একের পর এক তারকা ছিটকে পড়ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে। আসরের অন্যতম হট ফেভারিট অস্ট্রেলিয়ার ১৫ জনের স্কোয়াড থেকে অধিনায়ক প্যাট কামিন্সসহ চারজন ছিটকে গেছেন। 

গতকাল পিসিবি নিশ্চিত করেছে, পাকিস্তানের ইনফর্ম ওপেনার সাইম আইয়ুবকে পাওয়া যাবে না। দক্ষিণ আফ্রিকার অন্যতম সেরা বোলার অ্যানরিখ নরখিয়া আইসিসি ইভেন্টের আগে চোটে পড়ার রীতি ধরে রেখেছেন। ভারতের বোলিংয়ের মূল ভরসা জাসপ্রিত বুমরাহকে পাওয়া নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। অথচ আসরের এখনও ১১ দিন বাকি। সামনে আরও কতজন যে ছিটকে পড়েন, সেটাই শঙ্কা।

অস্ট্রেলিয়ার দুই তারকা পেসার কামিন্স ও হ্যাজেলউড চোটে পড়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে। গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠতে পারেননি কামিন্স। এ জন্য শ্রীলঙ্কা সফরও মিস করেছেন তিনি। সেখানে তাঁর বদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্মিথ। 

হ্যাজেলউডের নিতম্বে অস্বস্তির পাশাপাশি পায়ের মাংসপেশিতেও টান লেগেছিল। তিনি কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠলেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার মতো অবস্থায় নেই। আর পিঠের চোটের কারণে সরে গিয়েছিলেন মিচেল মার্শ। তাদের তিনজনকেই কয়েক সপ্তাহের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে বলে জানিয়েছেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। আর স্কোয়াডে থাকা আরেক পেস অলরাউন্ডার মার্কাস স্টয়নিস গত বৃহস্পতিবার আচমকা ওয়ানডে থেকে অবসর নিয়েছেন। কুড়ি ওভারের ক্রিকেটে বাড়তি মনোযোগ দিতেই নাকি তাঁর এমন সিদ্ধান্ত।

পাকিস্তানের ইনফর্ম ওপেনার সাইম আইয়ুব গত জানুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে চোটে পড়েছিলেন। গোড়ালির চোট থেকে সেরে উঠতে তাঁর নাকি আরও পাঁচ সপ্তাহ লাগবে। ৯ মার্চ শেষ হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তো বটেই, এর পর নিউজিল্যান্ড সফরেও তাঁকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। 

ভারতের জাসপ্রিত বুমরাহর খেলা নিয়েই ধোঁয়াশা বাড়ছে। গতকাল ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, পিঠের পুরোনো চোট থেকে এখনও সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি তিনি। তাই আরও কিছু দিন জাতীয় ক্রিকেট একাডেমিতে (এনসিএ) থাকতে হবে তারকা এ পেসারকে। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তাঁকে পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এনসিএতে বুমরাহর চোটের স্ক্যান হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যাবে। এর পরই তাঁর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলা নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ

১৮৮৬ সালের ১ মেÑএকটি দিন, একটি দাবি, আর হাজারো শ্রমিকের আত্মত্যাগের মাধ্যমে ইতিহাসে রক্তাক্ত দাগ কেটে দিয়েছিল যে মুহূর্ত, তা আজ বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ হিসেবে পালিত হয়। তখনকার দাবিটি ছিল স্রেফ ৮ ঘণ্টা শ্রমের অধিকার। কিন্তু আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে শ্রমিকের দাবি শুধু সময়
নয়Ñমর্যাদা, সুরক্ষা ও ন্যায্যতার প্রশ্নও।

এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য “শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এদেশ নতুন করে”Ñএ যেন সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। উন্নয়নশীল বাংলাদেশের বাস্তবতায় এই বার্তা কেবল প্রাসঙ্গিক নয়, বরং তা রাষ্ট্র, প্রতিষ্ঠান ও সমাজের জন্য এক যৌথ দিকনির্দেশনা।

বাংলাদেশের শ্রমচিত্র ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত শ্রমনির্ভর। তৈরি পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখ, কৃষি ও নির্মাণ খাতে আরও কয়েক কোটি মানুষ নিয়োজিত। পরিসংখ্যান বলছে, দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে শ্রমনির্ভর খাত থেকে। কিন্তু যাঁরা এই অর্থনীতির ইঞ্জিন হিসেবে কাজ করছেন, সেই শ্রমিকরা কি পেয়েছেন তাদের প্রাপ্য অধিকার ও মর্যাদা?

দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও বহু শ্রমিক পান না ন্যূনতম মজুরি, কর্মস্থলে নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সেবা কিংবা ছুটি সংক্রান্ত মৌলিক সুবিধা। নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি আরও জটিলÑযত্রতত্র হয়রানি, মাতৃত্বকালীন সুবিধার অভাব, কিংবা নারীবান্ধব কর্মপরিবেশ গড়ে না তোলার ফলে এই খাতেও স্থিতিশীলতা আসছে না।

মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক: দ্বন্দ্ব নয়, দরকার সহমর্মিতা

এক সময় শ্রমিক-মালিক সম্পর্ক মানেই ছিল দ্বন্দ্ব, ধর্মঘট ও হুমকি। তবে বর্তমান বৈশ্বিক বাস্তবতা বলছেÑসহযোগিতাই টেকসই উৎপাদনের চাবিকাঠি। মালিকপক্ষ যখন শ্রমিককে কেবল “ব্যয়” হিসেবে না দেখে “সম্পদ” হিসেবে  বিবেচনা করেন, তখন প্রতিষ্ঠান লাভবান হয়। একইভাবে শ্রমিকও যদি বুঝেন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন মানে তার কর্মস্থলের স্থায়িত্বÑতাহলে দুপক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের
ভিত্তি গড়ে ওঠে।

এই বিশ্বাস গঠনের জন্য প্রয়োজন তিনটি স্তম্ভ: 

নীতিগত স্বচ্ছতা Ñ ন্যায্য মজুরি, নির্ধারিত কর্মঘণ্টা ও চুক্তিভিত্তিক নিরাপত্তা দায়িত্বশীল মালিকপক্ষ Ñ কর্মপরিবেশ, স্বাস্থ্যসেবা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিতে উদ্যোগ সচেতন শ্রমিকশ্রেণি Ñ অধিকার আদায়ের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মানসিকতা

নীতি ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ

বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ ও সংশোধিত ২০১৮ সংস্করণ অনুযায়ী শ্রমিকের অধিকার স্বীকৃত হলেও বাস্তবায়নের জায়গায় ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে  অনানুষ্ঠানিক খাতে (যেমন কৃষি, গৃহপরিচারিকা, গিগ-ওয়ার্কার) শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি এখনও প্রায় উপেক্ষিত।

এছাড়া, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা বীমা, এবং পুনঃপ্রশিক্ষণের ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার হওয়া জরুরি। সরকার শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন করলেও তা অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এই প্রেক্ষাপটে ‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে’ দেশ গড়ার বার্তাটি যেন শুধুই স্লোগানে সীমাবদ্ধ না থাকে। বরং এটি হোক রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আর্থিক বিনিয়োগ ও মানবিক বিবেচনার এক বাস্তব প্ল্যাটফর্ম।
প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ ও নতুন শ্রম বাস্তবতা

চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে শ্রমবাজার দ্রুত বদলে যাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, অটোমেশন ও গিগ-ইকোনমি অনেক চাকরি বিলুপ্ত করছে, আবার নতুন দক্ষতা চাচ্ছে। বাংলাদেশ যদি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চায়, তাহলে  শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ, পুনঃস্কিলিং এবং ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে।

এখানে মালিক ও রাষ্ট্র উভয়ের উচিত হবে, শ্রমিককে প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে বিনিয়োগ করা, কারণ দক্ষ শ্রমিক ছাড়া কোনো শিল্পই টিকে থাকে না।

মে দিবস: উৎসব নয়, দায়বদ্ধতার প্রতীক

মে দিবস কেবল লাল পতাকা হাতে শোভাযাত্রার দিন নয়, এটি আমাদের মানবিক চেতনার প্রতিফলন। যে শ্রমিক ঘাম ঝরিয়ে ভবন গড়ে, কৃষি জমি চষে, রপ্তানি পণ্য তৈরি করেÑতার জন্য আমাদের উচিত মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করা।

এবছর, আসুন আমরা সবাই রাষ্ট্র, মালিকপক্ষ ও শ্রমিকÑএকটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও  শীদারিত্বভিত্তিক সমাজ গঠনের পথে এগিয়ে যাই। শ্রমিকের হাতে গড়া এই বাংলাদেশ হোক তার জন্যই গর্বের জায়গা। 


লেখক পরিচিতি:

মীযানুর রহমান
সাংবাদিক ও সমাজ বিশ্লেষক
মোবাইলঃ ০১৭৫৪১০৯০৭২
যোগাযোগ: : [email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • র‍্যাংকিংয়ে মিরাজ-জাকেরদের অগ্রগতি
  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস