টাঙ্গাইলে ফুলের দোকানে ‘তৌহিদি জনতা’র ভাঙচুরের পর আতঙ্কে ঘুড়ি উৎসব বন্ধ
Published: 15th, February 2025 GMT
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে ফুল বিক্রি করায় দোকান ভাঙচুরের পর পাশের উপজেলা গোপালপুরে বন্ধ হয়ে গেল ঘুড়ি উৎসব। আজ শনিবার বিকেলে গোপালপুর উপজেলার নলীন বাজারের পাশে এই উৎসব হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার উৎসববিরোধী একটি লিফলেট বিতরণ করা হয় ওই এলাকায়।
আয়োজকেরা জানান, ওই লিফলেট পাওয়ার পরও তাঁরা ঘুড়ি উৎসব বাস্তবায়নের কাজ করে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ভূঞাপুরে ফুলের দোকানে হামলার ঘটনার পর উৎসব না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
উৎসবের অন্যতম সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আঞ্জু আনোয়ারা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর উৎসবে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে তিন-চার শতাধিক শিক্ষার্থী, তরুণ ঘুড়ি ওড়াতে আসেন। এ উপলক্ষে সেখানে লোকজ গানের আয়োজনও করা হয়। এবার উৎসবের বিরোধিতা করে গতকাল লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে এলাকায়। সরাসরি এসে কেউ বাধা দেননি। তবে গতকাল পাশের ভূঞাপুরে ফুলের দোকানে হামলার ঘটনার পর ঘুড়ি উৎসব বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আঞ্জু আনোয়ারা আরও বলেন, আজ গোপালপুর উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁকে ফোন করে উৎসব করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে তিনি ঘুড়ি উৎসব আয়োজন করা নিরাপদ মনে করছেন না।
কয়েক বছর ধরে ‘আমরা গোপালপুরবাসী’ ফেসবুক গ্রুপ, শুভশক্তি বাংলাদেশ ও মুক্তিযোদ্ধা নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে।
গতকাল বিকেলে ভূঞাপুর-তারাকান্দি সড়কের ভূঞাপুর থানাসংলগ্ন কলেজ রোডে মামা গিফট কর্নারে ‘তৌহিদি জনতা’র পরিচয়ে একদল লোক ভাঙচুর চালান। এ ছাড়া বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের সামনে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ কারণে ভূঞাপুরে গতকাল উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বসন্তবরণ অনুষ্ঠান স্থগিত করে।
উদীচী ভূঞাপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মেহেদী হাসান বলেন, ভালোবাসা দিবসের বিভিন্ন ঘটনার কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বসন্তবরণের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পরবর্তী সময়ে বসন্তবরণ অনুষ্ঠান করা হবে।
ফুলের দোকানি মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপজ ল উৎসব র র উৎসব বসন ত গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।