এফবিআইপ্রধান ক্যাশ প্যাটেলকে মাদক, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্রবিষয়ক ব্যুরোর দায়িত্বও দিচ্ছেন ট্রাম্প
Published: 23rd, February 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) নতুন পরিচালক হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পর ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন ক্যাশ প্যাটেলকে এবার দেশটির মাদক, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যুরোর (এটিএফ) ভারপ্রাপ্ত প্রধান করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অবগত আছেন এমন একজন কর্মকর্তা গতকাল শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিএফের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন ও অযৌক্তিক কারণে লাইসেন্স বাতিল করার সমালোচনা করেছিলেন।ক্যাশ প্যাটেল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একজন অনুগত ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে প্রভাবশালী আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এফবিআইয়ের নেতৃত্ব দেবেন তিনি। তাঁকে এমন এক সময় এ সংস্থার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন পুরো ফেডারেল সরকারে ব্যাপক রদবদল ঘটাচ্ছে। এবার তাঁকে এটিএফের নেতৃত্ব দেওয়ার ভারও দিচ্ছেন প্রেসিডেন্ট। এ ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রের আগ্নেয়াস্ত্র–সংক্রান্ত আইন কার্যকর করে থাকে।
তবে ক্যাশ প্যাটেলের মনোনয়নের ঘোর বিরোধিতা করেছেন ডেমোক্র্যাট নেতারা ছাড়াও মধ্যপন্থী দুজন রিপাবলিকান নেতা। তাঁরা বলেছেন, প্যাটেল অতীতে ট্রাম্পের সমালোচকদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার ডাক দেওয়ায় তিনি এফবিআই চালানোর জন্য উপযুক্ত নন। তবে এ যুক্তি রিপাবলিকানদের ব্যাপক সমর্থন পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকারের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়ে ক্যাশ প্যাটেল আগেই লবি গ্রুপ ‘গান ওনার্স অব আমেরিকা’র সমর্থন পেয়েছেন। এখন আগ্নেয়াস্ত্র–সংক্রান্ত ব্যুরোকে ঢেলে সাজানোর কাজে তিনি নেতৃত্ব দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে; যা সংস্থাটির আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণবিষয়ক মূল কাজের অনেকটাই বাইরের।
পামেলা হিকসকে বরখাস্ত করা হয়েছে; কারণ, ‘এ ব্যক্তিরা আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের নিশানা করছিলেন’।পাম বন্ডি, মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেলগত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার চলাকালে ডোনাল্ড ট্রাম্প এটিএফের বিরুদ্ধে আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন ও অযৌক্তিক কারণে লাইসেন্স বাতিল করার সমালোচনা করেছিলেন।
আরও পড়ুনপেন্টাগনে অস্থিরতা: শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনইউএসএআইডির মহাপরিদর্শক বরখাস্ত১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত বৃহস্পতিবার এটিএফের দীর্ঘদিনের মুখ্য পরামর্শক পামেলা হিকসকে আচমকা বরখাস্ত করেন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি। কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া বা সতর্ক করা ছাড়াই তাঁকে এটিএফের ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয় বলে জানায় ঘটনাটি সম্পর্কে জানাশোনা রয়েছে এমন একটি সূত্র।
পরে বন্ডি ফক্স নিউজকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, হিকসকে বরখাস্ত করা হয়েছে; কারণ, ‘এ ব্যক্তিরা আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের নিশানা করছিলেন’।
ট্রাম্প প্রশাসনের যে কজন কর্মকর্তা দ্বৈত ভূমিকা পালন করবেন, ক্যাশ প্যাটেল তাঁদের একজন।
আরও পড়ুনবাইডেনের আমলে নিয়োগ পাওয়া সব অ্যাটর্নিকে বরখাস্ত করার আদেশ ট্রাম্পের১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুন৫০ বছরের মধ্যে সর্বাধিক কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা সিআইএর২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দারফুরে ধর্ষণ-মুক্তিপণ-হত্যা: আরএসএফের ভয়াবহ নিপীড়নের বর্ণনা দিলেন পালিয়ে আসা মানুষেরা
সুদানের পশ্চিমাঞ্চলীয় দারফুর শহরে আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্স (আরএসএফ)–এর কাছ থেকে পালিয়ে আসা ক্ষুধার্ত এবং নির্যাতিত মানুষেরা বিভিন্ন সংস্থা ও সংবাদমাধ্যমের কাছে তাঁদের ভয়ংকর অভিজ্ঞতাগুলো বর্ণনা করছেন। তবে তাঁরা পালাতে পারলেও হাজার হাজার মানুষ এখনো নিখোঁজ রয়েছেন।
উত্তর দারফুরের রাজধানী এল-ফাশের শহর ছিল রাজ্যটিতে সুদানি সেনাবাহিনীর সর্বশেষ ঘাঁটি। গত রোববার আরএসএফ বাহিনী এটির দখল নেয়। এরপর থেকে জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা স্থানীয় মানুষের পরিণতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। এরই মধ্যে দারফুরে ধর্ষণ, মুক্তিপণ ও গণহত্যাসহ অন্যান্য নির্যাতনের কথা সামনে আসছে।
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
ইসমাইল বলেন, ‘খার্তুমের বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সঙ্গে পড়াশোনা করেছেন এমন একজন তরুণ সেখানে ছিলেন। তিনি তাঁদের বললেন, “ওকে হত্যা করো না”। এরপর তাঁরা আমার সঙ্গে থাকা সব তরুণ ও আমার বন্ধুদের হত্যা করেন।’
তাবিলা এলাকায় পালিয়ে আসা অন্য নাগরিকেরাও তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তেমনই একজন তাহানি হাসান। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ করেই তাঁরা সেখানে হাজির হলেন। কোথা থেকে এলেন জানি না। ভিন্ন ভিন্ন বয়সী তিন তরুণকে দেখা গেল। তাঁরা আকাশে গুলি ছুড়লেন এবং বললেন, ‘থামো, থামো’। তাঁরা আরএসএফের পোশাকে ছিলেন।’
আলখেইর ইসমাইল নামের এক সুদানি তরুণ দারফুর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার (৩১ মাইল) দূরের তাবিলা শহরে পালিয়ে এসেছেন। আলখেইর বলেছেন, রোববার এল-ফাশের থেকে পালানোর চেষ্টা করার সময় ৩০০ জনকে আটক করে আরএসএফ। তিনিও ওই দলে ছিলেন। তবে আটককারীদের একজন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।তাহানি হাসান বলেন, ‘এই তরুণেরা আমাদের বেধড়ক মারধর করেছেন। আমাদের পোশাক মাটিতে ছুড়ে ফেলেছেন। এমনকি আমি একজন নারী হওয়ার পরও আমাকে তল্লাশি করা হয়েছে। হামলাকারীরা সম্ভবত বয়সে আমার মেয়ের চেয়েও ছোট হবে।’
ফাতিমা আবদুলরহিম তাঁর নাতি–নাতনিদের সঙ্গে তাবিলাতে পালিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, পাঁচ দিন ধরে অনেক কষ্ট করে হেঁটে তাবিলাতে পৌঁছাতে পেরেছেন।
ফাতিমা বলেন, ‘তাঁরা (আরএসএফের সদস্যরা) ছেলেশিশুগুলোকে মারলেন এবং আমাদের সব সম্পদ কেড়ে নিলেন। আমাদের কিছুই রাখা হলো না। আমরা এখানে পৌঁছানোর পর জানতে পারলাম, আমাদের পর যেসব মেয়ে এসেছে, তাদের ধর্ষণ করা হয়েছে। তবে আমাদের মেয়েরা বেঁচে গেছে।’
পালিয়ে আসা তরুণী রাওয়া আবদাল্লা বলেছেন, তাঁর বাবা নিখোঁজ।
গত বুধবার রাতে দেওয়া এক বক্তৃতায় আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালো বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য তাঁর যোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। হামদান ‘হেমেদতি’ নামেও পরিচিত।
২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে সুদানি সেনাদের সঙ্গে আরএসএফ সদস্যদের লড়াই চলছে। গত বৃহস্পতিবার আরএসএফ দাবি করে, নির্যাতনের অভিযোগে বেশ কয়েকজন যোদ্ধাকে আটক করেছে তারা।
তবে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তাবিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার সাধারণ নাগরিকদের ওপর আরএসএফ সদস্যদের নিপীড়নের অভিযোগ তদন্তে বাহিনীটির দেওয়া প্রতিশ্রুতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আরএসএফের একজন উচ্চপদস্থ কমান্ডার এই ঘটনাগুলো ‘গণমাধ্যমের অতিরঞ্জন’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাঁর দাবি, এল–ফাশেরে নিজেদের পরাজয় ও ক্ষয়ক্ষতি আড়াল করতে সেনাবাহিনী এবং তাদের মিত্ররা এমন অপপ্রচার চালাচ্ছে।
জাতিসংঘের তথ্য বলছে, এ সংঘাত চলাকালে আরএসএফ ও সেনাবাহিনী—দুই পক্ষের বিরুদ্ধেই অভিযোগ উঠেছে। সংঘাতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। সংঘাতকে কেন্দ্র করে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। বিরাজ করছে ব্যাপক দুর্ভিক্ষের অবস্থা। পাশাপাশি কলেরা ও অন্যান্য প্রাণঘাতী রোগের সংক্রমণ বাড়ছে।
দারফুর থেকে পালিয়ে আসা লোকজন তাবিলা এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন। ২৯ অক্টোবর, ২০২৫