কোম্পানির উৎপাদন বন্ধের খবরেও শেয়ারবাজারে দাম বাড়ছে শেয়ারের। আর এ ঘটনা ঘটেছে বস্ত্র খাতের কোম্পানি সাফকো স্পিনিং মিলসের শেয়ার নিয়ে। আজ বুধবার লেনদেন শুরুর প্রথম এক ঘণ্টায় প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১০ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪০ পয়সায়।

এদিকে ডিএসইর মাধ্যমে আজই কোম্পানিটি তাদের কারখানা বন্ধের কথা জানিয়েছে বিনিয়োগকারীদের। কোম্পানিটি জানায়, লোকসান কমাতে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানার উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়েছে। আপাতত দুই মাসের জন্য কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিচালনা পর্ষদ। দুই মাসের জন্য কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হলেও নির্ধারিত সময় পর কোম্পানিটি আবার উৎপাদনে ফিরবে কি না, বিষয়টি নিশ্চিত করেনি কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। ডিএসইতে দেওয়া তথ্যে কোম্পানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দ্রুততম সময়ে আবারও উৎপাদন শুরুর চেষ্টা করা হচ্ছে।

কোম্পানির পক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর আগে ডিএসইর একটি দল ৩ ফেব্রুয়ারি সরেজমিন কারখানা বন্ধের খবর জানতে পারে। এরপরই তা ডিএসইর পক্ষ থেকে বিনিয়োগকারীদের জানিয়ে দেওয়া হয়। ডিএসইর প্রতিনিধিদলের সরেজমিন পরিদর্শনের পাওয়া তথ্য প্রকাশের এক সপ্তাহের বেশি সময় পর কোম্পানির পক্ষ থেকে কারখানা বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কারখানা বন্ধ থাকলেও কোম্পানির পক্ষ থেকে সেই তথ্য গোপন রাখা হয়।

সাফকো স্পিনিংয়ের সবশেষ আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটি লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটি দেড় কোটি টাকার বেশি লোকসান করেছে। আগের বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল সাড়ে সাত কোটি টাকার বেশি। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে কোম্পানিটির লোকসান ছয় কোটি টাকার মতো কমেছে। তারপরও লোকসানের ধাক্কা সামলাতে না পেরে কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ।

২০০০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সাফকো স্পিনিং ২০২২ সালের পর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। এ কারণে কোম্পানিটি বর্তমানে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে জেড শ্রেণিভুক্ত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ড এসইর বন ধ র

এছাড়াও পড়ুন:

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।

কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।

আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।

আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫

একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’

আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’

ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫

গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।

আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ