ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই বাড়তি উত্তেজনা, উন্মাদনা। সম্মানের লড়াই। এই ম্যাচে ঝুঁকি নিতে চায় না কোনও দল। আজ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে মুখোমুখি হবে পাকিস্তান-ভারত। তার আগে আলোচনায় এই মহারণে কেমন হবে দুই দলের একাদশ।

এই ম্যাচে পাকিস্তানকে হারাতে পারলেই সেমিফাইনালের পথে আরও খানিকটা এগিয়ে যাবে ভারতীয় দল। সম্ভবত এই ম্যাচে পরীক্ষার পথে হাঁটবেন না গৌতম গম্ভীর। বাংলাদেশের বিপক্ষে জেতা একাদশকেই মাঠে নামাবেন ভারতীয় দলের কোচ। ইনিংস শুরু করবেন রোহিত এবং শুভমন গিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে দুজন ভাল শুরু করেছিলেন। তাই পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। 

তিন নম্বরে বিরাট কোহলি নিশ্চিত। তারপর আসবেন শ্রেয়স আইয়ার। ব্যাটিং অর্ডারের পাঁচ নম্বরে আসবেন অক্ষর পটেল। ছয় নম্বরে আসবেন লোকেশ রাহুল। তিনিই উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন। ভারতের ব্যাটিং অর্ডারের সাত এবং আট নম্বরে থাকবেন দুই অলরাউন্ডার। সাত নম্বরে থাকবেন হার্দিক পান্ডিয়া। আট নম্বরে নামবেন রবীন্দ্র জাডেজা। শেষ তিনটি জায়গা বিশেষজ্ঞ বোলারদের। ব্যাটিং অর্ডারের নয় থেকে ১১ নম্বরে নামবেন হর্ষিত রানা, কুলদীপ যাদব এবং মোহম্মদ শামি। এই ম্যাচেও খেলার সম্ভাবনা নেই অর্শদীপ সিংহ, ঋষভ পন্থ, ওয়াশিংটন সুন্দরের।

অন্যদিকে ভারত ম্যাচের আগে আলোচনায় বাবর আজম। গতকাল দলের অনুশীলনে ছিলেন না তিনি। তাই স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বাবর থাকবেন তো একাদশে? পাকিস্তান দলে একটি পরিবর্তন আনতেই হবে। চোটের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া ওপেনার ফখরের জায়গায় স্কোয়াডে এসেছেন ইমাম-উল-হক। দলে আছেন আরেক ওপেনার উসমান খানও। এরপরও আজ ইমামের খেলার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ, উসমানের এখনো ওয়ানডে অভিষেক হয়নি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তিনি ব্যাটিং করেন ৪ নম্বরে। বাবরের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানায়নি পিসিবি। তিনি যদি খেলেন তাহলে ইমামের সঙ্গে ওপেন করবেন তিনি। গত ম্যাচে ওপেন করা সৌদ শাকিল ফিরতে পারেন তিন নম্বরে। চার নম্বরে রিজওয়ান ও পাঁচ নম্বরে খেলবেন সালমান আগা।

দল থেকে বাদ পড়তে পারেন তৈয়ব তাহির। তার জায়গায় ফিরতে পারেন কামরান গুলাম। গত ম্যাচে ফিফটি করা খুশদিল শাহ খেলবেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। যথারীতি থাকবেন তিন পেসার শাহিন আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ ও এক স্পিনার আবরার আহমেদ। দুবাইয়ের উইকেটের সুবিধা নিতে চাইলেও আরেক বিশেষজ্ঞ স্পিনার খেলানোর সুযোগ তাদের নেই। স্কোয়াডেই তো আছেন শুধু বিশেষজ্ঞ স্পিনার একজন - আবরার।

পাকিস্তানের সম্ভাব্য একাদশ: মোহাম্মদ রিজওয়ান (অধিনায়ক), আগা সালমান, বাবর আজম, ইমাম-উল-হক, কামরান গুলাম, সৌদ শাকিল, খুশদিল শাহ, আবরার আহমেদ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ, হারিস রউফ।

ভারতের সম্ভাব্য একাদশ: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), বিরাট কোহলি, শুবমান গিল (সহ-অধিনায়ক), শ্রেয়াস আইয়ার, লোকেশ রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, হর্ষিত রানা, মোহাম্মদ শামি, রবীন্দ্র জাদেজা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এই ম য চ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ