পেনশন স্কিমে চাঁদা দেওয়ার সামর্থ্য নেই ৬৫% শ্রমিকের
Published: 17th, February 2025 GMT
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মচারীদের জন্য ২০২৩ সালে প্রগতি স্কিম চালু করেছে সরকার। তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মধ্যে এ স্কিমে খুব বেশি সাড়া নেই। কারণ হিসেবে ৬১ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক বলেছেন, চাকরির নিরাপত্তা না থাকায় স্কিমে অংশগ্রহণে তারা আগ্রহী নন। ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ শ্রমিক জানিয়েছেন, মাসিক চাঁদা দেওয়ার আর্থিক সক্ষমতা নেই তাদের। ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ শ্রমিক এ স্কিম সম্পর্কে জানেন না।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিসের (বিলস) এক জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন মন্ডিয়াল এফএনভি এতে সহায়তা দিয়েছে। গতকাল সোমবার এ জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এ উপলক্ষে রাজধানীর শ্রম ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সাবেক শ্রম সচিব ড.
প্রসঙ্গত, সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আওতায় বেসরকারি খাতের শ্রমিকদের জন্য প্রগতি স্কিম চালু করে সরকার। এ স্কিমে মাসিক চাঁদার ৫০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং বাকি ৫০ শতাংশ শ্রমিক-কর্মচারীরা দেওয়ার কথা।
বৈঠকে জরিপের ফল তুলে ধরেন বিলসের গবেষণা বিভাগের উপপরিচালক মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রগতি স্কিমের সর্বনিম্ন মাসিক চাঁদা তুলনামূলকভাবে বেশি। ১০ বছরের জন্য অবিরাম প্রিমিয়াম দিতে হয়, সুরক্ষা স্কিমের অধীনে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কোনো প্রত্যাহার বা ঋণ সুবিধা নেই, চাকরি পরিবর্তনের অনুমতি নেই। অথচ মাত্র ৮ শতাংশ শ্রমিক এক কারখানায় ১০ বছরের বেশি কাজ করছেন। এ ছাড়া শ্রমিকের দেওয়া কিস্তির মেয়াদ শেষে যে লভ্যাংশ দেওয়ার কথা, তা ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে দেওয়া লভ্যাংশের চেয়ে কম।
এ বাস্তবতায় গবেষণা প্রতিবেদনে কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্কিমে মাসিক চাঁদা বা কিস্তির পরিমাণ কমিয়ে আনা। স্কিমে প্রতিষ্ঠান ও মালিকের অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা। সরকার স্কিমে অংশগ্রহণ বাড়াতে ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে একজন শ্রমিক যে পরিমাণ কিস্তি দেবেন, সরকার থেকে তার সমপরিমাণ বা বেশি দেওয়া যেতে পারে। শ্রমিকদের সর্বজনীন পেনশন স্কিম সম্পর্কে আরও সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। এসব সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মেদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প নশন র ট ক র জন য সরক র প নশন
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।