যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর পর গত শনিবার রাত থেকে গতকাল রোববার বিকেল পর্যন্ত ১ হাজার ৩০৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী থেকে ২৭৪ জন এবং গাজীপুর মহানগর ও জেলা থেকে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ বলছে, গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ ও দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। গাজীপুর জেলার পাঁচটি থানা এবং মহানগরের আট থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা ৬৫ জনই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। গাজীপুরের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো.

যাবের সাদেক প্রথম আলোকে বলেন, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন।

অভিযান সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে, এ ক্ষেত্রে যারা আইন অমান্য করে, দুষ্কৃতকারী ও সন্ত্রাসী, তারাই গ্রেপ্তার হবে।’

এর আগে শনিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, যৌথ বাহিনী দেশজুড়ে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরু করেছে। গাজীপুরে ছাত্র-জনতার ওপর সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সমন্বয়ে এক সভায় এই অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।

গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকের বাড়িতে মারধরের শিকার হন ১৫-১৬ জন শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীরা ওই রাতে ডাকাতির খবর পেয়ে তা প্রতিহত করতে সেখানে গিয়েছিলেন। তখন তাঁদের মারধর করা হয়।

বিভিন্ন জেলায় অভিযান

অভিযান শুরুর পর বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়। শনিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল বিকেল পর্যন্ত কুষ্টিয়ার বিভিন্ন স্থানে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফয়সাল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আটক ব্যক্তিদের পুরোনো ও নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

রাজশাহীতে চারজনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাঁরা হলেন তানোরের কলমা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি আবদুল হামিদ, একই উপজেলার সরনজাই ইউনিয়ন যুবলীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি সজীব আলী, মোহনপুরের রায়ঘাটি ইউনিয়ন ছাত্রলীগের একটি ওয়ার্ডের সভাপতি আতিকুর রহমান এবং পুঠিয়ার আমঘোষপাড়ার আওয়ামী লীগ কর্মী জাহিরুল ইসলাম।

রাজশাহী জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার মো. রফিকুল আলম বলেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় শনিবার যৌথ বাহিনী চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন চরঈশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আলাউদ্দিন আজাদ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য সিরাজুল ইসলাম ওরফে রাকছান, আবদুল মাজেদ ওরফে পলাশ ও আবদুল জাহের।

দেশব্যাপী অভিযান ঘোষণার পর শনিবার রাতে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের চার নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সোহাগ মিয়া, মো. সেলিম, আবদুর রহিম ও মো. আজিজুল। সোহাগ বড়পিলাক ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি।

যৌথ বাহিনীর অভিযানে রাঙামাটি শহর থেকে গতকাল তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন রাঙামাটি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুনসুর আলী, সদর উপজেলার শ্রমিক লীগের সভাপতি মো. শাহাজালাল, সদর উপজেলা শ্রমিক লীগের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মাওলা মিয়া।

বগুড়ার শেরপুরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের দুই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি নামদার হোসেন এবং মির্জাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুস সাত্তার।

শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে হামলার অভিযোগ আছে দুজনের বিরুদ্ধে। তদন্তেও তাঁদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। এই মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

[তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুষ্টিয়া ও নোয়াখালী এবং প্রতিনিধি, গাজীপুর, রাজশাহী, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও শেরপুর]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ন আওয় ম উপজ ল গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলায় মাদকসহ একাধিক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে মাদক কারবারিদের হামলায় দুই পুলিশসহ তিনজনের আহতের ঘটনায় দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ী এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা করা হয়। পরে রাতেই নালিতাবাড়ী থানায় পুলিশ মামলা করে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে। বাকি দুইজনকে আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের দুপুরে শেরপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আরো পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহেল রানা জানান, আসামি ধরতে গিয়ে দুই পুলিশসহ তিনজন আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এরমধ্যে দুই নারীসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

নালিতাবাড়ী থানার পুলিশ জানায়, উপজেলার বুরুঙ্গা পোড়াবাড়ী এলাকার মাজম আলীর (৪০) বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ একাধিক মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাকে গ্রেপ্তার করতে নালিতাবাড়ী থানা পুলিশের তিন সদস্যের দল অভিযান চালায়। তখন মাজম আলীসহ অন্য তিন মাদক কারবারি প্রতিবেশী মফিজুলের পতিত বাড়ির রান্নাঘরে বসে ইয়াবা লেনদেন করছিলেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মাজম আলীসহ অন্যদের ধরতে চাইলে নারী-পুরুষসহ স্বজনেরা পুলিশের উপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। 

আহতদের উদ্ধার করে নালিতাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। আহতরা হলেন, নালিতাবাড়ী থানার এএসআই ওমর ফারুক, কনস্টেবল নাজমুল ও স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন।

ঢাকা/তারিকুল/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪