পাঁচ বছর নিখোঁজ থাকা নায়িকা পপির খোঁজ মিলল যেভাবে
Published: 5th, February 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরে আড়ালে আছেন এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা সাদিকা পারভীন পপি। বিয়ে ও সন্তান জন্মের খবর নিয়েও মুখ খোলেননি তিনি। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর অভিনীত সিনেমা ‘সাহসী যোদ্ধা’। চলচ্চিত্রের মানুষজন আশা করছিলেন সিনেমার প্রচার উপলক্ষে হয়তো প্রকাশ্যে আসবেন তিনি। সিনেমা মুক্তির তারিখও বারবার পেছানো হয়। ফিরলেন না তিনি। পপি ফিরলেন, তবে সশরীরে নয়, এবার নেতিবাচক সংবাদ শিরোনামে এলেন এই নায়িকা। তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে গত ৩ ফেব্রুয়ারি খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় জিডি করেছেন নায়িকা পপির বোন ফিরোজা পারভীন।
সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জিডি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জিডি সূত্রে জানা গেছে, পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার জন্য স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল, কল্লোল মজুমদার ও শিপনসহ পপি ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিববাড়ি এলাকার ভাড়াটিয়া বাড়ির সামনে যান। এতে বাধা দিলে পপি ও তাঁর স্বামী ফিরোজা পারভীনকে হুমকি দেন। স্থানীয় লোকজন জানান, পপি ও তাঁর স্বামী বর্তমানে খুলনায় অবস্থান করছেন। পপির মেজ বোন ফিরোজা পারভীন বলেন, ‘আমরা চার বোন, দুই ভাই। পপি সবার বড়। সে আমাদের বাবার জমি দখলের চেষ্টা করছে অনেক বছর ধরেই। বাবার মৃত্যুর পর থেকেই আমরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছি তার মাধ্যমে। পপি ছাড়া আমরা সবাই এক আছি। আগেও আমাদের পেশিশক্তির ভয় দেখানো হয়েছে। বিষয়টি চলচ্চিত্রের দুয়েকজন জানেন। আলমগীর সাহেব (অভিনেতা আলমগীর) পপিকে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছিলেন। কিন্তু পপি কোনো কিছুতেই থাকছে না। সবার জমি সে একাই ভোগদখল করতে চায়।’
প্রকাশ্যে স্বামী সন্তানের ছবি
পপি যখন আড়ালে ছিলেন, তখনই গুঞ্জন চলছিল বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন তিনি। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বসবাস করছেন। গতকাল স্বামীর সঙ্গে সন্তানসহ একটি ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। ছবিতে দেখা যায়, সন্তানের জন্মদিন পালন করছেন পপি ও তাঁর স্বামী। জানা গেছে, ২০২১ সালের অক্টোবরে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে পুত্রসন্তানের জন্ম দেন তিনি। নায়িকা তাঁর সন্তানের নাম রেখেছেন আয়াত। সন্তানের বয়স এখন প্রায় চার বছর। আর পপির স্বামী আদনান উদ্দিন কামাল একজন ব্যবসায়ী।
সাহসী যোদ্ধা সমাচার
পপি ২০১৯ সালে সর্বশেষ এফডিসিতে ‘সাহসী যোদ্ধা’ নামে সিনেমার শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন। সাদেক সিদ্দিকী পরিচালিত সিনেমাটি ২০২১ সালে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ নামে সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র লাভ করে। বেশ কয়েকবার সিনেমাটির মুক্তির খবর পাওয়া গেলেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যায়। ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ সিনেমাটি সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে। এতে পপিকে দেখা যাবে একজন পুলিশ কর্মকর্তার চরিত্রে। তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক আমিন খান।
ফিরে দেখা
২০১৯ সালে সর্বশেষ পপি অভিনীত সিনেমা ‘দি ডিরেক্টর’ প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল। আড়ালে যাওয়ার আগে পপি ২০২০ সালের ২৩ অক্টোবর ‘ধোঁয়া’ নামে একটি ছবিতে অভিনয়ের জন্য চুক্তিবদ্ধ হন। মার্চে কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল। এরপর হঠাৎ সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন পপি। এরপর বছর চারেক ধরে কোথাও দেখা যায়নি তাঁকে। কোথাও কোনো অনুষ্ঠানেও দেখা মিলছিল না একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রীর। আড়ালে যাওয়ার কিছুদিন নানা গুঞ্জনের মাঝেও মুখ খোলেননি পপি। হঠাৎ ২০২২ সালে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে তিনি আড়াল ভেঙে প্রকাশ্যে এসেছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৫ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিওতে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করেন। কেন তিনি আড়ালে আছেন তার সুস্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দেননি এ অভিনেত্রী। ফেরার ব্যাপারে শুধু বলেছেন ‘হয়তো ভাগ্য থাকলে আবারও ফিরব।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।