তরল পদার্থে ভরা বোতল দুটি পাশাপাশি রাখা। রং প্রায় একই; কিন্তু তরল দুটি ভিন্ন। বোতল দুটির ঢাকনা সরিয়ে নাকের কাছে নিতেই একটিতে পেট্রলের গন্ধ পাওয়া গেল। অপরটিতে কোনো গন্ধ নেই। গন্ধহীন বোতলটিতে আসলে খাওয়ার পানি রাখা। পটুয়াখালীর কলাপাড়াবাসী বেঁচে আছেন পেট্রলের মতো হলদেটে এই পানি খেয়ে।
জানা গেল, এই অদ্ভুত রঙের পানি ওঠে গভীর নলকূপ থেকে। যুগের পর যুগ খাওয়া, রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির সব কাজে নিয়মিত এই পানি ব্যবহার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ। পানির এই রঙের সঙ্গে তাঁরা এমনভাবে অভ্যস্ত, যেন পানির এটাই আসল রং। মোস্তাক মিয়া নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা তো বলেই বসলেন, কলাপাড়ার গভীর নলকূপের পানির মতো মিঠাপানি তিনি আর কোথাও খাননি।
তবে কলাপাড়ায় প্রথম যাওয়া যে কেউ এই ‘সুস্বাদু’ পানি দেখেই আঁতকে উঠবেন। মুখে দিতে বা ব্যবহার করতেও দ্বিধায় পড়বেন। এমনই একজন কলাপাড়া উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো.
প্রকৌশলী ইব্রাহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পানির এ অবস্থা নিয়ে আমি চিন্তাভাবনা করছি। শিগগির ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলাপ করে একটি ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমার।’ এই পানিতে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে কি না, সে ব্যাপারে তাঁর পরিষ্কার ধারণা নেই এবং এ বিষয়ে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন।
যুগের পর যুগ খাওয়া, রান্না, গোসলসহ গৃহস্থালির সব কাজে নিয়মিত এই পানি ব্যবহার করছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মানুষ। পানির এই রঙের সঙ্গে তাঁরা এমনভাবে অভ্যস্ত, যেন পানির এটাই আসল রং।কেন পানি রঙিন
গবেষকেরা কলাপাড়ার এই পানিকে খড় রং বা ‘স্ট্র কালার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভূগর্ভের পানির এমন রং হওয়ার পেছনে লিগনিন বা ট্যানিন নামের রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছেন তাঁরা। লিগনিন মূলত উদ্ভিদের কোষপ্রাচীরের একটি জৈব রাসায়নিক উপাদান। এটি লিগনাইট কয়লা বা সাব বিটুমিনাস কয়লা নামক জৈব পদার্থ থেকে উদ্ভূত।
‘বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় ভূগর্ভের পানি রঙিন হওয়ার মূল কারণ: একটি প্রাথমিক গবেষণার ফলাফল’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ ইউনিট, ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আটজন গবেষক গবেষণাটি করেন। ২০২১ সালের গবেষণাটি যুক্তরাজ্যভিত্তিক এনভায়রনমেন্টাল পলিউট্যান্টস অ্যান্ড বায়ো–অ্যাভেইলেবিলিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়। গবেষকেরা পটুয়াখালীর কলাপাড়া, বরগুনা সদর ও বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার পানি নিয়ে গবেষণার কাজটি করেন।
কলাপাড়ার মতো উপকূলীয় এলাকায় ধীরে ধীরে পলি জমা এবং টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে মাটির গভীরে পানির সঙ্গে এসব রাসায়নিক মিশে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে তা নিশ্চিত করে বলতে হলে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও পানি–গবেষক সৈয়দা ফাহলিজা বেগমএই তিন এলাকার গভীর নলকূপের পানিতে লিটারে গড়ে লিগনিন রয়েছে ২ দশমিক ৭২ মিলিগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ৫ মিলিগ্রাম। এর পাশাপাশি প্রতি লিটার পানিতে গড়ে ৩৯ মিলিগ্রাম সালফেট, ৭৭৬ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ১ দশমিক ৬৭ মিলিগ্রাম আয়রন ও শূন্য দশমিক ১২ মিলিগ্রাম ম্যাঙ্গানিজের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। বলা হয়েছে, পানিতে লিগনিনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৯৩০ এবং মোট জৈব কার্বনের পরিমাণ শূন্য দশমিক ৬০৬–এর বেশি হলেই পানি তীব্র খড় রঙের হয়।
গবেষণায় দেখা যায়, ওই তিন এলাকার মধ্যে কলাপাড়ায় ‘খড় রং’-এর তীব্রতা বেশি। এখানে ভূগর্ভের যত বেশি গভীর থেকে পানি তোলা হয়, খড় রঙের পরিমাণ তত বাড়ে। ভূগর্ভের শূন্য থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত, অর্থাৎ অগভীর পানিতে এ রকম রং নেই। ৭২১ ফুট থেকে রঙের পরিমাণ বাড়তে থাকে।
হাজার বছর ধরে ইউরোশিয়ান প্লেট টেকটোনিকের নড়াচড়ার ফলে গাছপালা ও জীবজন্তু ভূগর্ভে চলে যেতে পারে। সেগুলো থেকে লিগনিন ও সাববিটুমিনাস কয়লা ভূগর্ভের পানিতে মিশে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও পানি–গবেষক সৈয়দা ফাহলিজা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলাপাড়ার মতো উপকূলীয় এলাকায় ধীরে ধীরে পলি জমা এবং টেকটোনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে মাটির গভীরে পানির সঙ্গে এসব রাসায়নিক মিশে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তবে তা নিশ্চিত করে বলতে হলে বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।’
গবেষকেরা কলাপাড়ার এই পানিকে খড় রং বা ‘স্ট্র কালার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ভূগর্ভের পানির এমন রং হওয়ার পেছনে লিগনিন বা ট্যানিন নামের রাসায়নিক যৌগকে দায়ী করেছেন তাঁরা।গভীরে লিগনিন, অগভীরে আর্সেনিক
হলদেটে পানি ব্যবহারের প্রভাব জানতে কলাপাড়ার অন্তত ১৫ বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়েছে প্রথম আলোর। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, তাঁরা এই পানি পান করার কারণে কোনো ধরনের সমস্যায় পড়েননি। বাকি ১০ জন কোনো না কোনো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন বলে জানান। চুল পড়া, গ্যাস্ট্রিক, খড় রঙের প্রস্রাব এবং চুলকানির মতো সমস্যা হচ্ছে তাঁদের। তবে সরাসরি পানির কারণেই এ ধরনের সমস্যা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে কেউ নিশ্চিত নন।
চুলকানির কথাই উঠে এসেছে সবচেয়ে বেশি। কলাপাড়ার বেশ কয়েকটি এলাকার বাসিন্দারা এমন সমস্যার কথা বলেছেন। ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদার বলেন, ‘চুলকানি তো লাইগ্গাই রইছে। হ্যার মইদ্যে আবার শুরু হইছে গ্যাস্ট্রিক। ডিপ টিউবলের পানির জন্যই এমন হইছে বইলা মনে হয়। হ্যার লাইগ্গা টিউবলের পানি খাওয়া শুরু করছি।’
আলাউদ্দিনের বাড়ি থেকে ১০০ মিটারের মধ্যেই নিত্য ব্যবহারের জন্য একটি অগভীর নলকূপ বসিয়েছিল একটি বেসরকারি সংস্থা। আশপাশের সবাই এখন সেই পানিই পান ও ব্যবহার করছেন। হাতে নিয়ে দেখা গেল, অগভীর নলকূপের এই পানি স্বাভাবিক পানির মতোই বর্ণহীন। তবে কলাপাড়ায় অগভীর নলকূপের পানিতে আর্সেনিকের উপস্থিতি আছে বলে জানালেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. জিহাদ হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেখানকার সব নলকূপের পানি পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। তবে যেগুলো পরীক্ষা করা হয়েছে, সেগুলোকে লাল ও সবুজ রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে।
চুলকানি তো লাইগ্গাই রইছে। হ্যার মইদ্যে আবার শুরু হইছে গ্যাস্ট্রিক। ডিপ টিউবলের পানির জন্যই এমন হইছে বইলা মনে হয়। হ্যার লাইগ্গা টিউবলের পানি খাওয়া শুরু করছি।ধুলাসার ইউনিয়নের কাউয়ার চরের বাসিন্দা আলাউদ্দিন চৌকিদারগত নভেম্বরে কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে সাড়ে আট হাজারের বেশি মানুষ চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত আড়াই হাজার, মানে প্রায় ৩০ শতাংশ মানুষ সেখানে চুলকানির চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারী। তিনি বলেন, ‘আমি এই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চুলকানি ও অ্যালার্জিজনিত রোগী বেশি পাচ্ছি। এর মূল কারণ কী সে সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে কলাপাড়ার ভূগর্ভস্থ পানির কারণে এটি হতে পারে বলে আমার সন্দেহ।’
আগে উল্লেখিত গবেষণায়ও এই পানির কারণে এসব স্বাস্থ্য সমস্যার কথা উঠে এসেছে। গবেষকেরা কলাপাড়া, বরগুনা সদর ও পাথরঘাটা উপজেলা থেকে ৯টি করে মোট ২৭টি গভীর নলকূপের পানি পরীক্ষা করেন। পাশাপাশি এসব পানি নিয়মিত পান এবং অন্যান্য কাজে ব্যবহার করেন—এমন ৮১ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তবে গবেষণায় বলা হয়, কলাপাড়া ও পাথরঘাটা ছাড়া কেবল বরগুনা সদরের সাক্ষাৎকারদাতাদের বেশির ভাগ অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রিক, উচ্চ রক্তচাপ, মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া, ডায়াবেটিস, লাল রঙের প্রস্রাব, গরম অনুভূতি, লিভার সিরোসিস এবং ঘন ঘন মলত্যাগের চাপের মতো অসুস্থতার কথা জানিয়েছেন।
গবেষণাটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের বরিশাল আঞ্চলিক পানি পরীক্ষাগারের জ্যেষ্ঠ রসায়নবিদ সামসুদ্দিন আহম্মদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পানি পরীক্ষার পাশাপাশি খুবই ছোট পরিসরে স্বাস্থ্যগত প্রভাব দেখার চেষ্টা করেছি। তাই সুনির্দিষ্ট কোনো প্রভাব সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা আমরা পাইনি। এ নিয়ে বড় পরিসরে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে জরিপ করা প্রয়োজন। রাসায়নিক উপাদান (লিগনিন) ঠিক কী কারণে ভূগর্ভের পানির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে, সেটি নিয়েও বড় পরিসরে গবেষণা প্রয়োজন।’
আমি এই হাসপাতালে যোগ দেওয়ার পর থেকেই চুলকানি ও অ্যালার্জিজনিত রোগী বেশি পাচ্ছি। এর মূল কারণ কী সে সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা নেই। তবে কলাপাড়ার ভূগর্ভস্থ পানির কারণে এটি হতে পারে বলে আমার সন্দেহ।স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা শংকর প্রসাদ অধিকারীঅন্যান্য গবেষণা কী বলছে
উদ্ভিদ যখন বৃদ্ধি পায়, তখন এর কোষগুলোতে লিগনিন জমা হয়। কোষগুলোকে শক্ত করা ও উদ্ভিদের কাঠ গঠন করার কাজ করে এই লিগনিন। এ কারণে গাছ শক্ত হয়ে দাঁড়াতে পারে এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতা, যেমন পোকামাকড়ের আক্রমণ, ছত্রাকের সংক্রমণ এবং সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।
দ্য আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন–এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিগনিন মানুষের পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র বা বৃহদন্ত্র কোথাও হজম হয় না। কিন্তু এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়ার বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। বিপাকপ্রক্রিয়া এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে লিগনিন ও ট্যানিন উপকারী হতে পারে। তবে অতিমাত্রায় লিগনিন গ্রহণ করলে হজমের সমস্যা হতে পারে বলেও ১৯৭৮ সালের গবেষণাটিতে উল্লেখ করা হয়।
এর বাইরে কাঠ থেকে আহরিত লিগনিন খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহারের সম্ভাবনা দেখেছেন টেকনিক্যাল রিসার্চ সেন্টার অব ফিনল্যান্ডের গবেষক পিরিটা নিয়েমি। হাসান সদেগিফার ও আর্থার রাগাউসকাস নামের দুজন গবেষক লিগনিনকে অতিবেগুনি রশ্মির প্রতিরোধক হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁরা এটিকে সানস্ক্রিন, প্যাকেজিং ফিল্ম, বার্নিশ, রং, জীবাণু সুরক্ষা থেকে শুরু করে লোশন ও ক্রিমের মতো বাণিজ্যিক পণ্যে ব্যবহারের বিষয়ও উল্লেখ করেছেন।
আবার পারসেম নামে নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান তাদের ‘সেফটি ডেটা শিটে’ লিগনিনকে চোখের জন্য অস্বস্তিদায়ক পদার্থ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করলে শারীরিক অস্বস্তি, অতিমাত্রায় গিলে ফেললে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে সেখানে।
তবে কোনো গবেষণাতেই লিগনিনের ক্ষতি বা উপকারের বিষয়ে সরাসরি কোনো আলোচনা নেই। লিগনিনের বিষয়ে প্রায় সব গবেষকই পরবর্তী সময়ে আরও বিশদ গবেষণার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন।
পানির এই রঙের কারণে এত দিন মানুষের মধ্যে তেমন ভাবান্তর না হলেও কয়েক বছর ধরে কলাপাড়ার সচেতন মানুষেরা পানি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পরিশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাঁরা।ভূগর্ভস্থ পানিতে গাছের জৈব রাসায়নিক উপাদানের সংমিশ্রণ নিয়ে জাপানে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের অধ্যাপক তাজউদ্দিন শিকদার। কলাপাড়ায় পানির বিশেষ ওই রং সম্পর্কে তিনি বলেন, লিগনিন বা ট্যানিনের মতো উদ্ভিদের রাসায়নিক উপাদানগুলো নির্দিষ্ট ফর্মে থাকে না। অন্যান্য পদার্থের সঙ্গে বিক্রিয়া করে একটা সময়ের পর সেটি পরিবর্তিত হয়।
২০১১–১২ সালের দিকে ইন্দোনেশিয়ার পিট ফরেস্টের ভূগর্ভস্থ পানি নিয়ে গবেষণা করার সময় তিনি গাছ থেকে পানিতে মিশে যাওয়ার পদার্থ পরীক্ষা করতে গিয়ে হিউমিক অ্যাসিডের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। তাজউদ্দিন শিকদার বলেন, গাছের বিভিন্ন উপাদান ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে মিশে দীর্ঘমেয়াদি রাসায়নিক পরিবর্তনের ফলে এই হিউমিক অ্যাসিড তৈরি করেছিল। হিউমিক অ্যাসিড মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তিনি আরও বলেন, যেহেতু পটুয়াখালীর ভূগর্ভস্থ পানিতে গাছের রাসায়নিক যৌগ লিগনিন দ্রবীভূত হয়েছে, ফলে সেখানে রাসায়নিক বিক্রিয়া হলে পানিতে কোনো বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে কি না, সে ব্যাপারে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।
বিক্রি বেড়েছে পানি পরিশোধন যন্ত্রের
পানির এই রঙের কারণে এত দিন মানুষের মধ্যে তেমন ভাবান্তর না হলেও কয়েক বছর ধরে কলাপাড়ার সচেতন মানুষেরা পানি নিয়ে উদ্বিগ্ন। খাওয়া ও রান্নার কাজে ব্যবহারের জন্য পানি পরিশোধনের প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তাঁরা।
গত নভেম্বরে কলাপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ফাতেমা হেরেন। কলেজে যোগ দেওয়ার পর তিনি প্রথমেই গভীর নলকূপ বন্ধ করে দিয়ে পানি পরিশোধনযন্ত্র স্থাপন করেছেন বলে জানান। ফাতেমা হেরেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি কলাপাড়ায় এসেই প্রথম যে খটকাটা লাগে, সেটি পানি নিয়ে। পানির এমন রং দেখে প্রথম দিকে সেটি আমি ব্যবহারই করিনি। বোতলজাত পানি কেনা শুরু করি, পরে পানি পরিশোধনের যন্ত্র বসিয়েছি।’
কয়েক বছর আগেও কলাপাড়ায় পানি পরিশোধনযন্ত্রের তেমন চাহিদা ছিল না। তবে পাঁচ–ছয় বছর ধরে মানুষ এই যন্ত্র কিনছেন। বর্তমানে কলাপাড়া পৌরসভার সাত–আটটি দোকানে পানি পরিশোধনযন্ত্র বিক্রি হচ্ছে। তবে আনাস করপোরেশন নামের একটি দোকানের বিক্রি সবচেয়ে বেশি। কলাপাড়া প্রেসক্লাব ভবনের নিচতলার এই দোকান দুই বছর আগে চালু হয়। দুই বছরে দোকানটি থেকে তিন শতাধিক পানি পরিশোধনযন্ত্র বিক্রি হয়েছে বলে জানান দোকানমালিক জাকির হোসেন।
অধ্যাপক ফাতেমা হেরেন বলেন, পানির বিষয় নিয়ে সব মহলের সচেতন হওয়া দরকার। কেননা, পানির এই রং তো স্বাভাবিক না। এটার একটা সুরাহা না করে দিনের পর দিন এই পানি খাওয়া ও ব্যবহার করা উচিত হবে না। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
আমি কলাপাড়ায় এসেই প্রথম যে খটকাটা লাগে, সেটি পানি নিয়ে। পানির এমন রং দেখে প্রথম দিকে সেটি আমি ব্যবহারই করিনি। বোতলজাত পানি কেনা শুরু করি, পরে পানি পরিশোধনের যন্ত্র বসিয়েছি।কলাপাড়া সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ ফাতেমা হেরেনউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব স থ য ও পর ব ব যবহ র করছ ন প ন র এমন র প ন র এই র চ হ ন ত কর ব যবহ র র কল প ড় য় কল প ড় র র পর ম ণ র জন য পর ক ষ এই প ন পদ র থ কর ছ ন উপজ ল বরগ ন সরক র দশম ক সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
রাখাইনে করিডোর কি রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আশার আলো দেখাবে
রোহিঙ্গা সংকট ঘিরে নতুন আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। এর সূত্রপাত হয় সম্প্রতি মিয়ানমার সীমান্তে হিউম্যানিটারিয়ান বা মানবিক করিডর গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টার মন্তব্যের মাধ্যমে, যেখানে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এ বিষয়ে একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত দুই মাসে রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে ক্রমাগত নানা আলোচনা ও সমালোচনা চলমান। রোহিঙ্গা সংকটকে ঘিরে সাম্প্রতিক সময়ে প্রথম ইতিবাচক আলোচনা শুরু হয় মার্চ মাসে, যখন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশ ভ্রমণ করেন এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরে পবিত্র রোজার মাসে তাদের সঙ্গে ইফতার করেন।
এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তাদের মেহমান উল্লেখ করে বলেন, তিনি প্রত্যাশা করেন আগামী রোজা রোহিঙ্গারা নিজ দেশে করতে পারবেন।
পরবর্তী সময়ে ষষ্ঠ বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়ে একটি পার্শ্ব আলোচনার পর মিয়ানমারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা প্রাথমিকভাবে ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে নীতিগতভাবে সম্মত।
এ নিয়েও জনসাধারণের মধ্যে একধরনের ধোঁয়াশা কাজ করে। কেননা, আরাকান আর্মিকে উপেক্ষা করে এ ধরনের মন্তব্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে খুব বেশি আশার আলো দেখাবে না। এর বেশ কিছুদিন পরে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক সময়ে আরাকান আর্মি ও মিয়ানমারের সঙ্গে যে সহিংস দ্বন্দ্ব চলমান, সে প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এখনই সম্ভব নয়।
এই চলমান আলোচনায় নতুন বিতর্ক তৈরি হয় রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার আলোচনার মাধ্যমে, যদিও এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেছেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে তাঁদের এখনো কোনো আলোচনা হয়নি। এমন নানামুখী আলোচনায় জনমনে বিভ্রান্তি আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাখাইনে মানবিক করিডর গড়ে তোলার প্রধান যুক্তি হলো, এতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে অবস্থানরত জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে ত্রাণ এবং অন্যান্য প্রয়োজনের সামগ্রী পাঠানো সম্ভব হবে।
মানবিক করিডর ও রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আলোচনার আগে একটু দেখে নেওয়া যাক মানবিক করিডর বলতে আসলে কী বোঝায়।
জাতিসংঘের ব্যাখ্যা অনুযায়ী সশস্ত্র সংঘাতপূর্ণ এলাকায় সংঘাত বা যুদ্ধ পরিস্থিতির সাময়িক বিরতির জন্য অনেক ধরনের পন্থা অবলম্বন করা হয়, তার মধ্যে একটি হলো মানবিক করিডরের প্রস্তাব।
এই মানবিক করিডরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য এমন একটি জায়গা নির্ধারণ করা হয়, যেখানে সশস্ত্র সংঘাত যেন না ঘটে। সে বিষয়ে দুই পক্ষ জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একমত হয়। মানবিক করিডরের পরবর্তী ধাপে সেই ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের অধিবাসীদের একটি নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় অথবা সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সেবার ব্যবস্থা হয়।
এ ধরনের মানবিক করিডরের উদাহরণ আমরা ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে সংঘাতপূর্ণ বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপটে দেখতে পাই। এখানে সামগ্রিক কর্মকাণ্ড জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হবে, সেটাই প্রত্যাশা করা হয়। বিভিন্ন দেশের প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, জাতিসংঘের ত্রাণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান রেডক্রস এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলির মধ্যে অন্যতম হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে ইহুদি শিশুদের যুক্তরাজ্যে স্থানান্তর, নব্বইয়ের দশকে সারায়েভো সংকট, ২০১৮ সালে সিরিয়ার জনগোষ্ঠীকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা এবং সর্বশেষ দেখতে পাই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রে।
যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা।রাখাইনকে ঘিরে মানবিক করিডর গড়ে তোলার এই নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপটে গবেষক, রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন, আশঙ্কা ও দ্বিধা তৈরি হয়েছে।
তবে শঙ্কার পাশাপাশি কোনো কোনো গবেষক মনে করছেন, মানবিক করিডরের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলার চলমান সংলাপ আরও জোরদার হবে, যা ভবিষ্যতে এই সংকট মোকাবিলায়, বিশেষ করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তবে এই ইতিবাচক প্রত্যাশা ছাপিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনকে কেন্দ্র করে যে দ্বিধা রয়েছে, সেটি হলো এই মানবিক করিডরের মাধ্যমে ভবিষ্যতে কি রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত হবে, নাকি আরও বিলম্বিত হবে, নাকি আরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ পাবে।
ইতিমধ্যে আমরা দেখেছি, এক লাখের ওপরে রোহিঙ্গা শরণার্থী আবারও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলা কক্সবাজারে প্রবেশ করতে বাধ্য হয়েছে। মানবিক কারণে বাংলাদেশ এই দায় যেমন এড়িয়ে যেতে পারছে না, তেমনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ব্যবস্থাপনার ভারও বহন করতেও হিমশিম খাচ্ছে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ তাদের অন্যান্য সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মানবিক করিডর কতটা বাস্তবসম্মত হবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কেননা, কোনো বিস্তারিত দিকনির্দেশনা আমাদের সামনে নেই।
অতীতের বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপট থেকে আমরা দেখতে পাই, মানবিক করিডরের অন্যতম প্রধান ব্যবহার হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ জাতিগোষ্ঠীকে সংঘাতপূর্ণ স্থান থেকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা। যেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে চলমান অনুপ্রবেশ কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না, সেখানে মানবিক করিডরের মাধ্যমে আরও বৃহৎ অংশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে স্থানান্তর করার প্রক্রিয়ায় শুরু অস্বাভাবিক নয়।
এ প্রেক্ষাপটে যদি আরও রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিতে হয়, তাহলে তাদের দায়দায়িত্ব নিতে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত, সেটা ভেবে দেখা জরুরি। কেননা, এখনই এক মিলিয়নের ওপর রোহিঙ্গা বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এর সঙ্গে রয়েছে তাদের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের অর্থনৈতিক সাহায্য কমিয়ে দেওয়া, যা বাংলাদেশের জন্য এক বড় অর্থনৈতিক বোঝা।
এর বাইরে আরেকটি চিন্তার জায়গা হলো সীমান্ত এলাকা বাংলাদেশ কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, সেটি। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি দেখলে বোঝা যায়, সীমান্ত প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টা খুব যে সুখকর, সেটি বলা যাবে না।
এ ছাড়া এই অঞ্চল বিভিন্ন কারণে মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, সহিংসতা ও অন্যান্য নিরাপত্তাঝুঁকির জন্য একটি অন্যতম হটস্পট, যা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের নানাভাবে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয় কি না, সেটা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। মানবিক করিডরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কীভাবে লাভবান হতে পারে, সে বিষয়েও যথাযথ পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে এবং নিজেদের স্বার্থেই আমাদের স্বচ্ছ থাকতে হবে।
এর সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোসহ অন্য অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ করারও বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেননা, এর পরবর্তী পরিণতি ও ব্যবস্থাপনার দায়দায়িত্ব ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকারকেই গ্রহণ ও বহন করতে হবে। যদিও জাতিসংঘের মানবিক করিডরের প্রস্তাব বেশ পুরোনো, কিন্তু তড়িঘড়ি করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হিতে বিপরীত হতে পারে। শরণার্থী বিষয়ে একটি টেকসই রূপরেখা এবং পরিকল্পনানীতি না থাকার কারণে সরকারকে অ্যাডহক প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যাজনক হয়।
এসব বিবেচনায় নিয়ে একজন গবেষক হিসেবে আমি বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাবিষয়ক একটি জাতীয় রোডম্যাপ বা রূপরেখা এবং শরণার্থীবিষয়ক নীতি প্রণয়ন করার পক্ষে কথা বলে আসছি। আমাদের সে ধরনের কোনো দৃশ্যমান পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি বিগত সময়ে ছিল না। বিশেষ করে যদি প্রত্যাবাসন ব্যর্থ হয় এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবিত মানবিক করিডর আমাদের প্রত্যাশামতো কাজ না করে, তাহলে বিকল্প কী হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি আমাদের থাকা উচিত। সেটি না হলে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে এবং তাদের নিজ দেশে স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন একটি ‘মিথ’ হিসেবে থেকে যাবে, যা আমাদের ও রোহিঙ্গা উভয়ের জন্যই হতাশার একটি বিষয় হবে।
● বুলবুল সিদ্দিকী সহযোগী অধ্যাপক, রাজনীতি ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়