যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে তুলাধোনা করে বলেছেন, এই মহাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি চীন ও রাশিয়ার কাছ থেকে আসছে না, বরং ‘নিজেদের ভেতর’ থেকেই আসছে।

জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন। আশা করা হয়েছিল, জেডি ভ্যান্স এ বক্তৃতায় ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানে সম্ভাব্য আলোচনার কথা বলবেন।

তবে জেডি ভ্যান্স বক্তব্যের বেশির ভাগজুড়ে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সরকারগুলোকে দোষারোপ করেন। ভ্যান্সের অভিযোগ, ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলো তাদের মূল্যবোধ থেকে সরে আসছে। অভিবাসন ও বাক্‌স্বাধীনতা নিয়ে ভোটারদের উদ্বেগ রয়েছে।

আরও পড়ুনশান্তি চুক্তি নিয়ে হুঁশিয়ারির পর মিউনিখে জেলেনস্কি, দেখা হতে পারে ভ্যান্সের সঙ্গে১৯ ঘণ্টা আগে

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট যখন ইউরোপের সমালোচনায় সরব ছিলেন, তখন নিরাপত্তা সম্মেলনের কেন্দ্রে পিনপতন নীরবতা নেমে আসে। পরে সম্মেলনে উপস্থিত কয়েকজন রাজনীতিবিদ ভ্যান্সের এই অভিযোগের সমালোচনা করেন। এ বিষয়ে জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস বলেন, ‘এটা গ্রহণযোগ্য নয়।’

সম্মেলনে জেডি ভ্যান্স ইউরোপ নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের মনোভাব পুনর্ব্যক্ত করেন। ভ্যান্স বলেন, নিজেদের প্রতিরক্ষার জন্য ইউরোপের দেশগুলোকেই ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে জেডি ভ্যান্স বলেন, একটি যুক্তিসংগত সমাধান সম্ভব হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করেন। এ সপ্তাহের শুরুর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরুর বিষয়ে একমত হওয়ার কথা জানানোর পর তাঁর এমন প্রত্যাশা জন্মেছে।

জেডি ভ্যান্স অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কমিশনাররা বাক্‌স্বাধীনতা দমন করছেন। তিনি ব্যাপক অভিবাসনের জন্য ইউরোপকে দোষী সাব্যস্ত করেন। বলেন, ইউরোপীয় নেতারা ‘বেশ কিছু মৌলিক মূল্যবোধ’ থেকে পিছু হটেছেন।

আরও পড়ুনরাশিয়াকে পুনরায় জি–৭ জোটে ফিরিয়ে আনতে চান ট্রাম্প১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি–বিষয়ক প্রধান কাজা কালাস মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যকে ইউরোপের সঙ্গে ‘লড়াইয়ের চেষ্টা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ মিত্র রয়েছে।

মস্কোয় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত মাইকেল ম্যাকফল সমালোচনা করে বলেন, ভ্যান্সের মন্তব্য অবমাননাকর। বাস্তবিক অভিজ্ঞতার আলোকে এটা সত্য নয়।

রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল সিওলাকু বলেন, তাঁর দেশ ‘ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভাগ করে নেওয়া’ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের রক্ষক। এক এক্স পোস্টে রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোমানিয়ার সব কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের ক্ষমতায়ন ও ভোটদানের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

জেডি ভ্যান্স সম্মেলনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণের ওপর আলোকপাত করেন দুই নেতা।

আরও পড়ুনপুতিনের সঙ্গে ফোনালাপের পর ট্রাম্প বললেন, ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরু হলো১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ইউর প র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ