এজিএম করতে ব্যর্থ গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, এখন দুর্বল কোম্পানির তালিকায়
Published: 13th, February 2025 GMT
নির্ধারিত সময়ে বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম করতে পারেনি এস আলমের মালিকানাধীন গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক। এ কারণে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকটিকে দুর্বল মানের কোম্পানি হিসেবে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে ব্যাংকটিকে ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়। এত দিন এটি ভালো মৌলভিত্তির কোম্পানি হিসেবে ‘এ’ শ্রেণিভুক্ত ছিল।
দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পক্ষ থেকে এই তথ্য জানানো হয়। ডিএসইর পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, শ্রেণি অবনতি হওয়ায় আজ থেকে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না বিনিয়োগকারীরা।
ডিএসই জানিয়েছে, গত বছরের মে মাসে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে জেড শ্রেণিভুক্ত করার নতুন নির্দেশনা জারি করে। সেই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি তাদের বার্ষিক সাধারণ সভা করতে ব্যর্থ হলে ওই কোম্পানিকে জেড শ্রেণিভুক্ত করা হবে।
গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক গত বছরের জুনে সমাপ্ত আর্থিক বছরের জন্য যে লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল, সেই লভ্যাংশ অনুমোদনে বার্ষিক সাধারণ সভার তারিখ নির্ধারণ করা হয় গত বছরের ৮ আগস্ট। কিন্তু তার আগে জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটাবিরোধী আন্দোলন ও পরবর্তীকালে সরকার বদলের ঘটনায় ওই সভা স্থগিত করা হয়। এরপর ছয় মাস অতিবাহিত হলেও ব্যাংকটি আর এজিএম করতে পারেনি। এর মধ্যে সরকার বদলের পর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদও পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এস আলমের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত করতে ব্যাংকটির পর্ষদে নিয়োগ দেওয়া হয় স্বতন্ত্র পরিচালক।
এদিকে পর্ষদ বদল করা হলেও এখনো ব্যাংকটির মালিকানার বড় অংশই রয়েছে এস আলম ঘনিষ্ঠদের হাতে। শুরুতে ব্যাংকটির নাম ছিল এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক। একসময় এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন আর্থিক খাতে কেলেঙ্কারির জন্য আলোচিত ব্যক্তি প্রশান্ত কুমার হালদার, যিনি পি কে হালদার নামেই বেশি পরিচিত। পরে পি কে হালদার কেলেঙ্কারির পর ব্যাংকটির নাম বদল করে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক করা হয়।
২০২২ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ব্যাংকটি। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, ১ হাজার ৩৭ কোটি টাকা মূলধনের এই ব্যাংকের শেয়ারের ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে। বাকি শেয়ারের বড় অংশই এস আলম ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে। এখন ব্যাংকটি জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেন।
এদিকে জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ার খবরে আজ সকালে লেনদেন শুরুর প্রথম ১ ঘণ্টায় ব্যাংকটির শেয়ারের দাম ১০ পয়সা বা প্রায় আড়াই শতাংশ কমে নেমে এসেছে ৪ টাকা ১০ পয়সায়। গত দুই বছরের মধ্যে ব্যাংকটির শেয়ারের সর্বনিম্ন বাজারমূল্য ছিল ৪ টাকা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ র ণ ভ ক ত কর গ ল ব ল ইসল ম এস আলম বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।