দেশে জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ এখনো আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সমাজের বা রাষ্ট্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।

কারণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি হলো কোনো ব্যক্তি এবং ব্যবসার নির্দিষ্ট পরিচয়, আয়ের স্তর বা ভৌগোলিক অবস্থান নির্বিশেষে একটি কার্যকর, সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী মূল্যে আর্থিক সেবা এবং পরিষেবাগুলোতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার একটি সুচিন্তিত প্রক্রিয়া।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে বিগত সরকারের দীর্ঘ শাসনের অবসানের পরপরই দেশের সামগ্রিক খাতে পরিবর্তনের দাবি ওঠে। বিশেষ করে ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কার এবং পরিবর্তনের দাবি ছিল সবার ওপরে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নেতৃত্বের পরিবর্তনসহ অর্থ পাচার রোধে বেশ কিছু ত্বরিত পদক্ষেপ হাতে নেয়।

এখনো বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তনের আশা করা হচ্ছে, যেখানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কার্যক্রমের গুরুত্ব বেশ জোরালো হয়ে উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে এখনো যথেষ্ট মাত্রায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

আরও পড়ুনব্যাংকিং খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারে কী করে১৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য হ্রাসের মতো একটি বিরাট ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে।

তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে এখনো তিন কোটি মানুষ আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বাদ পড়ে আছে।

আর বিশ্বের মোট ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৪০ কোটি। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা গ্রামীণ এলাকায় থাকেন, তাঁরা এখনো তাঁদের সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ঋণ, বিমা সুবিধা ও আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার মতো মৌলিক আর্থিক পরিষেবাগুলো গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বাংলাদেশের প্রায় ৪৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এখনো ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত।

এই বিশাল জনসংখ্যাকে প্রায়ই অনানুষ্ঠানিক আর্থিক চ্যানেলের ওপর নির্ভর করতে হয়, যা অনেকটা অবিশ্বাস্য, অনিরাপদ ও ব্যয়বহুলও বটে।

সুতরাং আর্থিক অন্তর্ভুক্তি দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার মান উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য একটি অপরিহার্য হাতিয়ার।

এটি অসংখ্য মানুষের, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরির ব্যাপক সম্ভাবনা রাখে।

কিন্তু এখনো বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিষেবার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না।

আরও পড়ুনবাংলাদেশ ব্যাংককে কথা নয় কাজ দেখাতে হবে২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৬৮ দশমিক৩৪ শতাংশের বেশি মানুষ প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করেন।

এ অঞ্চলগুলোতে ব্যাংকের শাখা, উপশাখা ও এজেন্ট আউটলেটের অভাবের কারণে অনেক মানুষ ব্যাংকিং পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন না।

অনেক সময় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থার অভাবে তাঁদের সমস্যাটিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বর্তমানে বাংলাদেশের আর্থিক সাক্ষরতার হার মাত্র ২৮ শতাংশ, তার মানে প্রায় ৭২ শতাংশ মানুষ এখনো ব্যাংক, ব্যাংকিং প্রোডাক্ট বা সেগুলো কীভাবে ব্যবহার করতে হয়, এ সম্পর্কে পরিচিত নন।

আর্থিক সাক্ষরতার এই জ্ঞানের অভাব আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিষেবাগুলোকে ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেককে অবিশ্বাস্য ও অনিশ্চয়তার লেনদেনের দিকে নিয়ে যায়। এর মাধ্যমে কারও জীবনকে আর্থিক ভয় ও উদ্বেগের দিকে ধাবিত করতে পারে।

এ ছাড়া দেশের প্রচলিত সামাজিক প্রথা ও লৈঙ্গিক বৈষম্যের কারণে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকার নারীদের জন্য সংস্কৃতিগতভাবে সীমাবদ্ধতা, চলাফেরায় ধীরস্থিরতা এবং আর্থিক অক্ষমতার কারণে তাঁরা আনুষ্ঠানিক আর্থিক পরিষেবাগুলোকে গ্রহণ করতে পারেন না।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মোবাইল ব‍্যাংকিং ও ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার উত্থান বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচেষ্টায় বিপ্লব এনেছে।

দেশে মোবাইল ফোনের প্রবেশাধিকার বৃদ্ধি, ডিজিটাল পেমেন্টের উদ্ভাবনের সঙ্গে মিলিত হয়ে গ্রামীণ এবং সুবিধাবঞ্চিত এলাকার মানুষদের জন্য ব্যাংক শাখার প্রয়োজন ছাড়াই আর্থিক পরিষেবা গ্রহণে করতে সক্ষম হচ্ছেন।

আরও পড়ুনআলোচিত ব্যাংকগুলোর ভবিষ্যৎ কী১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবার প্রসারের কথা বলতে গেলে প্রথমে আসে বিকাশ, যা প্রায় ২ কোটি ১২ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করেন এবং নগদ, যা প্রায় ৪৫ লাখ গ্রাহক ব্যবহার করেন।

উভয় প্ল্যাটফর্ম দুটি প্রমাণ করেছে, প্রযুক্তি কীভাবে ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সেবা প্রদানের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

এ প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে গ্রাহক মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজে অর্থ প্রেরণ, অর্থ গ্রহণ, বিল পরিশোধ, সঞ্চয় ও ডিজিটাল ঋণ গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সরকার তার জাতীয় উন্নয়ন কর্মসূচিতে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির গুরুত্ব স্বীকার করেছে।

দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখার প্রয়াসে আর্থিক নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করার জন্য সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চল ও ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য, আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য, পূর্বের সুবিধাবঞ্চিতদের ক্ষেত্রে সুযোগ উন্মুক্ত করার জন্য, আর্থিক প্রোডাক্টের জন্য গ্রাহকের ভিত্তি সম্প্রসারণ করার জন্য, দেশের একটি প্রাণবন্ত এবং স্থিতিশীল আর্থিক খাত গঠনে অবদান রাখার জন্য বেশ কয়েকটি উদ্যোগ চালু করেছে।

এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, উপশাখা ও ক্ষুদ্রঋণ খোলার জন্য নিয়মকানুন তৈরি করা, সেই সঙ্গে আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচি এবং স্কুল ব্যাংকিং ও কৃষি ব্যাংকিং উদ্যোগসহ নো-ফ্রিল অ্যাকাউন্ট খোলার কর্মসূচি চালু করা ইত্যাদি।

পাশাপাশি সরকার দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে জড়িত হওয়ার জন্য উৎসাহিত করে থাকে, যাতে ব্যাংকগুলো সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে সেবা প্রদানের জন্য সরকারঘোষিত ভর্তুকি এবং প্রণোদনা প্রদানের কাজ চালিয়ে যায়।

অধিকন্তু সরকার আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার প্রধান উৎস অর্থাৎ অভিবাসীদের আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদান করছে।

মোদ্দাকথা সরকার আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন‍্য যথেষ্ট আন্তরিক, তবে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে এখনো বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।

বাংলাদেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে ক্ষুদ্রঋণ অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদানকারী। গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

এর ফলে লাখ লাখ মানুষ, বিশেষ করে নারীরা নিজ উদ্যোগে ছোট ছোট ব্যবসা শুরু করতে বা তাঁদের জীবিকা উন্নত করতে এবং দারিদ্র্যের চক্র থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হয়েছেন।

আরও পড়ুনব্যাংকিং খাতের যেসব সমস্যার জরুরি সমাধান প্রয়োজন০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২০২৩ সালের ৩০ জুনের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে প্রায় ৪ কোটি ৮৬ লাখ মানুষ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের সদস্য ছিলেন, যাঁর মধ্যে ৩ কোটি ১৫ লাখই ক্ষুদ্রঋণগ্রহীতা।

তবু ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ও ঋণচক্রের জন্যও কারও কারও দ্বারা সমালোচিত হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হলো কিছু সমালোচনাকে উপেক্ষা করে বা আমলে নিয়ে আরও উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সারা দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির জন্য ক্ষুদ্রঋণ আরও টেকসই এবং সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে, তা নিশ্চিত করা।

দেশের প্রতিটি কোণে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুবিধা পৌঁছানোর জন্য ডিজিটাল অবকাঠামোতে আরও বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ও মোবাইলের নেটওয়ার্ক কাভারেজের সম্প্রসারণ ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাগুলোকে সহজতর করতে এবং সব মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

ডিজিটালাইজেশনের বাইরেও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সাফল্যের জন্য আর্থিক সাক্ষরতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৮ শতাংশ নারী।

এ ছাড়া নারী-পুরুষের আর্থিক বৈষম্য দূর করতে হলে সমগ্র দেশে নারীদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে, যাঁরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫০ দশমিক ৮০ শতাংশ।

দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জনশক্তি তরুণ-তরুণীদের সম্পৃক্ত করতে হবে, যাঁরা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশ এবং বর্তমানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২৭ লাখ ৫০ হাজার, যাঁদেরকেও আর্থিক সাক্ষরতা কর্মসূচির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থায় যুক্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে।

ইতিমধ্যে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা, মোবাইল ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্রঋণ আর্থিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তথা ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ক্ষেত্রে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

একই সঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন সব প্রোডাক্ট উদ্ভাবন করতে হবে, যা ব্যাংকিং সুবিধার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে সহায়ক হয়।

নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের জন্য তৈরি আকর্ষণীয় সুবিধার সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা এবং বিমা পণ্যগুলোর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি দেশজুড়ে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধিকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাবে।

অন্যদিকে আর্থিক ব্যবস্থায় জেন্ডার সংবেদনশীল নীতি ও উদ্যোগগুলোকে যথাযথভাবে প্রচার করাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি খাত আরও টেকসই ও সুনিয়ন্ত্রিত হবে।

ইতিমধ্যে ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবা, মোবাইল ব্যাংকিং ও ক্ষুদ্রঋণ আর্থিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য তথা ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জন্য আর্থিক অন্তর্ভুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

এ ক্ষেত্রে সরকার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা যেতে পারে।

সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আর্থিক অন্তর্ভুক্তির বাধাগুলো মোকাবিলা করে বাংলাদেশ আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে, যা সব নাগরিককে ক্ষমতায়ন করে এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

এম এম মাহবুব হাসান, বাংকার ও উন্নয়ন গবেষক
ই-মেইল: [email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ষ ঠ ন ক আর থ ক আর থ ক ব যবস থ ম ট জনস খ য র আর থ ক প র ন র জন য র র জন য ও আর থ ক র জন য ব ব শ ষ কর য দ র কর গ র হক সরক র গ রহণ ত করত র করত

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ