সরকারি কর্মচারী বশির আহমদকে জামিনদার করে সুদে পাঁচ লাখ টাকা নেন তাঁর আত্মীয় কুতুব মিয়া। তজমুল হোসেন ওরফে টিয়া হাজিকে প্রতি মাসে লাখে পাঁচ হাজার টাকা নিয়মিত দিতে পারেননি কুতুব। পরে তজমুল চাপ দেন বশিরকে। চাকরি ও সম্মান রক্ষায় হাউস বিল্ডিং থেকে ঋণ করে পাঁচ লাখ টাকাই দেন বশির। অথচ তাঁকেই ২৫ লাখ টাকা পরিশোধে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন তজমুল।
একই ঘটনা মিনতি রায়ের ক্ষেত্রেও। তজমুলের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার নিয়ে পরে পরিশোধও করেন। তাঁকেও সাত লাখ টাকা পরিশোধে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছেন তজমুল।
এলাকায় কখনও সুদে, কখনও ধারের নামে টাকা দিচ্ছেন তজমুল। এ সময় স্বাক্ষর করা ব্ল্যাংক চেক রাখেন। পরে ইচ্ছেমতো অঙ্ক বসিয়ে উকিল নোটিশ ও মামলা করছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ 
করেছেন। তজমুলের দাদনের খপ্পরে পড়ে সিলেটের জৈন্তাপুরের চিকনাগুল ইউনিয়নে শত শত মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। অনেকেই ছেড়েছেন বাড়িঘর।
তজমুল ইউনিয়নের পানিছড়া গ্রামের বাসিন্দা। নিজেকে জমি ব্যবসায়ী বললেও, তিনি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষকে চড়া সুদে ঋণ দেন। ব্যবসায়ী হলে লাভের ৫০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে লাখে পাঁচ হাজার টাকা করে পরিশোধে চুক্তি করেন। লাভ ও মূল টাকা পরিশোধ করার পরও তজমুল ব্ল্যাংক চেক দিয়ে অনেকের বিরুদ্ধে মামলা এবং নোটিশ পাঠিয়েছেন।
উপজেলার শিকারখা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তজম্মুল আলী সম্প্রতি আদালতে তজমুলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে মুদি দোকানের জন্য ব্যাংক ঋণের প্রস্তুতি 
নেন। জানতে পেরে ঋণের প্রস্তাব দেন তজমুল হোসেইন। ৩ লাখ টাকা ঋণও দেন। বিপরীতে ব্ল্যাংক চেক ও স্ট্যাম্পে সই নেন। তিনি ৩ লাখ টাকার বিপরীতে ৬ লাখ ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। চেক ও জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প ফেরত না দিয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে লিগ্যাল নোটিশে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে ৯ লাখ টাকা ও তাঁর বাবা মনফর আলীকে ৬ লাখ টাকা পরিশোধে নোটিশ প্রদান করেন।
মিনতি রায় জানান, টিয়া হাজির কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেন। পরে তা পরিশোধ করেন। সম্প্রতি তাঁকে সাত লাখ টাকার লিগ্যাল নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। কাপনাকান্দি গ্রামের আরেক ঋণগ্রহীতা আলিম উদ্দিন জানান, আড়াই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে তিনি ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। তাঁকে ১৫ লাখ টাকার লিগ্যাল নোটিশ দেওয়া হয়।
একইভাবে আরেক সরকারি কর্মচারী আয়াত উল্লাহ দেড় লাখ টাকা নিয়ে আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ করার পর ৫ লাখ টাকার, রাজু আলী নামের এক ব্যক্তি ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ১৬ হাজার টাকা পরিশোধের পর ৫ লাখ টাকার লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন।
তজমুল লোকজনকে ঋণ দিয়ে কৌশলে দাদন ব্যবসার পাশাপাশি প্রতারণা করছেন। প্রভাবশালী হওয়ায় টাকা প্রদানের তাগিদে অনেকে বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। গত বুধবার ৭ ভুক্তভোগী নোটিশ পেয়ে হাজির হন তাঁর বাড়িতে। তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের একটি মামলায় ওইদিন তদন্তে যায় পুলিশ।
জৈন্তাপুর থানার ওসি আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, তজমুল হোসেনের 
বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা হয়েছে। সেই মামলাটি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। সুদে টাকা কিংবা লোন দেওয়ার বিষয়টি ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে 
করতে হলে আইনগত সমস্যা রয়েছে। ব্ল্যাংক চেক, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরসহ অন্য বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জিম্মাদার বশির আহমদ বলেন, ‘আমাকে সাক্ষী রেখে আত্মীয় কুতুবকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। আমি একটি চেকও দিই। পরে জানতে পারি আমি জিম্মাদার। মানসম্মানের ভয়ে আমি সেই টাকা পরিশোধ করি। এখন আমাকে ২৫ লাখ টাকার নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
অভিযোগ বিষয়ে তজমুল হোসেইন সমকালকে জানান, তিনি জমি কেনাবেচার ব্যবসায়ী। ব্যবসার জন্য ঋণ দেন। যারা দিতে পারেননি, তাদের উকিল নোটিশ দেওয়া হচ্ছে। নোটিশের জবাব না দেওয়ায় 
মামলাও করেছেন। সুদের টাকা পরিশোধের পর কেন নোটিশ দিয়েছেন– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ব্যবসার ৫০ ভাগ লাভে টাকা দিয়েছিলাম। সুদে নয়। মোট টাকা হিসাব করে নোটিশ দিয়েছি। আমি কোনো সুদের ব্যবসা করি না।’ যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তারা বিষয়টি আপস করার চেষ্টা করছেন বলে দাবি করেন তজমুল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স দ আর প ব যবস য় র ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত