১২ দিন পর কারখানা বন্ধের খবর প্রকাশ, তবুও বাড়ছে শেয়ারের দাম
Published: 12th, February 2025 GMT
কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের খবরেও শেয়ারবাজারে দাম বাড়ছে শেয়ারের। আর এ ঘটনা ঘটেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার নিয়ে। আজ বুধবার লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪০ পয়সায়।
এদিকে ডিএসইর মাধ্যমে আজই কোম্পানিটি তাদের কারখানা বন্ধের কথা জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানিটি জানায়, লোকসান কমাতে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। আপাতত দুই মাসের জন্য কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। দুই মাসের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলেও নির্ধারিত সময় পর কোম্পানিটি আবার উৎপাদনে ফিরবে কি না, বিষয়টি নিশ্চিত করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ডিএসইতে দেওয়া তথ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুততম সময়ে আবারও উৎপাদন শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কোম্পানির পক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর আগে ডিএসইর একটি দল ৩ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন কারখানা বন্ধের খবর জানতে পারে। এরপরই তা ডিএসইর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ডিএসইর প্রতিনিধিদলের সরেজমিন পরিদর্শনের পাওয়া তথ্য প্রকাশের এক সপ্তাহের বেশি সময় পর কোম্পানির পক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা বন্ধ থাকলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে সেই তথ্য গোপন রাখা হয়।
সাফকো স্পিনিংয়ের সবশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটি দেড় কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান ছয় কোটি টাকার মতো কমেছে। তারপরও লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।
২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাফকো স্পিনিং ২০২২ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এ কারণে কোম্পানিটি বর্তমানে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজার উন্নয়নে ডিএসই ও ডিসিসিআইয়ের যৌথ সভা
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্তকরণ, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, নতুন আর্থিক পণ্য উদ্ভাবন এবং স্টার্টআপ ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে অর্থায়ন বিষয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) যৌথ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) গুলশানে ডিসিসিআই কার্যালয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ডিএসই’র পরিচালনা পর্ষদ এবং ডিসিসিআই’র প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ও পরিচালনা পর্ষদের উপস্থিতিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আরো পড়ুন:
বিআইএফএফএলের সঙ্গে অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের ঋণ চুক্তি
ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম চালু করবে গোল্ডেন হার্ভেস্ট
ডিএসই থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সভায় ডিসিসিআইর প্রেসিডেন্ট তাসকিন আহমেদ ডিএসই’র প্রতিনিধিবৃন্দকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ব্যবসায় লাভ ক্ষতি রয়েছে। যে সকল কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে মূলধন উত্তোলন করেছে তাদের সাথে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করতে হবে। আমাদের মতো দেশগুলোর অথবা আমাদের থেকে কিছুটা এগিয়ে থাকা দেশগুলোর সাথে তুলনা করে আগামীর কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। আমাদের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন টু জিডিপি রেশিও এখনও ২০% নিচে। আমাদের মতো অর্থনীতির অনেক দেশে এটি ৪০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশের অধিক। পুঁজিবাজারে এসএমই-এর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য কিছু দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো দ্বৈত কর ব্যবস্থার প্রত্যাহার ও এর প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং পণ্যের বৈচিত্রকরণ করা। আমাদের দেশের অর্থনীতিতে এসএমই কোম্পানিগুলোর ব্যাপক অবদান রয়েছে। এসএমই কোম্পানিগুলোর ফাইন্যান্সের উপর বেশি করে গুরুত্ব দিতে হবে। বর্তমানে আরজেএসসি-তে দুই লাখের উপর কোম্পানি রয়েছে এর মধ্যে মাত্র ৩৬০টি কোম্পানি তালিকাভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও সরকারি কোম্পানি ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্তির উপর গুরুত্বারোপ করেন।
এসময় ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম বলেন, আমাদের পুঁজিবাজার দেশের অর্থনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে উন্নত হতে পারেনি। কিন্তু আশার বিষয় হলো এই সরকার প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারের প্রতি গভীরভাবে মনোযোগ দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামানকে এই বিষয়ে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এই বাজেটে পুঁজিবাজারবান্ধব কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো- টার্নওভারের উপর এআইটি কমানো, মার্চেন্ট ব্যাংকের ট্যাক্স কমানো ও তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট ট্যাক্স এর ব্যবধান বৃদ্ধি করা। বিএসইসি কিছু উদ্যোগ নিয়েছে সেগুলো হলো- সিসি একাউন্টের ইন্টারেস্ট বিষয়ে সমাধান ও বিও একাউন্টের নবায়ন ফি কমানো। বিএসইসি মার্কেটে শৃঙ্খলা আনার জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় হয়েছে। একটি দক্ষ, স্বচ্ছ এবং ন্যায় ভিওিক পুঁজিবাজারের বিকাশ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের পুঁজিবাজার এখন একটি সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং ডিএসই পুঁজিবাজারের কেন্দ্রীয় শক্তি হিসেবে, এই উন্নয়নের রূপান্তরকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। বিগত দিনে মার্কেটে রেগুলেটর অনেক সময় অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ করেছে। এখন পুঁজিবাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের প্রতি আত্মবিশ্বাস ফিরে এসেছে। বিনিয়োগকারীগণ বাজারে ফিরে আসছে এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীগন সক্রিয় হচ্ছে। বর্তমানে ইক্যুইটি মার্কেটের সাথে বন্ড মার্কেটেকে কিভাবে উন্নয়ন করা যায় এই বিষয়ে ডিসিসিআই-এর সহযোগিতা প্রয়োজন। ডিসিসিআই ক্যাপিটাল মার্কেটের একটি বড় স্টেকহোল্ডার।
তিনি বলেন, আইপিও প্রসেস এর ডিজিটালাইজেশন এর প্রক্রিয়া চলমান। এছাড়াও ভালো কোম্পানিগুলোকে দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার জন্য গ্রিণ চ্যানেল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএসইসি এই বিষয়ে আমাদের সহযোগিতা করছে। ডিএসই ও ডিসিসিআই উভয় প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়িয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পুঁজিবাজারকে আরো শক্তিশালী ও টেকসই করার লক্ষ্যে সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে পুঁজিবাজারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চলমান রাখতে পারে। এরই লক্ষ্যে স্বল্প সময়ের মধ্যে এসএমই উদ্যোক্তাদের এসএমই বোর্ডে তালিকাভুক্তির প্রসেস এবং অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ড (এটিবি)’র সুবিধা ও তালিকাভুক্তির প্রসেস নিয়ে চেম্বার সদস্যদের সাথে পৃথক দুটি অনুষ্ঠানের আয়োজনের বিষয়ে একমত পোষণ করেন।
এছাড়াও আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে এটি সহজ করা সম্ভব। এছাড়াও এসএমই একটি বিশাল খাত। বেসরকারি খাতের প্রায় ৭৫% এসএমই। তাদের এক্সপোজার আছে, সংযোগ আছে, উন্নয়নের জায়গা আছে। তাই সরকার এ ব্যাপারে তালিকাভুক্ত এবং অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর জন্য কী ব্যবস্থা নিতে পারে তা বিবেচনায় আনতে পারে। ২০০৯ সালে, একটি সমীক্ষায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকারের ৭.৫ মিলিয়ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প রয়েছে। আমরা মনে করি যে, এই অর্থনৈতিক ইউনিট থেকে অধিক পরিমানে বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজারের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।
আলোচনা সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন ডিসিসিআইর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, রাজিব এইচ চৌধুরী, ভাই প্রেসিডেন্ট মো. সেলিম সোলাইমান, সেক্রেটারি জেনারেল (ভারপ্রাপ্ত) এ. কে. এম আসুদুজ্জামান পাটুয়ারি, ডিএসইর পরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (অব.), সৈয়দ হাম্মাদুল করীম, মো. শাকিল রিজভী, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আসাদুর রহমানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
ঢাকা/এনটি/ফিরোজ