‘রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে জনআকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটবে না’
Published: 28th, February 2025 GMT
রমজানের পবিত্রতা রক্ষা এবং জনরিাপত্তায় রক্ষায় কার্যকরি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেছেন, “রাষ্ট্র সংষ্কারের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে নির্বাচন দিতে হবে। সংষ্কার ছাড়া নির্বাচন দিলে সেই নির্বাচন ফলপ্রসূ হবে না। ফ্যাসিবাদমুক্ত দেশ গঠন করাও সম্ভব হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জনগণের অনেক আশা আকাঙ্খা ছিল। কিন্তু জননিরাপত্তাহীনতায় দেশের মানুষ চরম উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে।”
মাহে রমজানকে স্বাগত জানিয়ে ও রমজান মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার নাগালে রাখার দাবিতে শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রিন্সিপাল মাদানী বলেন, “তাকওয়া ও আত্মশুদ্ধি অর্জনের মাস হলো রমজান। রমজান মাস মুমিনের জন্য সুসংবাদ বয়ে আনে।কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো রমজান আসলে মানুষের মধ্যে এক ধরনের হাহাকার, দুঃখ-কষ্টের সীমা থাকে না। পৃথিবীর দেশে দেশে রমজান আসলে নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়। বাজার ব্যবস্থা কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কিন্তু ব্যতিক্রম হলো বাংলাদেশ। রোজা আসার সাথে সাথে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটেরে মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার ব্যবস্থা অস্থির করে ফেলা হয়।”
তিনি সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “রমজানে বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে জনগণ বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন করবে।”
সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে স্বাগত মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, হাজী আব্দুল আউয়াল মজুমদার, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, আলহাজ্ব শেখ আবু তাহের, শফিকুল ইসলাম, মাইনুল ইসলাম প্রমুখ।
প্রিন্সিপাল মাদানি বলেন, “৯২ ভাগ মুসলমানের এ দেশে মাহে রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কোনভাবেই যেন রমজানের পবিত্রতা বিনষ্টের সুযোগ সৃষ্টি না হয়। দেশের আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ অবনতিতে জনজীবনে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। জননিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”
তিনি বলেন, “নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আইন লঙ্ঘন করলে ব্যবস্থা নিতে হবে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ এখনও সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে হত্যাকারীদের বিচার অবিলম্বে করতে হবে।”
মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জননিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে। ছিনতাই, চাঁদাবাজি, চুরি-ডাকাতি বৃদ্ধি পেয়েছে। অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে ব্যর্থ হলে জনতার ক্ষোভ সৃষ্টি হবে।”
সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম, পল্টন মোড় হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাব, কদমফোয়ারা হয়ে পুরানা পল্টন মোড়ে এসে মুনাজাতের মাধ্যমে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ সময় তারা রমজানের পবিত্রতা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা রক্ষার দাবিতে বিভিন্ন শ্লোগান দেয়।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এসবি
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ সরক র র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।