ট্রাম্পের সঙ্গে ঝড় তুলে লন্ডনে জেলেনস্কি, যুদ্ধের পরিণতি কী
Published: 1st, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউজের বৈঠকে কথায় কথায় খোটা ও ধমক খাওয়ার মধ্যে নিজের অবস্থানে অটল থেকে বাহাস চালিয়ে বিশ্বজুড়ে ঝড় তোলার পর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে পৌঁছেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি করতে ট্রাম্পের সর্বাত্মক চাপের মধ্যে ইউরোপের নেতারা জেলেনস্কির পক্ষে সোচ্চার হয়েছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেকে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী- সবাই জেলেনস্কির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন। জেলেনস্কিও তাদের ধন্যবাদ দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এখন ট্রিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন, ইউরোপ কেন জেলেনস্কিকে সমর্থন করছেন আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরিণতিইবা কী হতে যাচ্ছে। কারণ, জেলেনস্কির সফর সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে বলে দাবি করে রাশিয়ায় উল্লাস দেখা চলছে। মস্কো বলছে, বিনা যুদ্ধবিরতিতে জিতে গেছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
আরো পড়ুন:
ট্রাম্পের সঙ্গে ‘সিংহের মতো লড়েছেন’ জেলেনস্কি
ট্রাম্প-জেলোনস্কি বৈঠকের অপেক্ষা, পর্যবেক্ষণে রাশিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহায়তা নিয়ে তিন বছর ধরে যুদ্ধ চালিয়ে আসায় ওভাল অফিসের বৈঠকে বারবার ট্রাম্পের কাছে খোটা শুনতে হয় জেলেনস্কিকে। ট্রাম্পের সঙ্গে যোগ দিয়ে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সও জেলেনস্কিকে ধমকাতে থাকেন। ট্রাম্প-ভ্যান্সের যুদ্ধবিরতির চাপের মুখে নিজের জায়গায় অটল ছিলেন জেলেনস্কি। অবশেষে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয় ট্রাম্প-জেলেনস্কির বৈঠক। হয়নি যৌথ সংবাদ সম্মেলনও।
একপর্যায়ে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে দেওয়া হয় জেলেনস্কিকে। সেখান থেকে বেরিয়ে সফরসঙ্গীদের নিয়ে রওনা হন যুক্তরাজ্যে। স্থানীয় সময় শনিবার লন্ডনে পৌঁছান তিনি ও তার সফরসঙ্গীরা।
রবিবার (২ মার্চ) ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা জেলেনস্কির। সেখানেই ইউরোপের নেতারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের ‘খোটা’ ও ‘খোঁচা’য় বিদ্ধ জেলেনস্কি ও তার দেশকে রক্ষার জন্য ইউরোপীয় নেতারা কী ধরনের পদক্ষেপ নেবেন, এখন তার ওপর নজর গোটা বিশ্বের।
জেলেনস্কির সমর্থনে ইউরোপের নেতারা কে কী বলছেন
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, “একটি আগ্রাসী শক্তি: রাশিয়া। শিকারে পরিণত একটি দেশ: ইউক্রেন। আমরা তিন বছর আগে ইউক্রেনকে সাহায্য করার এবং রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে সঠিক কাজ করেছিলেন এবং তা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক শুফ বলেছেন, “নেদারল্যান্ডস ইউক্রেনকে সমর্থন করে এবং এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি করবে। আমরা একটি স্থায়ী শান্তি চাই এবং রাশিয়ার শুরু করা আগ্রাসনের অবসান চাই। ইউক্রেন ও তার জনগণ এবং ইউরোপের জন্য আমরা তা চাই।”
জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ সলৎজ লিখেছেন, “ইউক্রেনের নাগরিকদের চেয়ে কেউ বেশি শান্তি চায় না।” দেশটির নবনির্বাচিত চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্জ বলেছেন, “আমরা ইউক্রেনের সঙ্গে দাঁড়িয়েছি এবং “আমাদের কখনই এই ভয়ানক যুদ্ধে আক্রমণকারী এবং ভুক্তভোগীর মধ্যে বিভ্রান্ত তৈরি করা উচিত নয়।”
স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, “জেনে নাও ইউক্রেন, স্পেন তোমাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছে।”
পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক লিখেছেন, “প্রিয় [জেলেনস্কি], প্রিয় ইউক্রেনীয় বন্ধুরা, আপনারা নিঃসঙ্গ নন।”
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন দেয়ার লায়েন এক বার্তা জেলেনস্কিকে বলেছেন, “আপনার মর্যাদা ইউক্রেনের জনগণের সাহসিকতাকে সম্মান করে।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, “কানাডা ন্যায্য ও স্থায়ী শান্তি অর্জনে ইউক্রেন ও ইউক্রেনীয়দের পাশে দাঁড়াবে।”
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ এক পোস্টে লিখেছেন, “আমাদের দেশ ইউক্রেনের সাহসী জনগণকে রাশিয়ার আগ্রাসনের বর্বরতার বিরুদ্ধে এবং আন্তর্জাতিক আইনের সমর্থনে তাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামে গর্বের সঙ্গে সমর্থন করেছে।”
আরো যেসব দেশ ইউক্রেনের পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়েছে,তাদের মধ্যে অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, ক্রোয়েশিয়া, ডেনমার্ক, এস্তোনিয়া, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মোল্দোভা, রোমানিয়া, সুইডেন ও স্লোভেনিয়া অন্যতম।
অবশ্য হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন জানিয়ে লিখেছেন, “শক্তিশালীরা শান্তি স্থাপন করে, দুর্বলরা যুদ্ধ করে। আজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শান্তির জন্য সাহসী হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যদিও এটা অনেকের পক্ষে হজম করা কঠিন ছিল। ধন্যবাদ, মিস্টার প্রেসিডেন্ট!”
ট্রাম্প-জেলেনস্কি বৈঠকের পূর্বাপর
স্থানীয় সময় শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠক বিশ্বগণমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার হয়। আলাপের মধ্যে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনো ধরনের অপসের সুযোগ নেই বলে নিজের বক্তব্যে অনড় থাকেন জেলেনস্কি। ট্রাম্প তাকে বোঝাতে ব্যর্থ হলে একপর্যায়ে জেলেনস্কিকে হোয়াইট হাউস ত্যাগ করতে বলা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সার্বিক সহায়তা নিয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে কথায় কথায় খোটা দিতে থাকেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স। ট্রাম্পের সোজা কথা: যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছাড়া যুদ্ধে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিন দিনও টিকতে পারত না ইউক্রেনের। এ জন্য তার যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। একইসঙ্গে ইউক্রেনের জনগণকে রক্ষার জন্য এই যুদ্ধ বন্ধ করতে তার রাজি হওয়া উচিত।
তবে জেলেনস্কি ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার গ্যারান্টি ছাড়া কোনো যুদ্ধবিরতি করবেন বলে তার বক্তব্যে স্থির থাকেন। এ জন্য ট্রাম্প তাকে স্টুপিড বলতেও ছাড়েনি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য তাকেও তুলাধুনা করেন ট্রাম্প।
এই বৈঠকের আগে ইউক্রেনের মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহোরণে চুক্তির করার প্রস্তাব করেন ট্রাম্প। যুদ্ধে যে বিপুল পরিমাণ সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, তার মূল্য উসুল করতে চাইছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে একটি সমঝোতার বার্তা পাওয়া গিয়েছিল দুই পক্ষ থেকেই। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে খনিজ চুক্তিটি হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই যুদ্ধবিরতি নিয়ে বাহাস শুরু হওয়ায় শেষপর্যন্ত সেই চুক্তির বিষয়ে কোনো আলাপই হয়নি।
জেলেনস্কির বিরুদ্ধে অকৃতজ্ঞতার অভিযোগ তুলেছেন ট্রাম্প ও ভ্যান্স। যুক্তরাষ্ট্রে বসেই ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে বাহাসে নিজের অবস্থানকে সমর্থন করে কথা বলেন জেলেনস্কি। তবে লন্ডনে পৌঁছানোর পর সুর নরম করেছেন তিনি, বলেছেন, সব কিছুর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে চান।
ট্রাম্প-জেলনস্কির বাহাস দুঃখজনক: ন্যাটো মহাসচিব
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট ট্রাম্পের সঙ্গে জেলেনস্কির বাহাসকে ‘দুঃখজনক’ বলে বর্ণনা করেন। ঘটনার পর জেলেনস্কির সঙ্গে দুইবার কথা হয়েছে বলে জানিয়ে রুট বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক মেরামত করে নিতে নিতে আমি তাকে পরামর্শ দিয়েছি।”
“আমি তাকে বলেছি, ইউক্রেনের জন্য টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে আমাদের একত্রে থাকতে হবে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউক্রেন ও ইউরোপকে একসঙ্গে থাকতে হবে।”
এদিকে যুদ্ধক্ষেত্রে তাণ্ডব চলছে। রাশিয়া হামলার তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে। মস্কো দাবি করেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইউক্রেনের আড়াই শতাধিক সেনা নিহত হয়েছেন।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন ইউক র ন র প হ য় ইট হ ইউর প র র জন য বল ছ ন র অবস
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।