Prothomalo:
2025-05-01@05:03:45 GMT

বাংলা বানানের সংকট কোথায়

Published: 19th, February 2025 GMT

লিখতে গেলেই বানান নিয়ে সংকটে পড়তে হয়। ‘সংকট’ লিখব, নাকি ‘সঙ্কট’ লিখব দেখে নিতে হয়। ‘হলো’ লিখতে শেষে ও-কার হবে কি না, অভিধান খুঁজে দেখতে হয়। ‘তরী’ বা ‘তীর’ বানানে হ্রস্ব ই-কার হয়ে গেছে কি না, কাউকে জিজ্ঞাসা করতে হয়।

আসলে চারদিকে নানা রকম বানান দেখতে দেখতে কোনটা যে তার প্রমিত রূপ, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়তে হয়। অথচ বানান নিয়ে এত সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। এই সংকট তৈরি হওয়ার পেছনে দায় রয়েছে বাংলা একাডেমির। বানান সংস্কারে যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরা বানানের ইতিহাস ও পরম্পরাকে বিবেচনায় নেননি। মোটাদাগে তাঁরা বানানের নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন, নিয়মের অধীনে বানানকে আনতে চেয়েছেন। যে কারণে বাংলা একাডেমির বানান-পুস্তিকার নাম দিয়েছেন প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম।

বানান যে কোনো নিয়ম মেনে চলে না, এটা কে কাকে বোঝাবে। এমনকি ভাষা ব্যবহারকারী নিয়ম মেনেও বানান লেখেন না। অথচ এই সূত্র ধরে বানানের নিয়মের ওপর অনেক বই বাজারে এসেছে। সেসব বই কিনে কৌতূহলী পাঠক বানানের নিয়মও মুখস্থ করেছেন; কিন্তু নিজের দ্বিধা কাটাতে পারেননি। বানানে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করতে গেলেই যে সংকট তৈরি হয়, সেটি কেউ বুঝতেই চান না। ১৯৩৫ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে যে বানান সংস্কার কমিটি করা হয়েছিল, তার উদ্দেশ্য ছিল—বানানে বিকল্প বর্জন, বানানের নিয়ম প্রণয়ন করা নয়।

একই শব্দের একাধিক বানান থাকলে লিখতে গেলে সংকটে পড়তে হয়। তাই একটি রূপকে প্রামাণ্য হিসেবে নির্ধারণ করার দরকার হয়। এই কাজ করতে হয় পণ্ডিতদের নিয়ে। এটি জনমত জরিপের মতো সম্মিলিত কোনো কাজ নয়। তবে ভাষার অন্য ক্ষেত্রের মতো বানানের ক্ষেত্রেও বৃহত্তর মানুষের প্রবণতাকে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই। ১৯৭৯ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ভাষার গতির স্বাভাবিক ধারার সঙ্গে সংগতি’ রেখে নতুন করে বানান সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছিল। তখন প্রায় ২০০ ব্যক্তির কাছে বানান বিষয়ে অভিমত জানার জন্য একটি প্রশ্নমালা পাঠানো হয়। সেই কাজ অবশ্য শেষ হতে পারেনি। হলেও যে বানান সুস্থির হতে পারত, তা নয়।

১৯৯২ সালে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে যে বানান সংস্কার করা হয়, সেটি নানা কারণে জনপ্রিয় হয়। এর আগে পাঠ্যবইয়ের বানান একই রকম রাখার জন্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে বিদ্বজ্জনদের নিয়ে কর্মশালা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে তারাও বাংলা একাডেমির বানান মান্য করার সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মূলত বাংলা একাডেমির বানানকেই অনুসরণ করে। বানানে সমরূপ বিধানের জন্য এটি না করে উপায়ও ছিল না।

কিন্তু গত এক-দেড় দশকের মধ্যে বাংলা একাডেমির উদ্যোগে এমন কিছু বানান প্রস্তাব করা হয়েছে, যা বিকল্প তৈরি করেছে। ফলস্বরূপ, জনমানুষের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ও আলোড়ন তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লিখতে থাকা ‘ঈদ’ বানানটি হ্রস্ব-ই দিয়ে ‘ইদ’ করা হয়েছে। ‘গরু’ বানানে ও-কার যোগ করে ‘গোরু’ করা হয়েছে। বাংলা একাডেমি ‘ঈগল’, ‘ছোট’, ‘বড়’ থেকে শুরু করে এ রকম দুই শতাধিক বানানে পরিবর্তন এনেছে। এগুলোকে নিয়ম দিয়ে ব্যাখ্যা করার কারণে অভিধানের ভেতরে-বাইরে হাজারখানেক বানানে দ্বিধা তৈরি হয়েছে।

তাহলে বাংলা বানান কি সংকট নিয়েই চলতে থাকবে? এর সমাধানের কি কোনো উপায় নেই? উপায় আছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমেই আমাদের বানান সংস্কারের নীতি ঠিক করতে হবে। দুটি ই, দুটি উ, দুটি জ, দুটি ন, তিনটি শ কেন দরকার এসব প্রশ্ন যাঁরা তোলেন, তাঁরা আসলে বানানের সঙ্গে ধ্বনির সম্পর্কসূত্র না জেনেই করেন। তাই প্রথম কথা হলো বাংলা বানান নিয়ে কোনো প্রস্তাব করতে হলে বিদ্যমান বর্ণমালাকে অগ্রাহ্য করা যাবে না। দ্বিতীয়ত, প্রচলিত বানানকে অগ্রাহ্য করে নতুন-পুরোনো কোনো নিয়ম দিয়েই বিকল্প তৈরি করা যাবে না। আর যেসব শব্দের বিকল্প তৈরি হয়েছে, সেগুলোর গ্রহণযোগ্য রূপটি নির্ধারণের জন্য একাডেমিকে নতুন করে বসতে হবে।

তারিক মনজুর: অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এক ড ম র র জন য ব কল প

এছাড়াও পড়ুন:

একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা

হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।

চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।

শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।

আরো পড়ুন:

বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি

ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা

সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।

শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’

শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন  রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’

চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’

ঢাকা/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ