রমজানে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখতে চাঁদপুরে প্রশাসনিক কড়াকড়ি
Published: 23rd, February 2025 GMT
আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে নিত্যপণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা এবং সরবরাহ চলমান রাখতে চাঁদপুরের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে পুরানবাজারে চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে এ সভা হয়।
এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, “বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে দোকানপাটে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আলোকসজ্জ্বা করা যাবে না। ইউরিয়াযুক্ত মুড়ি বেচাকেনা বন্ধ রাখতে হবে। পুরানবাজারের ১৭টি চালকলসহ কারখানাগুলো যেন নির্দিষ্ট সময়ে বন্ধ ও চালু রাখে সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হবে। এতে তারাবির নামাজের সময় মসজিদগুলোতে মুসুল্লিদের নামাজের সময় লোডশেডিং এড়ানো সম্ভব।”
তিনি আরও বলেন, “বাজার স্মিতিশীল রাখতে সাপ্লাই চেইনটা ঠিক রাখতে হবে। এতে করে গরিব অসহায়রা সবাই রমজানে দ্রব্যমূল্য ক্রয়ে স্বস্তি পাবেন। বাজার ঠিক রাখতে আমি সবার সহায়তা চাই।”
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, “দুর্ঘটনা এড়াতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঢুকার রাস্তাসহ গতিবিধি লক্ষ্য রাখার মতো ভালোমানের সিসি ক্যামেরা লাগাতে হবে। আর সেই সিসি ক্যামেরার ভিডিও অন্তত ১ মাস রাখার মতো স্টোরেজ ব্যবহার করতে হবে। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র দোকানগুলোতে রাখুন। ব্যাংক বা এজেন্টে লেনদেন করার সময় একা না গিয়ে বিশ্বাসযোগ্য ২/৩ জন একসাথে যান। মুনাফা লাভের জন্য পণ্য সংকট সৃষ্টির সুনির্দিষ্ট খবর পেলেও ব্যবস্থা নেব।”
চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং পরিচালক তমাল কুমার ঘোষের সঞ্চালনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোস্তাফিজুর রহমান, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক মাইনুল ইসলাম কিশোর, লিয়াকত হোসেন পাটোয়ারী, হযরত আলী, নাজমূল আলম পাটোয়রীসহ অন্যরা।
সভায় ব্যবসায়ীক বিভিন্ন সেক্টরের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন এবং রমজানে পণ্য সংকট সৃষ্টি করবেন না ও সীমিত লাভে পণ্য বিক্রির অঙ্গীকার করেন।
ঢাকা/অমরেশ/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে
সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’
বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।
এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।
এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’
আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।
শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।