শহীদ মিনারের স্বীকৃতি মিলবে কত যুগ পর
Published: 27th, February 2025 GMT
তখন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের এক যুগ হয়ে গেছে। এ আন্দোলনে চট্টগ্রামের ভূমিকা গৌরবময়। ভাষাশহীদদের স্মরণে ১৯৬৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে বোয়ালখালী উপজেলার কধুরখীল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করেন কয়েক ছাত্র। তাদের কয়েকজনকে এ জন্য বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃতও হতে হয়। এটিই দেশের বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে জানিয়েছেন কয়েকজন গবেষক। অথচ স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই ঘটনার।
মহান একুশের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রকাশিত এমএ বার্ণিকের লেখা ‘জেলায় জেলায় শহীদ মিনার’ গ্রন্থের ৮৯৭ নম্বর পৃষ্ঠায় কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মিত শহীদ মিনারটিকে দেশের বিদ্যালয় পর্যায়ে নির্মিত প্রথম শহীদ মিনার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা এটি ভেঙে ফেলে। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭২ সালে শহীদ মিনারটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। ঐতিহাসিক শহীদ মিনারে তিনটি ত্রিকোণাকৃতির স্তম্ভ রয়েছে, যেগুলো দেখতে পিরামিডের মতো। বেদির নিচে লেখা ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’।
কয়েকজন দুঃসাহসী শিক্ষার্থী হারিকেনের আলোয় গাছের গুঁড়ি, ইট, পাথর, সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করেন ওই শহীদ মিনার। যদিও এটি নির্মাণের পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরাও মানা করেছিলেন। তাদের আশঙ্কা ছিল, এটি নির্মিত হলে বন্ধ হয়ে যাবে অনুদান।
এই শহীদ মিনারের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চেয়ে কয়েকবার বাংলা একাডেমির কাছে আবেদন করলেও মেলেনি ইতিবাচক সাড়া। এটি নির্মাণে নেতৃত্ব দানকারীদের অন্যতম নুরুল হুদা ও সৈয়দুল আলম মৃত্যুর আগে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেখে যাওয়া আকুতি জানিয়েও পারেননি। ২০২৩ সালের অক্টোবরে সৈয়দুল আলম ও ২০২২ সালের জানুয়ারিতে মারা যান নুরুল হুদা। এরও আগে মারা যান শহীদ মিনারটি তৈরির সময় বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে কর্মরত রঞ্জিত কুমার।
স্থানীয় বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মো.
কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, এটি নির্মাণে জড়িত অনেকেই সাক্ষ্য দিয়েছেন– দেশের বিদ্যালয়ে নির্মিত এটিই প্রথম শহীদ মিনার। বিভিন্ন বইয়েও এর উল্লেখ আছে। বাংলা একাডেমির কাছে স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে লিখিত আবেদনও করা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়া দুর্ভাগ্যের।
বোয়ালখালী থেকে সম্প্রতি বদলি হওয়া ইউএনও হিমাদ্রী খীসা বলেন, ‘শহীদ মিনারটি কেবল বোয়ালখালী বা চট্টগ্রামবাসীর নয়; এটি সারাদেশের ঐতিহ্যের স্মারক। একাধিক ইউএনও স্বীকৃতির দাবিতে নানা মহলে চিঠি দেন বলে জেনেছি। স্থানীয় বাসিন্দারাও কর্মসূচিও পালন করেছেন। এখনও মেলেনি
কাঙ্খিত স্বীকৃতি।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না, মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন: সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, 'আমাদের একটা অভ্যাস হয়ে গেছে একটা নেতিবাচক সংবাদ দেখলেই যাচাই-বাছাই না করে শেয়ার করে দেওয়া হয়। অত্যন্ত ভিত্তিহীন সংবাদও আমরা শেয়ার করে দেই।'
সিইসি বলেন, 'দয়া করে সত্য মিথ্যা যাচাই না করে শেয়ার করবেন না। এই মেসেজটা তৃণমূলে ছড়িয়ে দিন। তথ্যটা যেন আগে যাচাই করে তারপরে শেয়ার করেন।'
আজ সোমবার রাজধানীর ভাটারায় আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নে (এজিবি) এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন সিইসি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ভুয়া সংবাদের প্রচার ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অপপ্রয়োগ রোধে করণীয় সম্পর্কে তিনি এসব কথা বলেন।
থানা আনসার কোম্পানি/প্লাটুন সদস্যদের আনসার মৌলিক প্রশিক্ষণের (৪র্থ ধাপ) সমাপনী উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিইসি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো সংবাদ দেখা মাত্রই নাগরিকদের যাচাইবাছাই করতে আহ্বান জানান সিইসি। নিশ্চিত হওয়ার আগে শেয়ার না করতে বলেন তিনি।
জাতীয় নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে আনসার ভিডিপির ভূমিকাকে মূল শক্তি বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি বলেন, 'এনারাই অধিক সংখ্যায় নিয়োজিত থাকেন। এবং আমাদের হিসেব করতে গেলে প্রথম এদেরকেই হিসেব করতে হয় যে, কতজন আনসার ভিডিপি সদস্য আমরা মোতায়েন করতে পারব। মূল কাজটা আঞ্জাম (সম্পাদন) দিতে হয় কিন্তু আনসার এবং ভিডিপির সদস্যদের।'
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। নির্বাচনকালীন জনগণের নিরাপত্তা, ভোট কেন্দ্রের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে আনসার বাহিনী সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করছে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ আনসার ও ভিডিপি সদস্য দায়িত্বপালন করবেন বলেন মহাপরিচালক।
অনুষ্ঠানে মহড়ায় ঢাকা মহানগর আনসারের চারটি জোনের অধীন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৩২০ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্য অংশ নেন। আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা টহল, দায়িত্ব বণ্টন ও জরুরি প্রতিক্রিয়া অনুশীলনে অংশ নেন।
মহড়ায় ভোটকেন্দ্রে নির্বাচনী সরঞ্জামাদি নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া, ভোটারদের শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে ভোট প্রদানে সহায়তা, জাল ভোট প্রতিরোধ, প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা এবং সেনা, বিজিবি, র্যাব ও পুলিশের সঙ্গে দ্রুত সমন্বয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন জোনের অধিনায়ক এবং প্রশিক্ষণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।