প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার দৌড় থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছে চেলসি। এবার এফএ কাপ থেকেও বিদায় নিতে হলো এনজো মারেস্কার দলকে। চতুর্থ রাউন্ডের লড়াইয়ে ব্রাইটনের বিপক্ষে ২-১ গোলে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের দলটি।
আমেরিকান এক্সপ্রেস স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরুতেই আত্মঘাতী গোল হজম করে ব্রাইটন। মাত্র ৫ মিনিটে গোলরক্ষক বার্ট ভেরব্রুগেন ভুল করে কোল পালমারের ক্রস থেকে আসা বল নিজের জালে জড়িয়ে ফেলেন, এগিয়ে যায় চেলসি। তবে স্বাগতিকরা দ্রুতই ম্যাচে ফেরে। মাত্র ৭ মিনিট পর জর্জিনিও রুটারের দারুণ হেডে ১-১ সমতা আনে ব্রাইটন।
বিরতির আগেই চেলসির এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছিল, তবে কোল পালমার সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ব্যর্থ হন। দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্রাইটন। ৫৭ মিনিটে জাপানি উইঙ্গার কাওরু মিতোমা চেলসির গোলরক্ষক রবার্ট সানচেজকে পরাস্ত করে গোল করলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ব্রাইটন। শেষ পর্যন্ত এই ব্যবধান ধরে রেখে স্বাগতিকরা জায়গা করে নেয় এফএ কাপের পঞ্চম রাউন্ডে।
গত ডিসেম্বর থেকে কোনো প্রতিযোগিতায় অ্যাওয়ে ম্যাচ জিততে পারেনি চেলসি। কোচ এনজো মারেস্কার প্রথম মৌসুমে ইউরোপা কনফারেন্স লিগই এখন একমাত্র সম্ভাব্য শিরোপার আশা হয়ে রয়েছে তাদের জন্য। ব্রাইটনের জয়ের পর দলের উইঙ্গার তারিক ল্যাম্পটি বলেন, ‘এটা দারুণ যে সবাই একসঙ্গে লড়াই করেছে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে খেলতে পেরেছি এবং পরিস্থিতির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছি।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চ লস এফএ ক প ব র ইটন
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল