বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদ্য ঘোষিত রাজশাহী জেলা ও মহানগর কমিটি প্রত্যাখান করেছেন কিছু শিক্ষার্থী। তারা কমিটি বাতিলের জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে সংবাদ সম্মেলনে এই আলটিমেটাম দেন তারা। 

এর আগে বৃহস্পতিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত নগর কমিটির সদস্য সাফিউল ইসলাম অনিক ও আরিবুল ইসলাম আবিরও উপস্থিত ছিলেন। তারা ইতোমধ্যে কমিটি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানান।

লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থী জুবায়ের রশিদ বলেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী মহল জুলাই বিপ্লবের প্রকৃত নায়কদের মাইনাস করে ৫ আগস্টের পর সুবিধাভোগী কিছু অনুপ্রবেশকারীর মাধ্যমে প্রহসনের পকেট কমিটি গঠন করেছে। জেলা ও মহানগরের কমিটিতে আন্দোলনের প্রকৃত বিপ্লবী এবং নির্ভরযোগ্য নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে চেতনাবিরোধী, বহিরাগত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে। আন্দোলনবিরোধী এসব ব্যক্তি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও বাজারে চাঁদাবাজি, ক্ষমতার দখল এবং সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত।’

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ‘ফাতিন মাহাদী ও মাহিন সরকার মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই কমিটি গঠন করেছে। আরও উদ্বেগের বিষয়- এই কমিটির নেতৃত্বে এমন অনেককে রাখা হয়েছে যারা সরাসরি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এমনকি আওয়ামী লীগের শরিক দল জাসদের ছাত্র সংগঠনের নেতাকেও এই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানো হয়েছে যা সরাসরি জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অপমান এবং রাজশাহীর ত্যাগী ছাত্র-জনতার সঙ্গে প্রতারণার শামিল। একজন হত্যা মামলার অন্যতম আসামিকে এই কমিটির শীর্ষ পদে রাখা হয়েছে যা এই কমিটির প্রকৃত উদ্দেশ্য স্পষ্ট করে দেয়।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মারের নেতৃত্বে এই কমিটি ঘোষণা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জুবায়ের রশিদ বলেন, রাজশাহীর মাটিতে মাহিন সরকার ও সালাউদ্দিন আম্মারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো। এই আন্দোলন হাজারও শহীদের আত্মদানের ফসল, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার প্ল্যাটফর্ম নয়। 

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, যারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ তুলেছেন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আলট ম ট ম ন কর ছ র কম ট

এছাড়াও পড়ুন:

শুধু ঘোষণা নয়, বাস্তবে প্রতিফলিত হোক

রাজধানী শহরসহ দেশের বড় শহরগুলোয় শব্দদূষণের অসহনীয় মাত্রার বিষয়টি কারও অজানা নয়। এটি এখন শুধু শব্দদূষণ নয়, শব্দসন্ত্রাস বলেও অভিহিত হচ্ছে। অতীতে ও বর্তমানে সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও কার্যকর হচ্ছে না। অতীতের ধারাবাহিকতায় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানী, বারিধারা ও নিকেতনকে ‘নীরব এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে প্রশংসার যোগ্য। এখন এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করাই হচ্ছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শহরের শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে নীরব এলাকা ঘোষণা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি অবশ্যই সরকারের সদিচ্ছার প্রকাশ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই ঘোষণা বাস্তবে কার্যকর হবে, নাকি এটিও অতীতের মতো কেবল কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকবে? এর আগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে নীরব এলাকা ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু তার ফল তেমন একটা ভালো পাওয়া
যায়নি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঘোষণার পর কিছু এলাকায় শব্দ কিছুটা কমলেও সার্বিকভাবে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। এই অভিজ্ঞতা থেকে বোঝা যায়, শুধু ঘোষণা যথেষ্ট নয়, বরং এর কঠোর বাস্তবায়ন অপরিহার্য।

শব্দদূষণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলতেই হয়। যার কারণে সাউন্ডবক্স বা মাইক বাজানোর বিষয়গুলো তুলনামূলকভাবে কমে এসেছে। তবে গাড়ির হর্ন এতটা বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করছে, যা অকল্পনীয়। এটিই এখন রাজধানীসহ বড় শহরগুলোর শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অতিরিক্ত শব্দ হৃদ্‌রোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এটিতে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, মেজাজ খিটখিটে হয়, মানুষ অনিদ্রায় ভোগে এবং শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় বিঘ্ন ঘটায়। তাই শুধু অভিজাত এলাকা নয়, পুরো শহরে ধাপে ধাপে কীভাবে নীরব এলাকা ঘোষণা করা যায়, সেই লক্ষ্যে পরিকল্পিতভাবে এগোতে হবে।

তবে এ উদ্যোগ সফল করতে হলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কঠোর হতে হবে। হর্ন বাজানোর বিরুদ্ধে আইন আছে। তা যদি আইনভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে প্রয়োগ না করা হয়, এ ঘোষণা কখনোই সফল হবে না। কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর না করে নীরব এলাকা–ঘোষিত এলাকাগুলোর বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, যেমন মসজিদ, মন্দির এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকেও এখানে গণসচেতনতার কাজে যুক্ত করতে হবে।

গাড়ির হর্ন বাজানো সীমিত করতে পরিবহনের বিভিন্ন ধরনের সমিতি–সংগঠনগুলোর যুক্ততাও এখানে গুরুত্বপূর্ণ। গাড়ির চালকদের অভ্যাসগত পরিবর্তনের জন্য শব্দদূষণের ক্ষতিকর দিকটি নিয়মিতভাবে তাঁদের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। হাইড্রোলিক হর্নসহ উচ্চমাত্রার যেকোনো হর্ন উৎপাদন, আমদানি ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। এ ব্যাপারে ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ