Prothomalo:
2025-06-16@23:15:31 GMT

বাংলা বানানের সংকট কোথায়

Published: 19th, February 2025 GMT

লিখতে গেলেই বানান নিয়ে সংকটে পড়তে হয়। ‘সংকট’ লিখব, নাকি ‘সঙ্কট’ লিখব দেখে নিতে হয়। ‘হলো’ লিখতে শেষে ও-কার হবে কি না, অভিধান খুঁজে দেখতে হয়। ‘তরী’ বা ‘তীর’ বানানে হ্রস্ব ই-কার হয়ে গেছে কি না, কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয়।

আসলে চারদিকে নানা রকম বানান দেখতে দেখতে কোনটা যে তার প্রমিত রূপ, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। অথচ বানান নিয়ে এত সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। এই সংকট তৈরি হওয়ার পেছনে দায় রয়েছে বাংলা একাডেমির। বানান সংস্কারে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা বানানের ইতিহাস ও পরম্পরাকে বিবেচনায় নেননি। মোটাদাগে তাঁরা বানানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, নিয়মের অধীনে বানানকে আনতে চেয়েছেন। যে কারণে বাংলা একাডেমির বানান-পুস্তিকার নাম দিয়েছেন প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম।

বানান যে কোনো নিয়ম মেনে চলে না, এটা কে কাকে বোঝাবে। এমনকি ভাষা ব্যবহারকারী নিয়ম মেনেও বানান লেখেন না। অথচ এই সূত্র ধরে বানানের নিয়মের ওপর অনেক বই বাজারে এসেছে। সেসব বই কিনে কৌতূহলী পাঠক বানানের নিয়মও মুখস্থ করেছেন; কিন্তু নিজের দ্বিধা কাটাতে পারেননি। বানানে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে গেলেই যে সংকট তৈরি হয়, সেটি কেউ বুঝতেই চান না। ১৯৩৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যে বানান সংস্কার কমিটি করা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল—বানানে বিকল্প বর্জন, বানানের নিয়ম প্রণয়ন করা নয়।

একই শব্দের একাধিক বানান থাকলে লিখতে গেলে সংকটে পড়তে হয়। তাই একটি রূপকে প্রামাণ্য হিসেবে নির্ধারণ করার দরকার হয়। এই কাজ করতে হয় পণ্ডিতদের নিয়ে। এটি জনমত জরিপের মতো সম্মিলিত কোনো কাজ নয়। তবে ভাষার অন্য ক্ষেত্রের মতো বানানের ক্ষেত্রেও বৃহত্তর মানুষের প্রবণতাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। ১৯৭৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভাষার গতির স্বাভাবিক ধারার সঙ্গে সংগতি’ রেখে নতুন করে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ ব্যক্তির কাছে বানান বিষয়ে অভিমত জানার জন্য একটি প্রশ্নমালা পাঠানো হয়। সেই কাজ অবশ্য শেষ হতে পারেনি। হলেও যে বানান সুস্থির হতে পারত, তা নয়।

১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে যে বানান সংস্কার করা হয়, সেটি নানা কারণে জনপ্রিয় হয়। এর আগে পাঠ্যবইয়ের বানান একই রকম রাখার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে বিদ্বজ্জনদের নিয়ে কর্মশালা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে তারাও বাংলা একাডেমির বানান মান্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূলত বাংলা একাডেমির বানানকেই অনুসরণ করে। বানানে সমরূপ বিধানের জন্য এটি না করে উপায়ও ছিল না।

কিন্তু গত এক-দেড় দশকের মধ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এমন কিছু বানান প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিকল্প তৈরি করেছে। ফলস্বরূপ, জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও আলোড়ন তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লিখতে থাকা ‘ঈদ’ বানানটি হ্রস্ব-ই দিয়ে ‘ইদ’ করা হয়েছে। ‘গরু’ বানানে ও-কার যোগ করে ‘গোরু’ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি ‘ঈগল’, ‘ছোট’, ‘বড়’ থেকে শুরু করে এ রকম দুই শতাধিক বানানে পরিবর্তন এনেছে। এগুলোকে নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করার কারণে অভিধানের ভেতরে-বাইরে হাজারখানেক বানানে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তাহলে বাংলা বানান কি সংকট নিয়েই চলতে থাকবে? এর সমাধানের কি কোনো উপায় নেই? উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের বানান সংস্কারের নীতি ঠিক করতে হবে। দুটি ই, দুটি উ, দুটি জ, দুটি ন, তিনটি শ কেন দরকার এসব প্রশ্ন যাঁরা তোলেন, তাঁরা আসলে বানানের সঙ্গে ধ্বনির সম্পর্কসূত্র না জেনেই করেন। তাই প্রথম কথা হলো বাংলা বানান নিয়ে কোনো প্রস্তাব করতে হলে বিদ্যমান বর্ণমালাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, প্রচলিত বানানকে অগ্রাহ্য করে নতুন-পুরোনো কোনো নিয়ম দিয়েই বিকল্প তৈরি করা যাবে না। আর যেসব শব্দের বিকল্প তৈরি হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্য রূপটি নির্ধারণের জন্য একাডেমিকে নতুন করে বসতে হবে।

তারিক মনজুর: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম র র জন য ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে আবার ইরানের হামলা, নাগরিকদের নেওয়া হলো সুরক্ষিত এলাকায়

ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ইরান নতুন করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ডের এক মুখপাত্রের বরাতে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এ হামলা ভোর পর্যন্ত চলবে। ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম প্রেস টিভি ও আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজের প্রতিবেদনেও নতুন করে ইসরায়েলে ইরানের হামলা চালানোর কথা বলা হয়েছে। খবর-গার্ড়িয়ান

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলি শহর তেল আবিব ও হাইফা শহরে আঘাত করেছে। এতে চলতি সপ্তাহের জি-৭ বৈঠকে বিশ্ব নেতাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে যে, এই দুই আঞ্চলিক শত্রুর মধ্যে সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বৃহত্তর যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে।

ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত: ইসরায়েলি সেনাবাহিনী
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা ইরান থেকে ছোড়া নতুন ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র শনাক্ত করেছে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আকাশে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

নাগরিকদের সুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান: ইসরায়েলি বাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ইরানের হামলার ব্যাপারে নাগরিকদের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। সাধারণ জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে যেতে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।

পরিস্থিতি মূল্যায়ন করার পর পর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে বলেছে, ‌দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব। নাগরিকরা এখন দেশের সমস্ত অঞ্চলের সুরক্ষিত এলাকা ছেড়ে যেতে পারে।

এর আগে রোববার সোমবার ভোরে ইসরায়েলে ইরানের হামলায় চারজন নিহত ও ৮৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গার্ডিয়ান। এছাড়া বেশ কিছু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়েছে বলে জানিয়েছে।   

ইসরায়েলের ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ) জরুরি পরিষেবা সোমবার জানিয়েছে, মধ্য ইসরায়েলের চারটি স্থানে হামলায় চারজন নিহত এবং ৮৭ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে দুজন মহিলা এবং দুজন পুরুষ, যাদের সকলের বয়স আনুমানিক ৭০ বছর।

নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে: ইরানের আধা-সরকারি বার্তা সংস্থা মেহের নিউজ জানিয়েছে, ইসরায়েলের হাইফা ও তেল আবিব শহর লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। ইসরায়েলে ইরানের হামলায় শুক্রবার থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে।

তেল আবিবের কাছে মধ্য ইসরায়েলি শহর পেতাহ টিকভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সেখানে একটি আবাসিক ভবনে আঘাত করেছে। কংক্রিটের দেয়াল পুড়ে গেছে। জানালা উড়ে গেছে। একাধিক অ্যাপার্টমেন্ট ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটির জরুরি সেবা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলীয় বন্দর শহর হাইফায় হামলায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অনুসন্ধান চলছে। যেখানে প্রায় ৩০ জন আহত হয়েছেন। বন্দরের কাছে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে।

নতি স্বীকারের কোনোও ইচ্ছা নেই: ইরান
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, দেশটি ইসরায়েলে কমপক্ষে ১০০টি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে উত্তেজনা কমানোর জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানের কাছে নতি স্বীকার করার কোনোও ইচ্ছা তাদের নেই। কারণ শুক্রবার তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং সামরিক নেতৃত্বের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক আক্রমণের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা জোর দিয়েছে।

এর আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলা চালায় ইসরায়েল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সংক্ষেপে প্রচারিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বর্তমানে ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তু।’ এতে কিছুক্ষণের জন্য টেলিভিশনটির সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পরে সেটি পুনরায় সম্প্রচারে আসে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের অধীনস্থ ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক (আইআরআইএনএন) জানিয়েছে, তারা ইসরায়েলের হামলার শিকার হয়েছে। গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ।

ইসরায়েলের হামলার পর আগুনে পুড়তে থাকা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন ইরানি রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের এক সাংবাদিক। ভিডিওটিতে ওই সাংবাদিক বলেন, তিনি নিশ্চিত নন—এই হামলায় তার কতজন সহকর্মী নিহত হয়েছেন।

রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে ইসরায়েলি হামলায় সেখানকার বেশ কয়েকজন কর্মী নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং তাদের পরিচয় কী, সে বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কিছু জানাননি কর্মকর্তারা।

টেলিভিশনটির একজন সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন যে, হামলার সময় তারা ভবনটিতে কাজ করছিলেন। তখন সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। কিন্তু আকস্মিক হামলার পর কিছুক্ষণের জন্য সম্প্রচার কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট পর অবশ্য পুনরায় সম্প্রচার কাজ চালু করতে সক্ষম হন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ।

একপর্যায়ে টেলিভিশনটির সম্প্রচার শাখার প্রধান পেমান জেবেলি রক্তমাখা একটি কাগজ নিয়ে পর্দায় হাজির হন। সেটি দেখিয়ে তিনি বলেন, তারা ‘শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে যাবেন’।

গণমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল ‘সত্যের কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার’ চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরান নিউজ নেটওয়ার্ক কর্তৃপক্ষ। ইসরায়েলের হামলার আগ মুহূর্তে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পর্দায় উপস্থাপিকাকে দেখা যাচ্ছিল। হামলার সময় উপস্থাপিকাকে দ্রুত সরে যেতে দেখা যায়। অন্যদিকে, গণমাধ্যম কার্যালয়টি ইরান সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছে ইসরায়েল।

এই হামলার কিছুক্ষণ আগে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিও ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’ বলে হুমকি দিয়েছিলেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। কাৎজের বিবৃতির বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইরানের প্রচারণা ও উসকানির মেগাফোন ‘অদৃশ্য হতে যাচ্ছে’।

এদিকে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ভবনে হামলার কথা স্বীকার করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ। হামলার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, তেহরানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যেতে বলার পরে ওই হামলাটি চালানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ইরানের স্বৈরশাসক যেখানেই থাকুন না কেন, তাকে আঘাত করা হবে। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ