সিরিয়ায় ঘাঁটি রাখতে বাজি ধরছে রাশিয়া
Published: 2nd, March 2025 GMT
বছরের পর বছর ধরে সিরিয়ায় রুশ হামেইমিম বিমানঘাঁটির সৈন্যরা উপকূলীয় শহরগুলোতে অবাধে ঘুরে বেড়াতেন। দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দমনমূলক শাসনের বিরুদ্ধে লড়াইরত বিদ্রোহীদের ওপর বোমাবর্ষণের জন্য ওই ঘাঁটি থেকে যুদ্ধবিমান ওড়ানো হতো। কিন্তু এখন দৃশ্য বদলে গেছে। বাশার সরকারের পতনের পর বিদ্রোহীদের হাতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে। ফলে হামেইমিম বিমানঘাঁটি ও সোভিয়েত আমলের টার্টোস নৌ ঘাঁটি এখন এই বিদ্রোহীদের পাহারায় রয়েছে। এখন সেখান থেকে রুশ কোনো গাড়িবহর বের হতে হলেও খাকি পোশাক পরিহিতি হায়াত তাহরির আল–শাম (এইচটিএস) বিদ্রোহীদের পাহারার মধ্য দিতে যেতে হয়।
নাম প্রকাশ না করে এক নিরাপত্তাকর্মী বলেন, ‘তাদের কাউকে এখন বের হতে হলে আমাদের জানাতে হয়।’
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় সামরিক সংযোগ রাখতে রাশিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব ঘাঁটির ভবিষ্যৎ এখন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল–শারার হাতে। তিনি এখন বাশারের আমলে ৪৯ বছরের ইজারা দেওয়া এসব ঘাঁটির চুক্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে চান। তিনি এতে আরও নতুন শর্ত যুক্ত করতে চান। তবে পুরোপুরিভাবে রাশিয়ার এসব ঘাঁটি বন্ধ করে দিতে চান না। এর বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে কূটনৈতিক সমর্থন এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে চান।
গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার সরকারের পতন হয়। বাশার হামেইমিম ঘাঁটি দিয়ে রাশিয়ায় পালিয়ে যান। একসময় ক্রমাগত রুশ বোমাবর্ষণের লক্ষ্যে পরিণত হওয়া সিরিয়ার বিদ্রোহী নেতারা এখন মস্কোর সঙ্গে আলোচনার টেবিলে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স সিরিয়া ও রাশিয়ার আটজন কূটনীতিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলেছেন। এসব সূত্র শারার সঙ্গে পুতিনের বিশেষ দূতের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক সম্পর্কে জানিয়েছে। নাম প্রকাশ না করে এসব সূত্র বলছে, শত্রুতা পাশে সরিয়ে রাখলে দুই পক্ষেরই লাভ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সিরিয়ার ওপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল হলেও এখনো ২ কোটি ৩০ লাখ জনগোষ্ঠীর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির বাণিজ্য করা কঠিন। কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্র, জ্বালানি এবং গম সরবরাহ একটি জীবনরেখা হতে পারে। দামেস্কভিত্তিক একজন কূটনীতিক রয়টার্সকে বলেছেন, দেশটির নেতারা আগের শত্রুদের সঙ্গেও শান্তি স্থাপন করতে ইচ্ছুক।
ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের আনা বোর্শচেভস্কায়া বলেন, সিরিয়াকে মস্কোর এখনো কিছু দেওয়ার আছে। তা এতটাই শক্তিশালী যে উপেক্ষা করার মতো নয়। রাশিয়ার জন্য দামেস্কে একটি সরকার দরকার যে তাদের স্বার্থ নিশ্চিত করবে। তাতেই তারা ওই সরকারের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হবে।
জাতিসংঘের সহায়তাকারী একটি সূত্র বলছে, নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর সিরিয়ায় এখনো খাদ্যশস্য রপ্তানি করেনি রাশিয়া।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকে সিরিয়ার প্রতি খুব বেশি আগ্রহ দেখাননি। তিনি মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ঠিক করতে চান। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র বলেন, বাশার সরকারের পর সিরিয়ার জন্য ইরান বা রাশিয়ান প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মার্কিন মিত্র ইসরায়েল চায়, রাশিয়া তুরস্কের প্রভাবের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরক্ষাব্যবস্থা হিসেবে সিরিয়ায় থাকুক।
দুটি সূত্র জানায়, গত ২৯ জানুয়ারি দামেস্কে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাশারের অধীনে রাশিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তি বাতিলের দাবি জানান শারা। যুদ্ধের আগে সিরিয়া মূলত বৈদেশিক ঋণমুক্ত ছিল। বর্তমানে তাদের ২০ থেকে ২৩ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে রাশিয়ার কাছে ঋণের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি। রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভের সঙ্গে তিন ঘণ্টার সাক্ষাতের সময়, সিরিয়ার কর্মকর্তারা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উত্থাপন করেছিলেন। তা হচ্ছে বাশারের সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন। তবে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে সেটি বড় কোনো বাধা নয় বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। রাশিয়া বাশারকে ফেরত দিতে রাজি হবে না। রাশিয়ার কাছ থেকে বাশারকে এখনো ফেরত চাওয়াও হয়নি বলে রাশিয়ার একটি সূত্র জানিয়েছে। শারার পক্ষ থেকে মস্কোতে বাশারের জমা করা সিরিয়ার তহবিল ফেরত পাঠানোর আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মিখাইল বোগদানভের নেতৃত্বে রাশিয়ান প্রতিনিধিদল এ ধরনের তহবিলের অস্তিত্ব অস্বীকার করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সংশোধন
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকার্য পরিচালনার জন্য ১৪ থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অবকাশকালীন বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি। তবে এ বিষয়ে ২৮ আগস্ট জারি করা সুপ্রিম কোর্টের ৩৯৭-এ নম্বর বিজ্ঞপ্তির আংশিক সংশোধন আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সরকার এক তথ্য বিবরণীতে বিজ্ঞপ্তির আংশিক সংশোধনের বিষয়টি জানায়।
সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম এবং বিচারপতি ইউসুফ আব্দুল্লাহ সুমন যৌথভাবে ডিভিশন বেঞ্চে বসবেন। তারা হাইকোর্টের মূল ভবনের ২৩ নম্বর কক্ষে নির্ধারিত তারিখে বেলা ১১টা ৪০ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শুনানি গ্রহণ করবেন।
এ সময়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও মানি লন্ডারিং আইন সংশ্লিষ্ট মামলা, জরুরি ফৌজদারি মোশন, ফৌজদারি আপিল ও জামিন সংক্রান্ত আবেদনপত্র, জেল আপিল, রিভিশন এবং অন্যান্য ফৌজদারি বিবিধ মামলার শুনানি হবে। এছাড়া, বেঞ্চে স্থানান্তরিত বিষয়গুলোতেও শুনানি ও আদেশ দেওয়া হবে।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/টিএই