নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার। এর পর থেকে ওই কমিটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল ও স্লোগান দিচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের একাংশ। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শহরের দত্তপাড়া বাজার-সংলগ্ন মহাসড়কে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা ‘ওরা কারা’ লেখা ব্যানার হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। আগের দুই দিনও তাঁরা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা মিছিল শেষে শহরের চালপট্টি মোড়ে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন। তাঁরা ‘ভুয়া কমিটি.

..’, ‘ভুয়া কাশেম...’, ‘ভুয়া ডিউক...’ প্রভৃতি স্লোগান দিচ্ছিলেন। এ কর্মসূচির নেতৃত্বে ছিলেন জেলা বিএনপির বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ফরহাদ আলী দেওয়ান (শাহীন)। ওই প্রতিবাদের ভিডিও তিনি তাঁর ফেসবুক পেজেও পোস্ট করেছেন।

নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ। কমিটির সদস্যরা হলেন, শহিদুল ইসলাম (রাজু), সাবিনা ইয়াসমিন, আবুল কাশেম, তারিকুল (টিটু), আবু হেনা মোস্তফা, সুফিয়া হক ও রঞ্জিত কুমার সরকার।

এ সম্পর্কে ফরহাদ আলী দেওয়ান বলেন, ‘কেন্দ্র থেকে নাটোর জেলা বিএনপির যে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, তা অসংগতিপূর্ণ। এখানে নাটোরের ত্যাগী ও সাহসী নেতাদের স্থান হয়নি। বেশ কিছু বিতর্কিত ব্যক্তিকে পদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আমরা ব্যথিত, আমরা মর্মাহত। আমরা এ কমিটির সংশোধন চাই। নইলে নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব। প্রয়োজনে গণপদত্যাগ করব। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আছে। আশা করি, তিনি আমাদের অভিযোগ তদন্ত করে ত্যাগী নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করে কমিটি সংশোধন করবেন।’

আগের আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক (ভারপ্রাপ্ত) শহিদুল ইসলাম (বাচ্চু) বলেন, ‘আজীবন দলের জন্য কাজ করেছি। দলের জন্য তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছি, মাথায় ১৮টি সেলাইয়ের এখনো ঘা শুকায়নি, এখনো ডান হাতে খেতে পারি না। স্বাক্ষর করতে পারি না, লিখতে পারি না। এই কমিটি দলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান তারেক রহমানের করা হলে আমার কোনো বক্তব্য নেই। আর অন্য কোনো কায়েমি স্বার্থবাদী মহলের মাধ্যমে হলে হতাশার শেষ নেই।’ গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উপযুক্ত নেতাদের নিয়ে তিনি পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানান।

নাটোর জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে গত রোববার।নতুন কমিটির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ এবং সদস্যসচিব আসাদুজ্জামান। ছয় যুগ্ম আহবায়ক হলেন, আবদুল আজিজ, জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) মিজানুর রহমান (ডিউক), মোস্তাফিজুর রহমান (শাহীন), সাইফুল ইসলাম (আফতাব) ও দাউদার মাহমুদ।

সদ্য বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির সদস্য শহিদুল্লাহ সোহেল বলেন, ‘১৭ বছরে যাঁরা বিএনপির মিটিং–মিছিলে আসেননি এবং ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সঙ্গে ব্যবসা–বাণিজ্য করেছেন, তাঁদের অনেককে নব্য ঘোষিত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন রুহুল কুদ্দুস তালুকদারকে (দুলু) নির্বাচনে হারানোর জন্য আওয়ামী লীগকে অর্থ প্রদানকারী আবুল কাসেম, দল থেকে বহিষ্কৃত মিজানুর রহমান (ডিউক) ও অপরিচিত শহিদুল ইসলাম (রাজু)। তাঁদের বাদ দিয়ে ত্যাগী নেতাদের যুক্ত করে কমিটি সংশোধন করতে হবে। আমরা দুলু ভাইয়ের নেতৃত্বে নাটোর জেলা বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছি, থাকব।’

আহ্বায়ক কমিটিতে পদ পাওয়া কয়েকজন নেতাও বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আছে। তাঁদের মধ্যে আছেন যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান ও সাইফুল ইসলাম। তাঁরাও কমিটি সংশোধনের দাবির সাথে একাত্মতা জানিয়েছেন। তাঁরা মনে করেন, নতুন কমিটিতে কিছু ত্যাগী নেতা থাকলেও অনেককে পদ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের বিএনপিতে কোনো অবদান নেই।

যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল।আবুল কাশেম, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য

নতুন কমিটির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান চৌধুরী (বাবুল) পদবঞ্চিত নেতাদের অভিযোগ প্রসঙ্গে সরাসরি মন্তব্য করতে চাননি। তবে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘আমরা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজমুক্ত নাটোর গড়ার জন্য কাজ করব। দলের সব পর্যায়ের নেতা–কর্মীদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার চেষ্টা করব।’

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জেলা বিএনপির নবগঠিত কমিটির সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘যোগ্য বলেই শীর্ষ নেতা আমাদের পদ দিয়েছেন। ২০১৩ সালে দিনাজপুরে দুলু সাহেবের নির্দেশে আমার ওপর হামলা হয়েছিল। চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হয়েছিল। বিষয়টি তারেক রহমানসহ সবাই জানতেন।’ আবুল কাশেম আরও বলেন, ‘আমি “আমরা বিএনপি পরিবার”–এর উপদেষ্টা। ২০১৩ সাল থেকেই পুরো গাজীপুরের দায়িত্বে আছি। এরপরও বলব, যাঁরা আপনাদের কাছে আমার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন, তাঁদের বলবেন, তারেক রহমান সাহেবকে বললেই জানা যাবে কাশেম কে? তাঁকে কেন নাটোরের কমিটিতে রাখা হলো?’

নাটোরে বিএনপির রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার (দুলু), যিনি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য। নতুন কমিটিতে তাঁর নিয়ন্ত্রণ কমেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ সম্পর্কে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি নতুন কমিটি সম্পর্কে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। কারণ, আমার দলের সম্মানিত নেতারা কমিটি ঘোষণা করেছেন। বরাবরের মতো তাঁদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে। শুধু এটুকু বলা যায়, যাঁরা পদ পেয়েছেন, তাঁরাও যেমন যোগ্য, আবার যাঁরা পদবঞ্চিত হয়েছেন, তাঁদের অনেকেরই দলে বড় অবদান রয়েছে। আগামী দিনে হয়তো তাঁদের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ক কম ট র কর ম দ র কম ট র স ল ইসল ম র রহম ন কর ছ ন হয় ছ ল কম ট ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান

২০২১ সালের পর শ্রীলঙ্কায় টেস্ট খেলতে গেছে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল। গল ও কলম্বোতে হবে দুই দলের দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। যা দিয়ে দুই দলই আইসিসি টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। যেহেতু টেস্ট চ‌্যাম্পিয়নশিপের ম‌্যাচ, দুই দলই তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়বে বলাই যায়। মুখোমুখি লড়াইয়ে মাঠে নামার আগে তাদের আগের পরিংস‌্যান কেমন ছিল সেগুলোতে চোখ দেয়া যাক— 

‘‘১৩’’
দুই দল এর আগে ১২টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে। এবারের সিরিজটি হতে যাচ্ছে ১৩তম। আগের ১২ সিরিজে বাংলাদেশ একটিতেও জিততে পারেনি। ড্র করেছে কেবল একটি। বাকি ১১টিতেই জয় শ্রীলঙ্কার। 

‘‘১’’
বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত একবারই শ্রীলঙ্কাকে টেস্টে হারাতে পেরেছে। ২৬ মুখোমুখি লড়াইয়ে ২০টিতে জিতেছে শ্রীলঙ্কা। ড্র হয়েছে ৫ ম‌্যাচ।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশের বিপক্ষে হোম সিরিজে টেস্ট দল ঘোষণা শ্রীলঙ্কার

বাংলাদেশের শ্রীলঙ্কা সফরের পূর্ণাঙ্গ সময়সূচি

‘‘৭৩০/৬’’
বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা দুইবার সাতশর বেশি রান করেছে। দুটিই বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৪ সালে ৭৩০ রান করেছিল ৬ উইকেটে। ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে করেছিল ৭১৩ রান, ৯ উইকেটে। মুখোমুখি লড়াইয়ে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। 

‘‘৬২’’
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে সর্বনিম্ন রান ৬২। বাংলাদেশ ২০০৭ সালে কলম্বোতে এই রানে অলআউট হয়েছিল। 

‘‘ইনিংস ও ২৪৮ রানে জয়’’
শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশকে আট ম‌্যাচে ইনিংস ব‌্যবধানে হারিয়েছে। সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ইনিংস ও ২৪৮ রানে, ২০১৪ সালে মিরপুরে। রানের ব‌্যবধানে সবচেয়ে বড় জয় ৪৬৫ রানের। ২০০৯ সালে চট্টগ্রামে এই জয় পেয়েছিল লঙ্কানরা। 

‘‘১৮১৬’’
দুই দলের ব‌্যাটসম‌্যানদের মধ‌্যে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন কুমার সাঙ্গাকারা। ১৫ ম‌্যাচে ১৮১৬ রান করেছেন ৭টি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে। 

‘‘৩১৯’’
সাঙ্গাকারা তার একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে। ৩১৯ রান করেছিলেন বাঁহাতি ব‌্যাটসম্যান। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ব‌্যক্তিগত রানের ইনিংস। 

‘‘৭’’
সর্বাধিক রান, সর্বোচ্চ রানের সঙ্গে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরিতেও সাঙ্গাকারা এগিয়ে। ৭ সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। জয়াবর্ধনে ও চান্দিমালের রয়েছে ৫টি করে সেঞ্চুরি। 

‘‘০’’
ডাকের রেকর্ডে সবার ওপরে যৌথভাবে রয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবাল। দুজন ৪টি করে ডাক পেয়েছেন। 

‘‘৪৯৯’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ব‌্যক্তিগত রানের ইনিংসটিও সাঙ্গাকারার দখলে। ২০১৪ সালের সফরে ২ ম‌্যাচে ৩ ইনিংসে ৪৯৯ রান করেছিলেন। 

‘‘৮৯’’ 
মুত্তিয়া মুরালিধরন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১১ ম্যাচে ৮৯ উইকেট নিয়েছেন। যা দুই দলের ক্রিকেটারদের সর্বোচ্চ। 

‘‘৮৯/৭’’
রঙ্গনা হেরাথ দুই দলের ক্রিকেটারদের মধ‌্যে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড নিজের কাছে রেখেছেন। ৮৯ রানে ৭ উইকেট পেয়েছিলেন ২০১৩ সালে। 

‘‘১২’’
হেরাথ ও মুরালিধরন ম‌্যাচে ১২টি করে উইকেট পেয়েছেন এক টেস্টে। ২০০৭ সালে ক্যান্ডিতে মুরালিধরণ ৮২ রানে ১২ উইকেট এবং ২০১৩ সালে হেরাথ ১৫৭ রানে ১২ উইকেট পেয়েছিলেন। 

‘‘১১’’
সর্বোচ্চ ১১বার মুরালিধরন ইনিংসে ৫ বা তার বেশি উইকেট পেয়েছেন। 

‘‘২১৯’’
তাইজুল ইসলাম ২০১৮ সালে চট্টগ্রামে ২১৯ রান দিয়েছিলেন ৬৭.৩ ওভার হাত ঘুরিয়ে। যা এক ইনিংসে সবচেয়ে ব‌্যয়বহুল বোলিং ফিগার।

‘‘২৬’’
এক সিরিজে সর্বোচ্চ ২৬ উইকেট পেয়েছেন মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২০০৭ সালে ৩ ম‌্যাচের সিরিজে ২৬ উইকেট নিয়েছিলেন কিংবদন্তি অফস্পিনার।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট পরিসংখ‌্যান