Samakal:
2025-11-03@14:40:01 GMT

জমিদার রায় বাহাদুর ও দইয়ের গল্প

Published: 31st, January 2025 GMT

জমিদার রায় বাহাদুর ও দইয়ের গল্প

যে কোনো বেলার খাবারের শেষে একটু হলেও দই থাকাটা রসনাবিলাসী বাঙালি আশা করতেই পারে। অঞ্চলভেদে পুরোনো সব আদব-কায়দা আমরা হরহামেশাই হারিয়ে ফেলি। বাঙালির এমন কিছু ইতিহাস, ঐতিহ্য, রেওয়াজ, সংস্কৃতি একেবারেই মুছে ফেলা বা ভোলা যায় না। মানুষের মধ্যে অল্পস্বল্প হলেও তা রয়ে যায়। জমিদারি আমলে চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জ জেলার তাড়াশের তৎকালীন জমিদার রাজা রায় বাহাদুরের প্রচলন করা প্রায় ৩০০ বছর আগেকার দইয়ের মেলা তেমনি একটি ঐতিহ্য। 
ইতিহাস থেকে জানা যায়, সতেরো শতকে বাসুদেব তালুকদার নামে এক ব্যক্তি তাড়াশ অঞ্চলে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। মুর্শিদাবাদের নবাবের অধীন হয়ে রাজস্ব বিভাগে চাকরি নেওয়ার মাধ্যমে বাসুদেব তালুকদারের কর্মজীবন শুরু হয়। পাশাপাশি তাঁর সততা এবং নবাবের প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তাঁকে তাড়াশ মহাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে তাঁকে ‘রায় চৌধুরী’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। বাসুদেবের পৌত্র বলরাম দাস ছিলেন নাটোর জমিদারির অধীন একজন কর্মচারী মাত্র। জানা যায়, ১৭১১ সালে তিনি ‘রায়’ উপাধি গ্রহণ করেন এবং উনিশ শতকের শুরুর দিকে বলরাম রায়ের পঞ্চম পুরুষ রামসুন্দর রায় নিঃসন্তান হওয়ায় মূল বংশের বিলুপ্তি ঘটে। উত্তরাধিকারী ছিলেন চার দত্তক পুত্র। তাড়াশের জমিদারদের মধ্যে বনওয়ারী লাল রায় অত্যন্ত খ্যাতিমান ছিলেন। সে সময় তিনি পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ প্রতিষ্ঠায় অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। বনওয়ারী লাল রায়কে ব্রিটিশ সরকার ১৮৯৪ সালে ‘রায় বাহাদুর’ উপাধি দেন। ১৯০৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর দত্তক পুত্র বনমালী রায় তাড়াশের পরবর্তী জমিদার হন। তিনিও একজন খ্যাতিমান জমিদার ছিলেন। বনমালী রায় পাবনা শহরে ‘ইলিয়ট বনমালী টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট’ এবং সিরাজগঞ্জে ‘বনওয়ারী উচ্চ বিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পাবনায় অবস্থিত এডওয়ার্ড কলেজের নতুন ভবন নির্মাণেও এ জমিদার অর্থ সহায়তা করেছিলেন। তিনিও ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক ‘রায় বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯১৪ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তখন তাঁর দুই পুত্র ক্ষিতীশভূষণ ও রাধিকাভূষণ ১৯৫০ সালের জমিদারি প্রথা বিলোপ না হওয়া পর্যন্ত তাড়াশের জমিদারি পরিচালনা করেছিলেন। 
এ অঞ্চলে জনশ্রুতি আছে, তাড়াশ অঞ্চলে যারা জমিদারি করেছেন তাদের মধ্যে নাম, যশ, খ্যাতিতে অন্যতম জমিদার ছিলেন রাজা রায় বাহাদুর। রাজা রায় বাহাদুর যেমন তাড়াশে এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বৃহৎ পরিসরে রাধাগোবিন্দ মন্দির নির্মাণসহ নানা ধরনের জনকল্যাণমূলক কাজ করেছেন। ব্যক্তিজীবনেও তিনি খাবারের ক্ষেত্রে দই, পনির ও মিষ্টান্ন খুব পছন্দ করতেন। জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলের প্রখ্যাত ঘোষদের তৈরি দই, পনির, মিষ্টান্ন পরিবেশন করা হতো। এ বিষয়টি থেকে তিনি জমিদার বাড়ির অদূরে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে বিদ্যার দেবী সরস্বতী পূজা উপলক্ষে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে তিন দিনব্যাপী দইমেলার প্রচলনও শুরু করেন। মেলার দিনগুলোয় এ অঞ্চলের প্রজা সাধারণসহ সবাই অন্তত এক বেলা খাবারের পাতে দইয়ের স্বাদ নিতে পারেন। তখন থেকে প্রতি বছর শীত মৌসুমের মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন পঞ্চমী তিথিতে দইমেলা বসে আসছে; যা জমিদার রাজা রায় বাহাদুর, বনমালী রায়, ক্ষিতীশভূষণ ও রাধিকাভূষণ পর্যন্তও মোটামুটি জাঁকজমক ও জৌলুসপূর্ণ ছিল তাড়াশের দইমেলা। পরবর্তী সময়ে জৌলুস কমে এলেও, প্রতি বছর পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পূজার দিন তাড়াশে দইয়ের মেলা বসে আসছে। এবারও সরস্বতী পূজার দিন ২ ফেব্রুয়ারি (রোববার) বসবে দইমেলা।
আগে পূজার আগের দিন সন্ধ্যায় বাঁশের তৈরি ঝুড়িতে দই সাজিয়ে বাক্সে করে ঘোষরা মাটির কাঁচা রাস্তা ধরে দূর-দূরান্ত থেকে তাড়াশের দইমেলায় আসতেন। এখন নানা পরিবহনে তাড়াশ ঈদগাহ মাঠে এ সময়ের বিখ্যাত ঘোষদের দই আসার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো তাড়াশের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা; যার মধ্যে বগুড়া, শেরপুর, রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা, ঘুড়কা, পাবনার চাটমোহর, নাটোরের গুরদাসপুর, সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে ক্ষীরশা দই, শাহি দই, টক দই, ডায়াবেটিক দই, স্পেশাল দই, প্রিমিয়ামসহ বিভিন্ন ধরন ও নামের দই নিয়ে মেলা জমে ওঠে। মেলায় দইয়ের পাশাপাশি ঝুড়ি, মুড়ি, মুড়কি, আমন-আউশ ধানের চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খাগরাই, খেজুরের গুড়সহ রসনাবিলাসী নানা খাবার বিকিকিনি চলে দিনব্যাপী।
স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, জমিদারি আমলে দইমেলাকে ঘিরে এ অঞ্চলে সাজসাজ রব পড়ে যেত। এলাকায় নাইওরে আসত বউ-ঝি। আসত দূরের ও কাছের আত্মীয়স্বজন। তিন দিনের মেলা ছিল জৌলুসে ভরা। জমিদার রায় বাহাদুর তাঁর সময়ে প্রতি বছর মেলা শেষে সবচেয়ে ভালো সুস্বাদু দই তৈরিকারক ঘোষদের উপঢৌকন দেওয়ার রেওয়াজও প্রচলন করেছিলেন। এতে ভাটার টান চললেও নিয়ম মেনেই প্রতি বছর সরস্বতী পূজার দিন মেলা বসছে, যা আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির স্মারক। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কর ছ ল ন

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ব ইজতেমা মার্চে 

প্রতিবছর জানুয়ারিতে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করা হলেও এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে তা পিছিয়ে মার্চ মাসে করা হবে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ এ তথ্য জানিয়েছেন তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ বা শুরায়ী নেজামের শীর্ষ নেতা মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারি।

আরো পড়ুন:

শেষ হলো দাওয়াতে ইসলামীর ইজতেমা

দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা শুরু 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিগত বছরগুলোতে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা হলেও আগামী বছর এক পর্বে হবে। মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী বা সাদপন্থিদের ইজতেমা আয়োজনের সুযোগ থাকবে না। 

মুফতি কেফায়েতুল্লাহ বলেছেন, “তাবলিগ জামাত বাংলাদেশ তাবলিগি এ মেহনতকে দ্বীনি মেহনত হিসেবে বিশ্বাস করে। দ্বীনি কাজের অংশ হিসেবে বর্তমান সরকারের অনুরোধ শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করে আমরা আগামী বিশ্ব ইজতেমা মার্চে আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, এ সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে সরকারের প্রতি সহযোগিতার শামিল।”

বিশ্ব ইজতেমা সাদপন্থিরা আয়োজন করতে পারবেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “সরকারের কাছে তারা লিখিত দিয়ে গতবার শেষবারের মতো ইজতেমার আয়োজন করেছিল। সেক্ষেত্রে তাদের আর ইজতেমা করার সুযোগ নেই।”

বিশ্ব ইজতেমা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সংবাদ সম্মেলনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে তিনটি অনুরোধ তুলে ধরা হয়।
১. আগামী ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের আগেই ইজতেমার দিন-তারিখ ঘোষণা এবং সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম শুরু করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোকে অবহিত করা।

২. ইজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা ময়দানকে অস্থায়ীভাবে কেপিআই (কি পয়েন্ট ইন্সটলেশন) ঘোষণা।

৩. ইজতেমায় আসা বিদেশি অতিথিদের সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভিসা সহজীকরণ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা।

ঢাকা/রায়হান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ