ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় ভারতের পদক্ষেপ জানতে ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে জবাবদিহি চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা। এখনও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়নি কেন? সে প্রশ্নও তুলেছেন তারা।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ সমাবেশে এ দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ৫ আগস্টের ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাতের পর থেকে অভ্যুত্থানকে ভারত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছে। তারা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েছে। ঘৃণা উৎপাদন করেছে। আজ আমরা তার ফল প্রত্যক্ষ করছি।

তিনি বলেন, আমাদের বোনকে হত্যার পর ধর্ষণের ঘটনায় ভারতকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে তার জবাবদিহি চাইতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য তারেকুল ইসলাম বলেন, ভারতীয়দের হাতে বাংলাদেশিদের খুন আজকের কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই তারা বাংলাদেশের জনগণকে দ্বিতীয় সারির নাগরিক মনে করে খুন করেছে। সীমান্তে প্রতিবছর শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। গত সরকারের আমলে বিচার করা তো দূরের কথা, বিচার চাওয়াও হয়নি।

তিনি বলেন, ২০২৪ সালের অভ্যুত্থান ছিল ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নতুন মুক্তিযুদ্ধ। এখানে আবু সাঈদ থেকে শুরু করে যারা শহীদ হয়েছেন, তারা আবরার ফাহাদ, ফেলানির সিলসিলা ধরে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। বাংলাদেশ তার ওপর আর অন্য কোনো দেশের আধিপত্যবাদ মেনে নেবে না।

সমম্বয়ক হাসিব আল ইসলাম বলেন, ভারতে যখন মৌমিতা নির্মমভাবে ধর্ষণ করা হলো, তখন আমরা প্রতিবাদ জারি রেখেছিলাম। কিন্তু যখন নাজমাকে হত্যা করা হলো, তখন ভারতীয় জনগণ চুপ কেন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে এখনও কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের ১৮ কোটি জনতা নাজমা হত্যার বিচার চাই।

তিনি বলেন, বিগত সরকার ভারতের গোলামী করে স্বৈরাচারী ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছিল। বাংলাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে অসম চুক্তির মাধ্যমে দেশকে বিক্রির ষড়যন্ত্র করছিল। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আর সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে একটুও ছাড় দিবে না।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দপ্তর সেল সম্পাদক জাহিদ আহসানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জুলাই অভ্যুত্থান বিষয়ক বিশেষ সেলের সদস্য সালোয়া আক্তার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি নারীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু শহরের রামমূর্তি নগরের কেলকেরে লেকের কাছে ২৮ বছর ওই বয়সী বাংলাদেশি নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার স্বামী একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। তিন সন্তান নিয়ে উত্তর বেঙ্গালুরুতে থাকতেন তারা। ওই নারী একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এই ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত