Prothomalo:
2025-06-16@17:03:48 GMT

বাংলা বানানের সংকট কোথায়

Published: 19th, February 2025 GMT

লিখতে গেলেই বানান নিয়ে সংকটে পড়তে হয়। ‘সংকট’ লিখব, নাকি ‘সঙ্কট’ লিখব দেখে নিতে হয়। ‘হলো’ লিখতে শেষে ও-কার হবে কি না, অভিধান খুঁজে দেখতে হয়। ‘তরী’ বা ‘তীর’ বানানে হ্রস্ব ই-কার হয়ে গেছে কি না, কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয়।

আসলে চারদিকে নানা রকম বানান দেখতে দেখতে কোনটা যে তার প্রমিত রূপ, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। অথচ বানান নিয়ে এত সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। এই সংকট তৈরি হওয়ার পেছনে দায় রয়েছে বাংলা একাডেমির। বানান সংস্কারে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা বানানের ইতিহাস ও পরম্পরাকে বিবেচনায় নেননি। মোটাদাগে তাঁরা বানানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, নিয়মের অধীনে বানানকে আনতে চেয়েছেন। যে কারণে বাংলা একাডেমির বানান-পুস্তিকার নাম দিয়েছেন প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম।

বানান যে কোনো নিয়ম মেনে চলে না, এটা কে কাকে বোঝাবে। এমনকি ভাষা ব্যবহারকারী নিয়ম মেনেও বানান লেখেন না। অথচ এই সূত্র ধরে বানানের নিয়মের ওপর অনেক বই বাজারে এসেছে। সেসব বই কিনে কৌতূহলী পাঠক বানানের নিয়মও মুখস্থ করেছেন; কিন্তু নিজের দ্বিধা কাটাতে পারেননি। বানানে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে গেলেই যে সংকট তৈরি হয়, সেটি কেউ বুঝতেই চান না। ১৯৩৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যে বানান সংস্কার কমিটি করা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল—বানানে বিকল্প বর্জন, বানানের নিয়ম প্রণয়ন করা নয়।

একই শব্দের একাধিক বানান থাকলে লিখতে গেলে সংকটে পড়তে হয়। তাই একটি রূপকে প্রামাণ্য হিসেবে নির্ধারণ করার দরকার হয়। এই কাজ করতে হয় পণ্ডিতদের নিয়ে। এটি জনমত জরিপের মতো সম্মিলিত কোনো কাজ নয়। তবে ভাষার অন্য ক্ষেত্রের মতো বানানের ক্ষেত্রেও বৃহত্তর মানুষের প্রবণতাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। ১৯৭৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভাষার গতির স্বাভাবিক ধারার সঙ্গে সংগতি’ রেখে নতুন করে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ ব্যক্তির কাছে বানান বিষয়ে অভিমত জানার জন্য একটি প্রশ্নমালা পাঠানো হয়। সেই কাজ অবশ্য শেষ হতে পারেনি। হলেও যে বানান সুস্থির হতে পারত, তা নয়।

১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে যে বানান সংস্কার করা হয়, সেটি নানা কারণে জনপ্রিয় হয়। এর আগে পাঠ্যবইয়ের বানান একই রকম রাখার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে বিদ্বজ্জনদের নিয়ে কর্মশালা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে তারাও বাংলা একাডেমির বানান মান্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূলত বাংলা একাডেমির বানানকেই অনুসরণ করে। বানানে সমরূপ বিধানের জন্য এটি না করে উপায়ও ছিল না।

কিন্তু গত এক-দেড় দশকের মধ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এমন কিছু বানান প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিকল্প তৈরি করেছে। ফলস্বরূপ, জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও আলোড়ন তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লিখতে থাকা ‘ঈদ’ বানানটি হ্রস্ব-ই দিয়ে ‘ইদ’ করা হয়েছে। ‘গরু’ বানানে ও-কার যোগ করে ‘গোরু’ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি ‘ঈগল’, ‘ছোট’, ‘বড়’ থেকে শুরু করে এ রকম দুই শতাধিক বানানে পরিবর্তন এনেছে। এগুলোকে নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করার কারণে অভিধানের ভেতরে-বাইরে হাজারখানেক বানানে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তাহলে বাংলা বানান কি সংকট নিয়েই চলতে থাকবে? এর সমাধানের কি কোনো উপায় নেই? উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের বানান সংস্কারের নীতি ঠিক করতে হবে। দুটি ই, দুটি উ, দুটি জ, দুটি ন, তিনটি শ কেন দরকার এসব প্রশ্ন যাঁরা তোলেন, তাঁরা আসলে বানানের সঙ্গে ধ্বনির সম্পর্কসূত্র না জেনেই করেন। তাই প্রথম কথা হলো বাংলা বানান নিয়ে কোনো প্রস্তাব করতে হলে বিদ্যমান বর্ণমালাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, প্রচলিত বানানকে অগ্রাহ্য করে নতুন-পুরোনো কোনো নিয়ম দিয়েই বিকল্প তৈরি করা যাবে না। আর যেসব শব্দের বিকল্প তৈরি হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্য রূপটি নির্ধারণের জন্য একাডেমিকে নতুন করে বসতে হবে।

তারিক মনজুর: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম র র জন য ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ, ১২ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন

আগামী বছরে হজে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশি হজযাত্রীদের চলতি বছরের ১২ অক্টোবরের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে হবে। একই সঙ্গে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মে হজযাত্রীদের তথ্য আপলোড এবং গ্রুপ গঠন শুরু করতে হবে।

এই সময়সীমা বে‌ধে দি‌য়ে গত ৮ জুন ২০২৬ সালের হজের রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে সৌদি সরকার।

রোডম‌্যা‌পের নি‌র্দেশনা অনুযায়ী সৌদি সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ৯ ন‌ভেম্বর হজচুক্তি সম্পন্ন হ‌বে। আগামী ১০ জুলাই হজের কোটা ঘোষণা করবে সৌদি সরকার। তাছাড়া বা‌ড়ি ভাড়া, প‌রিবহনসহ অন‌্যান‌্য প্রক্রিয়া শেষ করার পর হজযাত্রীদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে ২০২৬ সা‌লের ৮ ফেব্রুয়ারি। ভিসা দেওয়ার কার্যক্রম চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত এবং হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১৮ এপ্রিল।

আরো পড়ুন:

ইউরোপীয় গুপ্তচর যেভাবে মক্কায় ঢুকেছিলেন

প্রথম ফিরতি ফ্লাইটে দেশে ফিরলেন ৩৬৯ হাজি

এদিকে, হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) ও হজ কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সৌ‌দি সরকা‌রের হ‌জের রোডম‌্যা‌প অবহিত ক‌রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার (১৫ জুন) ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে চি‌ঠি পাঠানো হয়েছে।

ধর্ম মন্ত্রণালয়ের চি‌ঠি‌তে আরও বলা হ‌য়ে‌ছে, মেডিকেল ফিটনেস ছাড়া কোনো হজযাত্রী হজে যেতে পারবেন না। বিশেষ করে হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগে আক্রান্ত, নিউরোলজিক্যাল, মানসিক রোগ, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা, সংক্রামক যক্ষ্মা এবং কেমোথেরাপি/রেডিওথেরাপি গ্রহণকারী ক্যানসার আক্রান্ত রোগী হজের নিবন্ধন করতে পারবেন না।

সৌ‌দি স‌রকা‌রের রোডম্যাপ অনুযায়ী, নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ক্যাম্পের তথ্য অবলোকন এবং অর্থ স্থানান্তরের সুবিধা চালু হবে ২৬ জুলাই। ৯ থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত চলতি হজের ক্যাম্পগুলো আগামী হজ মৌসুমে গ্রহণের সুযোগ থাকবে। নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে (ক্যাম্পের ভাড়া ও মাশায়ের প্যাকেজ) চুক্তি করা যাবে।
২৪ আগস্টের মধ্যে নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সেবা প্যাকেজ, আবাসন এবং পরিবহনের চুক্তি শুরু এবং হজযাত্রী পরিবহনের এয়ারলাইন্স নিয়োগ ও ফ্লাইট সময়সূচি প্রস্তুত করতে হবে। ৯ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকার ও সৌদি সরকারের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক হজচুক্তি স্বাক্ষর হবে।

‘হজ সম্মেলন ও প্রদর্শনীতে’ সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সেবা চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে সেবা প্যাকেজের (তাঁবু ভাড়া মাশায়ের প্যাকেজ) প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠাতে হবে।

আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে সেবা গ্রহণের (তাঁবু ভাড়া+মাশায়ের প্যাকেজ) চূড়ান্ত চুক্তি সম্পন্ন করতে হবে। একইসঙ্গে এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইট সিডিউল চূড়ান্ত করতে হবে। আগামী বছর ২০ জানুয়ারি মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের বাড়ি/হোটেল এবং পরিবহন চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ স্থানান্তর শুরু হবে।

নুসুক মাসার প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি/হোটেল ভাড়া এবং পরিবহনের চুক্তি চূড়ান্ত করতে হবে। ৮ ফেব্রুয়ারি হজযাত্রীদের ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে এবং চলবে ২০ মার্চ পর্যন্ত।

রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী বছরের ১৮ এপ্রিল হজের উদ্দেশ্যে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাওয়ার ফ্লাইট শুরু হবে। ২০২৬ সালের হজে হজযাত্রীদের জন্য সর্বোচ্চ দুইটি সার্ভিস কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা যাবে। নুসুক মাসার প্লাটফর্মে আগামী ১০ জুলাই হজ কোটা ঘোষণা করা হবে।

আগামী বছরের হজে সব ধরনের চুক্তি এবং সেবা সংক্রান্ত পেমেন্ট নুসুক মাসার প্লাটফর্মে সম্পন্ন করতে হবে। এর বাইরে কোনো পেমেন্ট কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। সব হজযাত্রীর কোরবানির অর্থ নুসুক মাসার প্লাটফর্মে আবশ্যিকভাবে জমা দিতে হবে। হজযাত্রীদের খাবারের জন্য সৌদি ক্যাটারিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। এছাড়া হজযাত্রী ব্যবস্থাপনার কাজে হজে গমনকারীদের তাঁবু, সার্ভিস প্যাকেজ এবং পরিবহন সেবামূল্য দেওয়া বাধ্যতামূলক।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ