চলতি বছরের এপ্রিলের ৪ তারিখ থাইল্যান্ডের রাজধানী ব‍্যাংককে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিমসটেক সম্মেলনে যোগ দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এসময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের বৈঠক হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। 

তিনি গত রবিবার ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত অষ্টম ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পর এমন আভাস দিয়েছেন। 

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুকে একটি সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন। সোমবার প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বাংলাদেশ–ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে পরীক্ষায় ফেলা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, ভারত থেকে শেখ হাসিনার বক্তব্য–বিবৃতি দেওয়া, সীমান্ত হত্যা, জেলেদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং আদানির বিদ্যুৎ প্রকল্প–সংক্রান্ত বিষয়।

সাক্ষাৎকারের শুরুতেই দুই দেশের সম্পর্কে উত্তেজনার মধ্যে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তৌহিদ হোসেনের সাক্ষাৎ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।

জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, “খোলাখুলি বললে সম্পর্ক ছিল খুবই উত্তেজনাপূর্ণ (যখন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে)। কারণ, ভারত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে সম্পর্কের একটি ধরনে অভ্যস্ত ছিল এবং হঠাৎ করেই দ্রুত তা ভেঙে পড়ে। নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়তো কিছুটা সময় লেগেছে, যার ফলে সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক মনোভাব ও অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল। তবে ছয় মাস পর, আমার মনে হয় সে সময়টা আসলেই শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। আমাদের এমন একটি পরিবেশের প্রয়োজন, যেখানে আমরা একে অপরের সঙ্গে কাজ করতে পারি। ছয় মাস আগের তুলনায় অবশ্যই আমরা একে অপরের সঙ্গে অনেক ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারি।”

যুক্তরাষ্ট্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ এবং দেশটির পররাষ্ট্র সচিবের মতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের কিছু উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জয়শঙ্করের কাছে এ বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানতে চেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, তিনি জানতে চাননি। এটা ভারতের ব্যাপার (কোন দেশের সঙ্গে তারা কী আলোচনা করবে)।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয় না তেমন কোনো উদ্বেগের কারণ আছে। আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা উচিত, যা ইতোমধ্যে কিছু ক্ষেত্রে ঘটছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। বাণিজ্যে অল্প সময়ের জন্য মন্দা দেখা দিয়েছিল, কিন্তু আবার তা চাঙা হয়ে উঠেছে। সুতরাং এগুলো ইঙ্গিত দেয় যে দুই দেশ, অন্তত বেসরকারি খাতে মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে চায় এবং এতে প্রতীয়মান হয় যে আমাদের আগ্রহ আছে। উভয় দেশেরই একে অপরের কাছে স্বার্থ রয়েছে এবং আমাদের তার প্রতি যত্ন নেওয়া দরকার।”

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের পদক্ষেপ নিয়ে জানতে চাওয়া প্রসঙ্গে তৌহিদ হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে তাকে ফেরত পাঠানোর জন্য আমরা ভারতকে বলেছি। যতক্ষণ না ভারত সরকার সেটা না করছে, আমরা আশা করব, তারা অন্তত তার ওপর কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে, যাতে তিনি এমন কোনো উত্তেজনা সৃষ্টিকারী ও মিথ্যা বক্তব্য না দেন।” 

শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “একটি মব (বিশৃঙ্খল জনতা) কিছু করতে পারে, কিন্তু তাতে সরকারের সমর্থন নেই।”

বাংলাদেশ সরকার এখনও পর্যন্ত কেবল একটি নোট ভারবাল (কূটনৈতিক নোট) পাঠিয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করে। কোনো আনুষ্ঠানিক প্রত্যর্পণের অনুরোধ করা হবে কি- এর জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের একটা প্রত্যর্পণ চুক্তি আছে, এবং আমরা অনেক অভিযুক্তকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ভারতে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং আমি মনে করি ভারত তাকে (হাসিনা) বাংলাদেশে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরত দিতে পারে।”

ভারত ও বাংলাদেশ সম্পর্ক আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে পারে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, “আমরা শুধু গত ১৫ বছর কেন দেখব? এমনকি বিএনপির আমলেও (১৯৯৬-২০০১) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমার মনে হয় না, সম্পর্ক নির্দিষ্ট সরকারকেন্দ্রিক হতে হবে। ১৯৯৬-১৯৯৭ এ আমাদের গঙ্গা চুক্তি হয়েছিল। তাই আমি মনে করি, আমাদের দুই দেশের রাজধানীতে যে সরকারই হোক, যে দলই ক্ষমতায় থাক না কেন, তা আমাদের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলা উচিত নয়। কারণ সম্পর্ক পারস্পরিক স্বার্থ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্ভরশীল। আমি বিশ্বাস করি, উভয় পক্ষই বুঝতে পারছে তাদের স্বার্থ কী এবং আমরা ভারতের সঙ্গে খুব ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পরর ষ ট র উপদ ষ ট র জন য আম দ র অপর র সরক র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ