চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে চোটের হিড়িক
Published: 8th, February 2025 GMT
একের পর এক তারকা ছিটকে পড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে। আসরের অন্যতম হট ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জনের স্কোয়াড থেকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সসহ চারজন ছিটকে গেছেন।
গতকাল পিসিবি নিশ্চিত করেছে, পাকিস্তানের ইনফর্ম ওপেনার সাইম আইয়ুবকে পাওয়া যাবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা বোলার অ্যানরিখ নরখিয়া আইসিসি ইভেন্টের আগে চোটে পড়ার রীতি ধরে রেখেছেন। ভারতের বোলিংয়ের মূল ভরসা জাসপ্রিত বুমরাহকে পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। অথচ আসরের এখনও ১১ দিন বাকি। সামনে আরও কতজন যে ছিটকে পড়েন, সেটাই শঙ্কা।
অস্ট্রেলিয়ার দুই তারকা পেসার কামিন্স ও হ্যাজেলউড চোটে পড়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠতে পারেননি কামিন্স। এ জন্য শ্রীলঙ্কা সফরও মিস করেছেন তিনি। সেখানে তাঁর বদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্মিথ।
হ্যাজেলউডের নিতম্বে অস্বস্তির পাশাপাশি পায়ের মাংসপেশিতেও টান লেগেছিল। তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার মতো অবস্থায় নেই। আর পিঠের চোটের কারণে সরে গিয়েছিলেন মিচেল মার্শ। তাদের তিনজনকেই কয়েক সপ্তাহের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। আর স্কোয়াডে থাকা আরেক পেস অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস গত বৃহস্পতিবার আচমকা ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাড়তি মনোযোগ দিতেই নাকি তাঁর এমন সিদ্ধান্ত।
পাকিস্তানের ইনফর্ম ওপেনার সাইম আইয়ুব গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চোটে পড়েছিলেন। গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠতে তাঁর নাকি আরও পাঁচ সপ্তাহ লাগবে। ৯ মার্চ শেষ হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো বটেই, এর পর নিউজিল্যান্ড সফরেও তাঁকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহর খেলা নিয়েই ধোঁয়াশা বাড়ছে। গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পিঠের পুরোনো চোট থেকে এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাই আরও কিছু দিন জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ) থাকতে হবে তারকা এ পেসারকে। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এনসিএতে বুমরাহর চোটের স্ক্যান হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এর পরই তাঁর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা