বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৩০৮ জন গ্রেপ্তার
Published: 9th, February 2025 GMT
যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর পর গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী থেকে ২৭৪ জন এবং গাজীপুর মহানগর ও জেলা থেকে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা এবং মহানগরের আট থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা ৬৫ জনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.
অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, এ ক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী, তারাই গ্রেপ্তার হবে।’
এর আগে শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যৌথ বাহিনী দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরের শিকার হন ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ওই রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের মারধর করা হয়।
বিভিন্ন জেলায় অভিযান
অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। শনিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের পুরোনো ও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজশাহীতে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন তানোরের কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আবদুল হামিদ, একই উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন যুবলীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি সজীব আলী, মোহনপুরের রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একটি ওয়ার্ডের সভাপতি আতিকুর রহমান এবং পুঠিয়ার আমঘোষপাড়ার আওয়ামী লীগ কর্মী জাহিরুল ইসলাম।
রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।
নোয়াখালীর হাতিয়ায় শনিবার যৌথ বাহিনী চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন আজাদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম ওরফে রাকছান, আবদুল মাজেদ ওরফে পলাশ ও আবদুল জাহের।
দেশব্যাপী অভিযান ঘোষণার পর শনিবার রাতে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সোহাগ মিয়া, মো. সেলিম, আবদুর রহিম ও মো. আজিজুল। সোহাগ বড়পিলাক ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি।
যৌথ বাহিনীর অভিযানে রাঙামাটি শহর থেকে গতকাল তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রাঙামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুনসুর আলী, সদর উপজেলার শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহাজালাল, সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলা মিয়া।
বগুড়ার শেরপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি নামদার হোসেন এবং মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার অভিযোগ আছে দুজনের বিরুদ্ধে। তদন্তেও তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া ও নোয়াখালী এবং প্রতিনিধি, গাজীপুর, রাজশাহী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও শেরপুর]
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন আওয় ম উপজ ল গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
দলীয় প্রতিপক্ষের হামলায় আহত পাঁচ বিএনপিকর্মী
নোয়াখালীর হাতিয়ায় হামলায় আহত হয়েছেন বিএনপির পাঁচ কর্মী। তাদের মধ্যে চারজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার তমরদ্দি বাজারে এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ জন্য একই দলের অন্য নেতার অনুসারীদের দায়ী করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আহত ব্যক্তিরা হলেন– সোহেল উদ্দিন (৩০), রুবেল (২৫), মো. রনি (২৬), এরশাদ (৩৫) ও পায়েল (২৫)। তাদের বাড়ি তমরদ্দি ইউনিয়নের আঠারোবেকী গ্রামে। আহত সবাই ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের কর্মী-সমর্থক।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে তমরদ্দি বাজারের একটি চা দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলেন কয়েকজন। এ সময় কয়েকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে পাঁচজন আহত হন। তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শিহাব উদ্দিনের ভাষ্য, সবার শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর চিহ্ন রয়েছে। কিছু আঘাত অনেক গভীর। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে অনেকের শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ জন্য চারজনকে রাতেই হাতিয়ার বাইরে চিকিৎসার পরামর্শ দেন।
ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি তানভীর হায়দারের ভাষ্য, মঙ্গলবার ইউনিয়ন বিএনপির ঈদ পুনর্মিলনীতে আসার পথে হামলায় তাঁর কয়েকজন কর্মী আহত হন। এ ঘটনায় দুটি মামলা হলেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। ওই আসামিরাই বৃহস্পতিবারের হামলায় জড়িত। তারা সবাই উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের লোক।
তবে আলমগীর কবিরের দাবি, হামলায় তাঁর কোনো নেতাকর্মী জড়িত ছিলেন না। এমন অভিযোগ সত্য নয়।
হাতিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খোরশেদ আলম বলেন, বিএনপি নেতা তানভীর হায়দার ও আলমগীর কবিরের লোকজনের সংঘর্ষে পাঁচজন আহত হয়েছেন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তাদের বিরোধ অনেক পুরোনো। আগের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।