‘আওয়ামী লীগ স্টাইলে লুটপাট করছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নেতারা’
Published: 5th, February 2025 GMT
আওয়ামী লীগ যে স্টাইলে লুটপাট ও দখলদারত্বের রাজনীতি করেছে, সেই একই স্টাইলে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা রাজনীতি করছেন। বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন দলটির পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি দ্রুত বাতিলের দাবি করা হয়েছে।
গত ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর থেকে পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীরা কমিটি বাতিলের দাবিতে করে আসছেন। সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামিমুল হাসান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে যে স্টাইলে রাজনীতি করেছে, হানিফ-আতা (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ এবং তাঁর চাচাতো ভাই পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান) সেই স্টাইলে তাঁদেরই যোগসাজশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য দখল করছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কুতুব উদ্দিন আহমেদ ও সদস্যসচিব প্রকৌশলী জাকির হোসেন সরকার।’
শামিমুল হাসান আরও বলেন, ‘৫ আগস্টের পর রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কুষ্টিয়ায় প্রতিষ্ঠিত লালন বিজ্ঞান ও কলা বিশ্ববিদ্যালয়ে হানিফের স্ত্রীকে বাদ দিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ড পুনর্গঠন হয়েছে। সেখানে কুতুব উদ্দিন ও জাকির হোসেন মালিকানা নিয়েছেন। তদন্ত করে দেখেছি, একটা মিথ্যা কথাও বলছি না।’
সংবাদ সম্মেলনে পদবঞ্চিত নেতারা জানান, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির বিতর্কিত আহ্বায়ক কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর যে কয়েকটি উপজেলার আহ্বায়ক কমিটি করেছে, সেই কমিটিগুলো জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির স্টাইলে ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির আশ্রয় নিয়ে অযোগ্য, দুর্বল ও আওয়ামী সরকারের সঙ্গে আঁতাতকারীদের নিয়ে কমিটি করেছে।
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘চাঁদাবাজি দখলদারত্বের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে এই আহ্বায়ক কমিটি। সন্ত্রাস করছে, মাদকের টাকা খাচ্ছে। আওয়ামী লীগের এজেন্টদের স্থান দেওয়া হচ্ছে। গৌতম চাকীর (আওয়ামী লীগ রাজনীতি করেন) কাছ থেকে প্রতি মাসে জেলা বিএনপির নামে দুই লাখ করে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কারা নিচ্ছে, কে গ্রহণ করছে, সাংবাদিক ভাইয়েরা আছেন, তাঁরা খোঁজ নেন। আজ কারা মসজিদের জায়গা দখল করছে?’
জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজল মাজমাদার বলেন, ‘কুতুব-জাকিরের কথা প্রশাসন শোনে, আমাদের কথা শোনে না। কারণ তাঁরা ক্ষমতাবান। যত দিন জেলা কমিটি পরিবর্তন হবে না, তত দিন আন্দোলন চলবে।’
দাবি আদায়ের লড়াই এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে শিগগিরই নতুন কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পদবঞ্চিত নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বশিরুল আলম চাঁদ, জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মেজবাউর রহমানসহ জেলা ও বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৩০ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নির্বাহী কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় গত ১২ সেপ্টেম্বর এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাতিল করা হয়। ২০১৯ সালের ৮ মে সৈয়দ মেহেদী আহমেদকে সভাপতি ও সোহরাব উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল রেখে জেলা বিএনপির ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগে ২০১২ সালে গঠিত কমিটিতে এই দুজন একই পদে ছিলেন।
২৫ সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়া পৌর বিএনপির সাবেক সভাপতি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন সরকারকে সদস্যসচিব করে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির আংশিক আহ্বায়ক কমিটি করা হয়। এরপর ৪ নভেম্বর ৩১ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
পদবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কমিটিতে যাঁদের রাখা হয়েছে, তাঁদের অনেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন ও অত্যাচারের সময় মাঠে ছিলেন না।
১৭ নভেম্বর কমিটি বাতিলের দাবিতে শহরের এনএস রোডে দলটির একাংশের নেতা-কর্মীরা মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। একই দাবিতে ৬ নভেম্বর বিক্ষোভ সমাবেশ করে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন নেতা-কর্মীরা। ৮ জানুয়ারি দাবি আদায়ে তিন দিনের বিক্ষোভ সমাবেশ ও অনশন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ব ক পদবঞ চ ত ন ত সরক র র র জন ত কর ম র উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।