রোজার আগমনী বার্তা বয়ে আনে পবিত্র শবে বরাত
Published: 14th, February 2025 GMT
আরবি বর্ষপঞ্জি অনুসারে শাবান মাসের পরেই আসে রমজান মাস। পবিত্র শবে বরাত তাই মুসলমানদের কাছে রমজানের আগমনী বার্তা বয়ে আনে। শবে বরাতের রাত থেকে রমজানের প্রস্তুতিও শুরু হয়ে যায় পুরোদমে।
শবে বরাত মুসলমানদের জন্য একটি আচরণীয় ধর্মীয় দিবস। আরবি শাবান মাসের পঞ্চদশ রাতে এটি পালিত হয়। শবে বরাত পালিতহয় প্রধানত সৌভাগ্য রজনী হিসেবে। শবে বরাত পালনের বিশেষ তাৎপর্য আছে। মুসলমানদের ধারণা, এ রাতে পরবর্তী বছরের ভাগ্য লিপিবদ্ধ হয়। সারা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি এবং আল্লাহর থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করলে গুনাহ মাফ হয় বলে আশা করা হয়। এই উপমহাদেশের মানুষেরা পবিত্র শবে বরাতে সন্ধ্যার পর অনেকে কবরস্থানে যান। আপনজনদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।
আরও পড়ুনসুরার অর্থ বুঝে পড়লে নামাজে অন্য চিন্তা আসবে না ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪পবিত্র শবে বরাতে নফল ইবাদতের আলাদা গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য রয়েছে। একে হাদিসের ভাষায় বলা হয়েছে, ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘অর্ধ শাবানের রাত’। হাদিসে আছে, যারা শিরক করেন ও হিংসুক, তাদের ছাড়া এ রাতে আল্লাহ তাঁর সব সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন। এ রাতে তাই মুসলমানরা সৃষ্টিকর্তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে পরিশুদ্ধ জীবনযাপনের জন্য তাঁর অনুগ্রহ কামনা করেন।মুসলমানদের কাছে শবে বরাত ভাগ্য নির্ধারণের রাত হিসেবেও পরিচিত। কারণ, হাদিসে এ রাতে ক্ষমাপ্রার্থনার পাশাপাশি রিজিক দান, সুস্থতা দান, বিপদ থেকে পরিত্রাণের বিষয়ও গুরুত্ব পেয়েছে। এ জন্য এ রাতের আগে ও পরে অনেকে রোজা রাখেন।
ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা সারা বছর এ রাতের জন্য অপেক্ষা করেন। নফল ইবাদতের পাশাপাশি কিছু আনুষ্ঠানিকতাও পালন করেন। যার মাধ্যমে সামাজিক বন্ধন ও ভ্রাতৃত্ববোধ দৃঢ় হয়। শবে বরাতের দুই সপ্তাহ পর শুরু হয় রোজা। ফলে শবে বরাতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়ে যায় সিয়াম সাধনার প্রস্তুতিও।
আরও পড়ুনসাহসী সাহাবি হজরত যুবাইর (রা.)১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪আল্লাহর অনুগ্রহের রাত
ফারসি ভাষায় ‘শব’ শব্দের অর্থ ‘রাত’। আর ‘বরাত’ শব্দের অর্থ ‘সৌভাগ্য’। আরবিতে একে বলে লাইলাতুল বরাত, অর্থাৎ সৌভাগ্যের রাত। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, আল্লাহ এই রাতে তাঁর বান্দাদের গুনাহ মাফ করে দেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন। পবিত্র এই রাতে তাই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা পরম করুণাময় আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় নফল নামাজ পড়েন, কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং জিকিরে মগ্ন থাকেন। অতীতের পাপ-অন্যায়ের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার সময়ও এটি। একই সঙ্গে ভবিষ্যৎ জীবনের কল্যাণ কামনা করে মোনাজাত করেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
অনেকেই এ দিন রোজা রাখেন এবং দান-খয়রাত করে থাকেন। অনেকে এই রাতে তাঁদের বিগত নিকটাত্মীয়দের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রার্থনার আয়োজন করেন। রাতে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা আত্মীয়, প্রতিবেশী ও দুস্থদের মধ্যে নানা রকমের খাদ্য বিতরণ করে থাকেন। মসজিদ ও কবরস্থানে গিয়ে প্রার্থনা করেন।
আরও পড়ুনসুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াতের গুরুত্ব১৮ অক্টোবর ২০২৩ভাষাভেদে ভিন্ন নামস্থানভেদে ভাষা অনুযায়ী এই দিবস ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শাবান, তুরস্কে বিরাত কান্দিলি, ভারতীয় উপমহাদেশে শবে বরাত বা নিফসু শাবান। ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে এই দিনটি পালন করা হয় দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া জুড়ে। ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, আজারবাইজান, তুরস্ক, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাখস্তান, তুর্কমিনিস্তান, কিরগিজস্তান শবে বরাতের উৎসব পালন করে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম সলম ন বর ত র র জন য আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।