Samakal:
2025-06-16@01:28:03 GMT

পাণ্ডুলিপি পাঠকই ‘যাচাই’ করুক

Published: 1st, February 2025 GMT

পাণ্ডুলিপি পাঠকই ‘যাচাই’ করুক

গতকাল শনিবার অমর একুশে বইমেলা উপলক্ষে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে– এমন বিষয়বস্তু ঠেকাতে’ পাণ্ডুলিপি আগেই বাংলা একাডেমি দ্বারা যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।  
গত বছর–আওয়ামী লীগের আমলে–একুশে বইমেলায় তিনটি বই বাংলা একাডেমি নিষিদ্ধ করে। মজার বিষয়, এসব বইয়ের কাটতি আরও বেড়ে গিয়েছিল। তিনটি বই বুদ্ধিবৃত্তিক দিক থেকেও ছিল বেশ চমৎকার। ফয়েজ আহমদ তৈয়্যবের ‘অপ্রতিরোধ্য উন্নয়নের অভাবনীয় কথামালা’, ফাহাম আব্দুস সালামের লেখা ‘মিডিয়োক্রিটির সন্ধানে’ ও জিয়া হাসানের ‘উন্নয়ন বিভ্রম’। বই তিনটি নিষিদ্ধ করার কারণ হলো, এগুলো আওয়ামী লীগের উন্নয়নের গাঁজাখুরি চিত্র উদোম করে দিয়েছিল। 

বাংলাদেশে বইয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিভিন্ন সময় শাসকমহল নিজেদের অপরাধ ও অস্বস্তি গালিচার নিচে লুকিয়ে রাখতে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়। সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্তে হিতে বিপরীত ঘটে। ভারতবর্ষে ইংরেজ সরকার জাতীয় কবি নজরুল ইসলামে ‘যুগবাণী’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘ভাঙার গান’, ‘প্রলয় শিখা’ ও ‘চন্দ্রবিন্দু’ কাব্যগ্রন্থ নিষিদ্ধ করেছিল। তারা ‘কারার ঐ লৌহ-কপাট’-এর মতো কবিতা নিষিদ্ধ করেছিল, যা ‘ভাঙার গান’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। একইভাবে ‘বিদ্রোহী’ কবিতাটিও অনানুষ্ঠানিকভাবে নিষিদ্ধ ছিল, যেটি ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৯৫ সালে হুমায়ুন আজাদের ‘নারী’ বইটি নিষিদ্ধের তালিকায় যুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালের ১১ জুলাই সরকার ‘জনমনে বিভ্রান্তি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অঙ্গনের বিঘ্ন ঘটানো এবং রাষ্ট্রবিরোধী উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রকাশের জন্য’ তসলিমা নাসরিনের ‘লজ্জা’ উপন্যাসটি নিষিদ্ধ করেছিল। ১৯৮৮ সালে সালমান রুশদির ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ প্রকাশ পায়। বইটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিতর্কের ঝড় তুলেছিল।  

বিশেষ কোনো কারণ দেখিয়ে কোনো বই নিষিদ্ধ করার ফজিলত আদৌ আছে কি? এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে একটু বিশ্লেষণ করা যাক। আধুনিক দুনিয়ায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষে রয়েছে ব্যাপক সমর্থন। এটি চলমান এক প্রক্রিয়া। সমাজের বৌদ্ধিক পরিপক্বতার সঙ্গে সঙ্গে বিশেষ জনগোষ্ঠীর মতপ্রকাশ উপভোগ করার পরিসরের বিস্তৃতি ঘটে। এ কারণে এখানে লেখক ও পাঠক দুই পক্ষের যেমন দায় রয়েছে, তেমনি রয়েছে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। যেমন– সরকারের গণতান্ত্রিক মনোভাব কতুটুকু, শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ইত্যাদি। 
সমাজে মিথ্যা ও দুর্বল বয়ান আগে-পরে ঠেকে না। গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা আওয়ামী বয়ানও চুরমার হতে দেখেছি। তাই ‘অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে’ এমন কারণ দেখিয়ে পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের ডিএমপির পরামর্শ যুক্তিযুক্ত নয়, বরং আপত্তিজনক। বিষয়টি অর্থনীতির গ্রেশাম’স ল-এর মতোই। এ আইন অনুযায়ী, খারাপ মুদ্রা বাজার থেকে ভালো মুদ্রাকে বিতাড়িত করে। গুণসম্পন্ন বইয়ের কাছে খারাপ বইয়ের পরাজয় ঘটবেই।

তাই বিশেষ কোনো বই কিংবা চিন্তা গ্রহণ বা বর্জনের দায় পাঠকের। এ কারণে বই প্রকাশে বাংলা একাডেমি কিংবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের হস্তক্ষেপ কোনোভাবেই কাম্য নয়।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ দ্বারা পরিচালিত সরকারের আমলে নাগরিক অধিকার, মতপ্রকাশের পরিসরের বিস্তৃতি ঘটবে– সেটিই প্রত্যাশিত। বিশেষ কোনো কারণ দেখিয়ে বিশেষ মত চাপা না দিয়ে বরং সরকার কার্যকর কিছু পদক্ষেপ নিতে পারে। যেমন– জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আর্কাইভ করা, শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, গবেষণায় আরও তহবিল বাড়িয়ে দেওয়া। 
রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বৌদ্ধিক উৎকর্ষের উন্নতি ঘটলে বিশেষ কোনো চিন্তার কারণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা কমতে 
থাকে। এ কারণে দায় যতটা ব্যক্তিমানুষের, তার চেয়ে বেশি রাষ্ট্রের। তাই পাণ্ডুলিপি যাচাইয়ের দায়িত্ব পাঠকের হাতে ন্যস্ত করাই যুক্তিযুক্ত।  

ইফতেখারুল ইসলাম: 
সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.

com 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন ষ দ ধ কর সরক র বইয় র

এছাড়াও পড়ুন:

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি

লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের আলোচনা ও ঐকমত্যের সূচনাকে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)। দলটি বলেছে, আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, জনগণ শুধু কথায় নয়, বাস্তবে সংস্কার ও বিচারের দৃশ্যমান অগ্রগতির পদক্ষেপ দেখতে চায়।

শুক্রবার জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব ও সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন।

তারা বলেন, এই উচ্চপর্যায়ের সংলাপ দেশে রাজনৈতিক সমঝোতা ও জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে গণঅভ্যুত্থানের কাঙ্ক্ষিত অভিপ্রায় অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার, শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

বিবৃতিতে নেতারা বলেন, অধ্যাপক ইউনূস এবং তারেক রহমানের বৈঠক ও বিবৃতিতে আগামী বছরের পবিত্র রমজানের আগেই একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ এবং তার পূর্বশর্ত হিসেবে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচারের প্রক্রিয়ায় দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জনের ঘোষিত প্রত্যয়ে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে।

বিবৃতিতে বলা হয়, গণমানুষের রক্তস্নাত গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম দাবি- গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য কাঠামোগত মৌলিক সংস্কার এবং গণহত্যাকারী ফ্যাসিবাদী শক্তির বিচারের ব্যবস্থা। এই বিষয় দুটির দৃশ্যমান অগ্রগতিই কেবল একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ভিত্তি রচনা করতে পারে।

রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সমাজের শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও পেশাজীবীদের মতামত, আকাঙ্ক্ষা ও অংশগ্রহণে রাষ্ট্রীয় রাজনীতির মৌলিক সংস্কারের লক্ষ্যে দ্রুত ‘জাতীয় সনদ’ প্রণয়নের আহ্বান জানায় জেএসডি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নাগরিক সমাজ শাসকদের পক্ষে থাকে কেন?
  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি