নথিপত্রহীনদের তাড়াতে অষ্টাদশ শতকের দুর্বোধ্য আইন ফেরাচ্ছেন ট্রাম্প
Published: 3rd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রে নথিপত্রহীন বিপুলসংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়াতে সদ্য শপথ নেওয়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০০ বছর আগের যুদ্ধকালীন একটি দুর্বোধ্য আইন ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। এ আইনের মাধ্যমে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বিতাড়ন করতে আদালতে দ্বারস্থ হতে হবে না। একটি বোর্ড কর্তৃপক্ষ থাকবে। তারাই নথিপত্রহীনদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নেবেন।
সোমবার রয়টার্সের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, ওভাল অফিসে বসার পর থেকেই ট্রাম্প ৩ ফেব্রুয়ারি (স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার) ১৭৯৮ সালের এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট আইন বিষয়ে সামরিক বাহিনী ও অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। আইনটি সর্বশেষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে (১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত) বন্দিশালায় থাকা জাপান, জার্মানি ও ইতালীয় বংশোদ্ভূতদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছিল।
ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ নিশ্চিতভাবে আইনি বাধার মুখে পড়বে। এর মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ন্যায়সংগত প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো ব্যাহত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে নথিপত্রহীন হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে তাড়ানোর অঙ্গীকার করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ অবস্থায় গত ২০ জানুয়ারি শপথ গ্রহণের দিনেই বেশ কিছু নির্বাহী আদেশে তিনি সই করেন। নথিপত্রহীনদের ধরতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অভিযান চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি গির্জা, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর আগে এসব স্থানে অভিযান চালাতে পারত না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আদালতের মাধ্যমে নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ফেরানোর প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ। এজন্য ট্রাম্প চান অতি পুরোনো সেই এলিয়ান এনিমিজ অ্যাক্ট নামের আইনটি ফিরিয়ে আনতে, যা দ্রুততর সময়ে নথিপত্রহীনদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে সক্ষম। এ ধরনের আইনের প্রয়োগ কেবল যুদ্ধকালেই দেখা যায়। আক্রমণের শিকার হলেই আইনটি প্রয়োগ করা হয়। রিপাবলিকানরা মনে করেন, নথিপত্রহীন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করছেন।
এরই মধ্যে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছেন। সেই সঙ্গে তিনি বিভিন্ন দেশে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে মার্কিন সহযোগিতায় চলা বিশ্বব্যাপী অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। এর ফলে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস