থেকে প্রতিমার বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই দিনই বিকেলে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামে গিয়ে প্রথম আলোর সাতক্ষীরার নিজস্ব প্রতিবেদক কল্যাণ ব্যানার্জি প্রতিমা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেন। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে নেওয়া হয় এই উদ্যোগ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ব্যবসায়ী সহায়তা করেন আরও ১০ হাজার টাকা। তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দীপা রানী সরকার দেন পাঁচ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল।
সহায়তা পেয়ে স্বস্তি ফিরেছে পরিবারে। মুঠোফোনে প্রতিমা বলেন, ‘এখন আর কোনো অনিশ্চয়তা নেই। বিকেএসপির পাওনা ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা পরিশোধ করে দিয়েছি। আমি ভালো আছি, মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা আর অনুশীলন করছি।’
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার প্রতিমা মুন্ডা ও তাঁর মা সুনিতা মুন্ডার হাতে কিশোর আলোর পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়। মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগরের সৌজন্যে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়