প্রতিবছর রোমানিয়ার সরকার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত নয়, এমন দেশগুলোর নাগরিকদের উচ্চশিক্ষার জন্য এ বৃত্তি দেয়। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা এ বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। রোমানিয়ার উল্লেখযোগ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব বুখারেস্ট, বুখারেস্ট ইউনিভার্সিটি অব ইকোনমিক স্টাডিজ, বাবেস-বলিয়াই ইউনিভার্সিটি, আলেকজান্দ্রু আইওয়ান কুজা ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব তিমিশোআরা, ইউনিভার্সিটি পলিটেকনিক অব বুখারেস্ট, টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ঘিওরঘি আসাচি ইয়াস ইত্যাদি। একজন শিক্ষার্থী রোমানিয়ায় ব্যাচেলর, মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি যেকোনো লেভেলে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন।

রোমানিয়া দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে অবস্থিত ৯২ হাজার ৪৫ দশমিক ৬ বর্গমাইলের একটি দেশ। আয়তনের দিক থেকে রোমানিয়া ইউরোপের ১২তম বৃহত্তম রাষ্ট্র এবং জনসংখ্যার বিবেচনায় রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে ষষ্ঠ দেশ। বুখারেস্ট রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের সঙ্গে গঠনশৈলীর বিবেচনায় সামঞ্জস্য থাকায় বুখারেস্টকে অনেকে পূর্ব ইউরোপের প্যারিসও বলে থাকেন। দেশটির উল্লেখযোগ্য নগরীর মধ্যে রয়েছে ব্রাসোভ, ইয়াশ, তিমিশোআরা, ক্লুজ নাপোকা, কন্সটান্টা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

রোমানিয়ার দক্ষিণে বুলগেরিয়া, পশ্চিমে সার্বিয়া ও হাঙ্গেরি এবং পূর্বে ইউক্রেন ও রিপাবলিক অব মলদোভার সঙ্গে সংযুক্ত। এ ছাড়া দেশটির দক্ষিণ-পূর্বের প্রায় ২৪৫ কিলোমিটার রেখা বরাবর কৃষ্ণসাগর বা ব্ল্যাক সির উপকূল রয়েছে। রোমানিয়ার অধিবাসীদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ভাষার নাম রোমানিয়ান। দেশটির ৯২ শতাংশ মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তবে দেশটিতে ফ্রেঞ্চ ও ইংরেজি ভাষার প্রচলন রয়েছে। পূর্ব ইউরোপে প্রচলিত ভাষাগুলোর মধ্যে রোমানিয়ান একমাত্র ভাষা, যেটি লাতিন ল্যাঙ্গুয়েজ ফ্যামিলির অন্তর্ভুক্ত।

২০০৭ সালে রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পায়। রোমানিয়ার জাতীয় মুদ্রার নাম রোমানিয়ান লিউ। রোমানিয়া বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর মধ্যে একটি। আঙুর, আপেল, শর্ষে ও বিভিন্ন সবজি থেকে প্রস্তুতকৃত তেল থেকে আরম্ভ করে বিভিন্ন ধরনের ফার্মাসিউটিক্যাল, কেমিক্যাল, লৌহ, ইস্পাতশিল্প, মেশিনারিশিল্প, বস্ত্রশিল্প ও মোটর গাড়ি তৈরির কারখানার মতো ভারী ভারী শিল্প রোমানিয়ার অর্থনীতিকে করেছে অত্যন্ত বেগবান।

আরও পড়ুনহার্ভার্ডে বৃত্তি নিয়ে এমবিএ’র সুযোগ বাংলাদেশিদের ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুযোগ-সুবিধা

*নির্বাচিত শিক্ষার্থীরা পাবেন রেজিস্ট্রেশন ফি

*সম্পূর্ণ টিউশন ফি

*বিনা মূল্যে আবাসন

*উপবৃত্তি স্নাতকে ৬৫ ইউরো (মাসে)

*স্নাতকোত্তরে ৭৫ ইউরো (মাসে)

*পিএইচডিতে ৮৫ ইউরো (মাসে)

বৃত্তির মেয়াদ

*স্নাতক ডিগ্রির মেয়াদ থাকবে তিন থেকে ছয় বছর

*স্নাতকোত্তরে দেড় থেকে দুই বছর

*পিএইচডির জন্য থাকবে তিন থেকে চার বছর

স্কলারশিপের আবেদন করতে যা প্রয়োজন

*স্কলারশিপের অ্যাপ্লিকেশন ফরম

*যে ইউনিভার্সিটিতে পড়তে আগ্রহী, সে ইউনিভার্সিটির আবেদন ফরম

*যাবতীয় শিক্ষা সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্টের কপি

*জন্মনিবন্ধন বা বার্থ সার্টিফিকেটের কপি

*পাসপোর্টের বায়োগ্র্যাফিক্যাল পেজ এবং সেই সঙ্গে প্রথম তিন পৃষ্ঠা

*মেডিকেল সার্টিফিকেট

*ইউরো পাস ফরম্যাটের সিভি

*সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি

*প্রয়োজনে ইংরেজি, ফ্রেঞ্চ বা রোমানিয়ান ভাষার অভিজ্ঞতা সনদ

আরও পড়ুনবাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যে ১০ দেশে অল্প খরচে পড়তে পারেন০৭ এপ্রিল ২০২৪

অধ্যয়নের ক্ষেত্রগুলো

স্থাপত্য, ভিজ্যুয়াল আর্ট, রোমানিয়ান সংস্কৃতি ও সভ্যতা, সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল, সামাজিক ও মানববিজ্ঞান, প্রযুক্তিগত অধ্যয়ন, তেল ও গ্যাস, কৃষিবিজ্ঞান ও পশু চিকিৎসা।

অধ্যয়নের ভাষা

স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীদের রোমানিয়ান ভাষা জানতে হবে। কারণ, দুটি ডিগ্রি দেশটির নিজস্ব ভাষায় পড়ানো হয়। তবে যেসব প্রার্থী রোমানিয়ান ভাষা জানেন না, তাঁদের ভাষা অধ্যয়নের সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর পিএইচডি ডিগ্রির জন্য শিক্ষার্থীরা রোমানিয়ান ছাড়া অন্য ভাষা নির্বাচন করতে পারবেন।

আবেদনের যোগ্যতা

*ইউরোপীয় সদস্যরাষ্ট্র ছাড়া যেকোনো দেশের শিক্ষার্থীদের আবেদনের সুযোগ

*প্রার্থীদের রোমানিয়ার নাগরিকত্ব থাকা যাবে না

*স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের জন্য ৩৫ বছর এবং পিএইচডির জন্য ৪৫ বছরের বেশি বয়স অযোগ্যতা বলে বিবেচিত হবে

আবেদনের পদ্ধতি

আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের বিস্তারিত, পদ্ধতিসহ বিস্তারিত দেখতে এখানে ক্লিক করুন

আবেদনের শেষ তারিখ: ১২ মার্চ ২০২৫

আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষায় বিদেশে যেতে প্রস্তুতি কেমন, জেনে নিন ধাপগুলো১৪ এপ্রিল ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট প এইচড র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু

বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্ভবত দেশের সবচেয়ে সহজ কোনো ‘নিয়োগপ্রক্রিয়া’, যা বছরের পর বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসছে। আবেদনপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর মাত্র কয়েক মিনিটের এক মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াচ্ছেন।

অথচ এই দেশে প্রাথমিক শিক্ষক হতে গেলেও কয়েকটি ধাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। ফলে ‘ত্রুটিযুক্ত’ শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়াকে যুগোপযোগী কিংবা বিশ্বমানদণ্ডের পরিসরে আনার আহ্বান সব সময় ছিল।

সমাজে এসব আলাপের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৬ সালের দিকে একটি কমিটি গঠন করে, যাঁরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য একটি ‘অভিন্ন নীতিমালা’ করার সুযোগ মিলে।

এই কমিটি কয়েকবার খসড়া করে ২০১৯ সালের দিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদোন্নতির একটি ‘অভিন্ন’ নীতিমালা বা নির্দেশিকা চূড়ান্ত করে। যদিও এই নীতিমালার নানা অসংগতি ছিল, যা নিয়ে খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাই প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছে।

এই নীতিমালার ৩ ধারায় বিভিন্ন অনুষদের প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য এসএসসি ও এইচএসসির জিপিএ এবং স্নাতক বা স্নাতকোত্তরের সিজিপিএকে যোগ্যতা পরিমাপের মানদণ্ড ধরে বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা হচ্ছে, এক. এমফিল–সমমান বা পিএইচডি অতিরিক্ত ডিগ্রি হিসেবে গণ্য হবে, দুই. বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগে প্রভাষক নিয়োগের জন্য ‘প্রয়োজনে’ লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে একটি শর্টলিস্ট করে সাক্ষাৎকার গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারবে।

এই যে দুই নম্বর শর্তের বিষয়ে আমরা অনেকে প্রতিবাদ করে আসছি। এটা নিয়ে পত্রপত্রিকায় লেখালেখিও হয়েছে অনেক। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের ‘নয়া অধ্যায়’ শুরু করছে।

আগে যেখানে কেবল মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক’ হওয়া যেত, সেই জায়গায় লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মৌখিক পরীক্ষা হওয়ায় অনেকেই ভাবছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের এই নিয়ম যৌক্তিক এবং সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক। যাঁরা যৌক্তিক মনে করছেন, তাঁরা আমার এই আলোচনার শেষে নিজের উত্তর খুঁজে পাবেন।

একজন শিক্ষক হওয়ার জন্য যেসব যোগ্যতা বাইরে বিবেচনা করা হয়, তা আমাদের দেশে অতিরিক্ত যোগ্যতা কিংবা যোগ্যতার শিথিলতায় আনা হয়েছে, সেসবকে কখনোই মুখ্য করেননি। ফলে মাস্টার্স পাস করা শিক্ষার্থীদের সহকর্মী করা হচ্ছে, রাজনৈতিক সুপারিশপ্রাপ্তদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, আবার তাঁদেরকেই সবেতনে পিএইচডি করার জন্য দেশের বাইরে পাঠানো হচ্ছে। অথচ সেই যোগ্যতার ডক্টরেট ডিগ্রিধারীকে এসে হতাশা নিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে। লিখিত পরীক্ষার ফলে সেটিই হওয়ার কথা।

দেখুন, বাংলাদেশে প্রচলিত এসব নিয়োগে যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরের পর বছর ধরে নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু আছে, বিশ্বাস করুন, এ ধরনের শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া উন্নত কিংবা পার্শ্ববর্তী ভারতেও নেই। এমনকি এত সহজে বাইরের দেশে কখনো বাচ্চাদের স্কুলের শিক্ষকও হতে পারবে না।

গণ-অভ্যুত্থানের পরও সেই একই ধারায় নিয়োগপ্রক্রিয়া চলে আসছে। লিখিত পরীক্ষা নিয়ে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা কীভাবে ভালো কিংবা যোগ্য প্রার্থীদের বেছে নেওয়ার উত্তম প্রক্রিয়া নয়, তার উদাহরণ হিসেবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়া এক প্রার্থীর পাঠানো এক বার্তাকে কেস স্টাডি হিসেবে দেখা যাক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী আমাকে জানিয়েছেন, এই শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় আসা এক শিক্ষার্থী জাপান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি করে এসেছিলেন শিক্ষক হওয়ার জন্য, কিন্তু ওই লিখিত পরীক্ষার কারণে তিনি বাদ পড়েছেন। এ ছাড়া সেখানে বেশ কিছু প্রার্থী ছিলেন, যাঁরা স্নাতক বা স্নাতকোত্তরে প্রথম বা দ্বিতীয় এবং গবেষণা প্রবন্ধ আছে। ওই প্রার্থীর অভিযোগ, সবারই বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী রাজনৈতিক সুপারিশ আছে।

তাহলে প্রশ্ন উঠে লিখিত পরীক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে পিএইচডিধারী, প্রকাশনাধারীদের শর্টলিস্ট থেকে বাদ দেওয়া হলো, এই লিখিত পরীক্ষায় ভালো করা প্রার্থীই–বা কেন ভালো?

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার যৌক্তিকতা কতটুকু