বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারভুক্ত না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিসের মতো আলাদা করার সুপারিশ করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। আর প্রশাসন ক্যাডারের জন্য বিদ্যমান ব্যবস্থার পরিবর্তে এমন একটি সার্ভিস করা হচ্ছে, যেখানে তাদের পদগুলো মাঠ প্রশাসনে সীমাবদ্ধ থাকবে।

তবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডার ও নন–ক্যাডার কর্মকর্তারা পরীক্ষার মাধ্যমে উপসচিব হওয়ার সুযোগ পাবেন। এ পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার, নন–ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ নেওয়া হবে। বর্তমানে উপসচিব পদে পরীক্ষা ছাড়াই প্রশাসন থেকে ৭৫ শতাংশ এবং অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ পদোন্নতি হয়।

আজ প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা। পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করাসহ শতাধিক সুপারিশ থাকছে।

এ ছাড়া বিসিএস ক্যাডার পদে শুরুর পদ, অর্থাৎ যোগদানের পদ ষষ্ঠ গ্রেড (বর্তমানে তা নবম গ্রেড) করা, শূন্য পদের বাইরে পদোন্নতি না দিতে সুপারনিউমারারি (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ বন্ধ করা, উপসচিব পর্যায়ে গাড়ির ঋণসুবিধা বাতিল করা, মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানো, চারটি বিভাগকে (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা) চারটি প্রদেশ করাসহ শতাধিক সুপারিশ থাকতে পারে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আজ বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। এর আগে গতকাল সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শেষবারের মতো সভা করেন কমিশনের সদস্যরা।

এ সময় কমিশনের প্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর কাছে সাংবাদিকেরা সুপারিশ সম্পর্কে জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি তিনি। শুধু বলেন, ১০০টির বেশি সুপারিশ আছে। আর সংস্কার কমিশনের সদস্যসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো.

মোখলেস উর রহমান বলেন, ‘প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর সেটি হবে পাবলিক ডকুমেন্ট। ওয়েবসাইটে দেওয়া হবে, সবাই জানবেন।’

আমরা যেসব সুপারিশ করছি, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা সরকার বুঝবে। আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী, প্রধান, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন

বর্তমানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীন তিন ধাপের নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ২৬টি ক্যাডারে নিয়োগ হয়। চাকরিপ্রার্থীদের পছন্দক্রম ও পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ক্যাডার নির্ধারণ করা হয়। ক্যাডারগুলো হলো প্রশাসন, পুলিশ, পররাষ্ট্র, কর, কৃষি, আনসার, নিরীক্ষা ও হিসাব, সমবায়, শুল্ক ও আবগারি, পরিবার পরিকল্পনা, মৎস্য, খাদ্য, বন, সাধারণ শিক্ষা, কারিগরি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্য, পশুসম্পদ, ডাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, গণপূর্ত, রেলওয়ে প্রকৌশল, রেলওয়ে পরিবহন ও বাণিজ্যিক, সড়ক ও জনপথ, পরিসংখ্যান ও বাণিজ্য ক্যাডার। একেকটি চাকরির কাজের ধরন একেক রকম। পদ-পদোন্নতি ও সুযোগ-সুবিধায় ভিন্নতা আছে। এসব নিয়ে ক্যাডারগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্বও আছে।

এর মধ্যে কর্মকর্তাদের সংখ্যার দিক দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বড় ক্যাডার। শিক্ষা ক্যাডারে কর্মকর্তা প্রায় ১৬ হাজার। আর স্বাস্থ্য ক্যাডারের সদস্য ৩০ হাজারের বেশি। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন বিসিএসে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডার হিসেবে না রেখে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের মতো আলাদা করার সুপারিশ করতে যাচ্ছে। তবে এই ক্যাডারের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছেন।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ক্যাডার থেকে আলাদা করা হলেও উপসচিব পর্যায়ে পদোন্নতির পরীক্ষায় শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের কর্মকর্তারাও যাতে অংশ নিতে পারেন, সে রকম সুপারিশও থাকছে।

পরিচয় প্রকাশ না করে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রশাসনের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকমের সুপারিশ দিতে যাচ্ছে কমিশন। অন্য ক্যাডারের সঙ্গে সমতা আনতে প্রশাসনকে আলাদা সার্ভিস হিসেবে গণ্য করা হবে। সমবায় ও খাদ্য ক্যাডারও প্রশাসন ক্যাডারে একীভূত হবে। প্রশাসন ক্যাডারের পদগুলো মাঠ প্রশাসনে (ইউএনও, এডিসি ইত্যাদি) সীমাবদ্ধ থাকবে। মাঠপর্যায়ে শীর্ষ পর্যায়ের পদ হবে বিভাগীয় কমিশনার। তবে আরেকটি শীর্ষ পদ থাকবে, নাম হতে পারে ‘চিফ কমিশনার’। শীর্ষ পদ থেকে মূলত মাঠ প্রশাসনকে তদারকির কাজটি করা হবে। এখন যেটা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শাখা।

বর্তমানে প্রশাসন ছাড়াও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব হতে পারেন। সরকারের এই পদে পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার থেকে ৭৫ শতাংশ ও অন্য ক্যাডার থেকে ২৫ শতাংশ নেওয়া হয়। বর্তমানে কর্মরত উপসচিবের সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ৬০০। উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারাই ধাপে ধাপে ওপরের পদে যাবেন।

বর্তমানে জেলা প্রশাসক হন প্রশাসন ক্যাডার থেকে উপসচিব হওয়া কর্মকর্তারা। কিন্তু উপসচিবদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের (যেমন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক) মধ্যে থেকেও একটি অংশ যাতে ডিসি হতে পারে, সে রকম সুপারিশ করতে পারে সংস্কার কমিশন।

মন্ত্রণালয়ের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি যেসব মন্ত্রণালয়ে একাধিক বিভাগ আছে, সেখানে ‘চিফ সেক্রেটারি’ পদ চালুর সুপারিশ করতে পারে কমিশন। বর্তমানে ২৫ বছর চাকরি করলে স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার সুযোগ পান কর্মকর্তারা। এ ক্ষেত্রে তাঁরা পেনশন–সুবিধা পান। এখন ১৫ বছর চাকরি করলেই পেনশন–সুবিধাসহ স্বেচ্ছা অবসরে যেতে পারবেন বলে সুপারিশ করছে কমিশন।

কমিশনপ্রধান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা যেসব সুপারিশ করছি, সেগুলো সবই বাস্তবায়ন করা সম্ভব। তবে বাস্তবায়ন করা হবে কি না, সেটা সরকার বুঝবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র শ করছ উপসচ ব ব স এস পর ক ষ মন ত র র কর ম পর য য় সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ