পীরগঞ্জে মা–মেয়ে হত্যায় গ্রেপ্তার আসামির বাড়ি পুড়িয়ে দিল বিক্ষুব্ধ জনতা
Published: 9th, February 2025 GMT
রংপুরের পীরগঞ্জে মা ও মেয়েকে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার আতিকুল ইসলামের বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। আজ রোববার দুপুরে উপজেলার চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় লোকজন আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বড় বদনাপাড়া গ্রামে আতিকুলের বাড়িতে যান। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় তাঁরা আতিকুলের দ্রুত বিচার করে ফাঁসির দাবি জানান।
খবর পেয়ে উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বড় বদনাপাড়া গ্রামে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। সেখানে আসে পীরগঞ্জ থানা পুলিশও। কিন্তু ততক্ষণে আতিকুল ইসলামের তিনটি টিনের ছাউনি ও বেড়া দেওয়া বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ওই বাড়িতে তিনি একাই থাকতেন।
থানা–পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেলোয়ারা বেগম নামের এক নারী ও তাঁর চার বছরের মেয়ে সায়মা বেগম হত্যায় আতিকুল ইসলাম জড়িত। দেলোয়ারা বেগমকে হত্যার অভিযোগে আতিকুলকে গতকাল বিকেলে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটার দূরে করতোয়া নদীর ধারে কাদামাটি চাপা দিয়ে রাখা দেলোয়ারার বিচ্ছিন্ন মাথা উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আতিকুল স্বীকার করেন, মাস দেড়েক আগে সায়মাকে হত্যা করে লাশ বস্তায় ভরে তাঁর বাড়ির পাশে পুঁতে রেখেছেন। আজ সকালে সেখান থেকে শিশুটির পচে যাওয়া লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এ ফারুক বলেন, মা-মেয়েকে হত্যার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা গ্রেপ্তার আতিকুলের বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে। এলাকার লোকজনকে শান্ত থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আছে।
গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নের বড় বদনাপাড়া গ্রামের পাশে মরিচখেত থেকে মাথাহীন অজ্ঞাতনামা হিসেবে দেলোয়ারা বেগমের লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ। পরে পুলিশ নিশ্চিত হয়, হত্যার শিকার ওই নারীর নাম দেলোয়ারা বেগম। তিনি নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পশ্চিম গোলমুন্ডা গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার গুমানিগঞ্জ গ্রামে। পরে স্বামীর সঙ্গে দেলোয়ারার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। আতিকুল ও দেলোয়ারা গ্রামগঞ্জে গানবাজনা করে বেড়াতেন।
আরও পড়ুনপীরগঞ্জে মায়ের মাথা উদ্ধারের পর পাওয়া গেল দেড় মাস আগে নিখোঁজ মেয়ের লাশ৩ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ক ষ ব ধ জনত ল ইসল ম প রগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সৈয়দপুরে লাশ সামনে রেখে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন, মানসিক আঘাতে মৃত্যুর অভিযোগ
নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলায় এক ব্যক্তির লাশ সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন করেছে পরিবার। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলার বাঙালীপুর ইউনিয়নের আমজাদের মোড়ে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
মারা যাওয়া ব্যক্তির পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, জমি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষ বসতবাড়িতে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি মোসলেম সরদারের (৬০) বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এ কারণে মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে তিনি হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছেন।
অন্যদিকে মামলার বাদী বলেছেন, মোসলেম সরদারের স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এটিকে ‘হত্যাকাণ্ড’ বলা বড় মিথ্যাচার। উল্টো বসতঘর পুড়ে সর্বস্ব হারিয়ে তাঁরা নিঃস্ব।
বাঙালীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মণপুর জোতদারপাড়ার মোসলেম সরদারের পরিবার এ সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে বক্তব্য দেন সৈয়দপুর জেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক শাহিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা আবদুল্লাহ আল মামুন, ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি আলমগীর হোসেন, নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই তসলিম সরদার, ভাতিজা বাবলু সরদার, নাতি মেহেদী হাসান, গৃহবধূ মৌসুমী ও স্থানীয় জহুরুল শেখ।
সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন থেকে এলাকার মোসলেম সরদারের পরিবার ও বাছান জোতদার পরিবারের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। গত ১৪ ও ১৫ মে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতারা বিষয়টি নিয়ে মীমাংসায় বসেন। উভয় পক্ষের কাগজপত্র দেখে একটা সমাধানে আসেন তাঁরা। কিন্তু ১৮ মে মৃত বাছান জোতদারের ছেলে আবদুল আজিজ ও তাঁর ভাইয়ের বসতবাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। এতে আবদুল আজিজ বাদী হয়ে মোসলেম সরদারসহ তাঁর পরিবারের ১৩ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরও ৭ জনকে আসামি করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযোগটি একতরফা তদন্ত করে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। এতে মোসলেম সরদার মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। এমন অবস্থায় তিনি তিন দিন আগে হার্ট অ্যাটাক করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং গতকাল সকালে মারা যান।
এ বিষয়ে আবদুল আজিজ জোতদার মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘মামলা সত্য না মিথ্যা, তা তদন্তেই প্রমাণিত হবে। আর কারও স্বাভাবিক মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলাই তো বড় মিথ্যাচার। আমাদের দুই পরিবারের ১০ জনকে পেট্রল ছিটিয়ে বাড়িতে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে মারার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। আল্লাহর রহমতে আমরা বেঁচে গেছি। এতে সর্বস্ব হারিয়ে আমরা নিঃস্ব। এর সঠিক বিচার চাই।’