সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতির সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ডে ২০১৮ সালে এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর বাড়িতে হামলা করে চাঁদাবাজি, লুটপাট, ক্ষয়ক্ষতি, গুম ও হত্যার হুমকির মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।    

বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম এ আজহারুল ইসলাম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ধানমন্ডি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো.

খোকন মিয়া সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন। রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। শুনানি শেষে বিচারক সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানী উত্তরার একটি বাসা থেকে জ্যোতিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা জেলা পুলিশ। আশুলিয়া থানার হত্যাচেষ্টা মামলায় ১৪ সেপ্টেম্বর শুনানি শেষে আদালত তার চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ব্যবসায়িক বিরোধের জেরে ২০১৮ সালের ৪ জুলাই রাত থেকে ৫ জুলাই বেলা ১টা পর্যন্ত জ্যোতির নির্দেশে আসামিরা এরশাদ গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. এরশাদ আলীর বাসায় হামলা চালায়। বাসা থেকে ৪০ ভরি স্বর্ণ, নগদ ৫৫ লাখ টাকা, ৪৫ লাখ টাকার চাঁদা ও আগাম স্বাক্ষরিত দুটি চেক বই নিয়ে যায়। এর মোট পরিমাণ ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া আসবাবপত্র, সিসি ক্যামেরা ও প্রতিষ্ঠানে হামলার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতি করে। পরে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর এরশাদ আলী ও তার পরিবারকে গুম ও হত্যার হুমকি দেয় মামলার চার নম্বর এজাহার নামীয় আসামি আসিব বিন আনোয়ার। এ ঘটনায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ছেলে শাফি মোদাচ্ছের খান জ্যোতিকে প্রধান আসামি করে ২১ জনের নামে ১১ ডিসেম্বর ধানমন্ডি থানায় মামলা করেন এরশাদ আলী।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

কাজের আনন্দই জীবনের সার্থকতা

জন্মদিনের অনুষ্ঠান নয়, তবে অনানুষ্ঠানিক আয়োজনটি ছিল সে উপলক্ষেই। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা শিক্ষাবিদ ও সুবক্তা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের জন্মদিন ছিল গত ২৫ জুলাই। তাঁর অগণিত অনুরাগীরা চেয়েছিলেন তাঁকে নিয়ে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে মিলিত হতে। উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের যে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে গেছে, তারপর আর জন্মদিনের অনুষ্ঠান করতে কিছুতেই সম্মত হননি তিনি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ষষ্ঠতলায় কেন্দ্রের প্রাক্তনী ও তাঁর কিছু ঘনিষ্ঠজন আলাপচারিতার এক ঘরোয়া আয়োজন করেছিলেন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে নিয়ে। সেখানে তিনি বললেন, কাজের মধ্য দিয়ে জীবনে যে আনন্দ পেয়েছেন, সেটিই জীবনের সার্থকতা। এই আনন্দই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, শক্তি জোগায়।

এ আয়োজনে অংশগ্রহণকারীরা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেছেন। তিনি তাঁর চিরপরিচিত সরস অথচ বুদ্ধিদীপ্ত গভীর তাৎপর্যময় কথায় উত্তর দিয়েছেন। কবিতা, সাহিত্য, শিল্প থেকে শিক্ষা, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সংগঠন, প্রেম–ভালোবাসা—সবকিছু উঠে আসে প্রশ্নোত্তরভিত্তিক কথোপকথনে। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল থেকে শুরু করে বিশ্বসাহিত্যের বহু কালজয়ী লেখকের রচনা থেকে প্রচুর উদ্ধৃতি দিয়েছেন তিনি। এক অন্তরঙ্গ প্রাণবন্ত আবহ বিরাজমান ছিল সন্ধ্যা থেকে অনেকটা রাত অবধি এই আয়োজনে।

আবৃত্তিশিল্পী জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় শুরুতেই আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের একটি কবিতা আবৃত্তি করে জানতে চান, তিনি কবিতার চর্চা করেননি কেন? জবাবে তিনি বলেন, কবি শামসুর রাহমান একবার তাঁকে বলেছিলেন, তাঁর মধ্যে কবিত্বের ঘাটতি আছে। তাঁর নিজেরও সে রকম মনে হয়েছে। তারপর সাহিত্য পত্রিকা কণ্ঠস্বর প্রকাশ ও অনেক রকম কাজ করতে গিয়ে আর কবিতা লেখা হয়ে ওঠেনি।

অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রশ্ন করেন, এখন একটা কঠিন সময় যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্মকে কীভাবে দেখেন, কী আশা করেন তাদের কাছে?

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘তরুণেরা কী হবে, তা তরুণদের ওপরে নির্ভর করে না। সেটা নির্ভর করে আমরা তাদের কী বানাতে চাই, তার ওপর। দেখতে হবে তরুণদের গড়ার মতো আমাদের ক্ষমতা কতটা আছে। অর্থাৎ শিক্ষক কেমন হবে, তার ওপরে নির্ভর করে তাঁর ছাত্র কেমন হবে। সক্রেটিস শিক্ষক ছিলেন বলে ছাত্র প্লেটো হয়েছেন। প্লেটোর শিক্ষা পেয়ে ছাত্র অ্যারিস্টটল হতে পেরেছেন। বড়দের যদি বড়ত্ব না থাকে, তবে ছোটরা বড় হতে পারে না। দুর্ভাগ্য যে আমরা বড়রা তাদের সামনে আদর্শ দাঁড় করাতে পারিনি। ফলে এখন বড়দেরই ছোটদের পেছনে দাঁড়াতে হচ্ছে।’

ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম জানতে চান, তিনি এত বিচিত্র ধরনের এত বিপুল কাজ করেছেন। এই প্রাণশক্তি পান কেমন করে?

উত্তর দিতে গিয়ে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘শক্তি আসে আনন্দ থেকে। কাজ করতে পারাটাই আনন্দের। আর সব সময় আশাবাদী থাকি। আশা কখনো শেষ হয় না। আশা শেষ মানে আমি শেষ।’

আলাপচারিতায় আরও অংশ নেন দুদক চেয়ারম্যান এম এ মোমেন, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ, চিকিৎসক আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী খায়রুল আলম সবুজ, কথাশিল্পী আনিসুল হক, ছড়াকার আমিরুল ইসলাম, উপস্থাপক আবদুন নূর তুষার, অভিনয়শিল্পী আফসানা মিমি, মশিউর রহমান, আলী নকী প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রাক্তনী খাদিজা রহমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ